রাতারাতি জীবন চুরি!

দীপিকা ঘোষ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
দীপিকা ঘোষ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

রাতারাতি মেয়েটির জীবন চুরি হয়ে গেছে। ভাবা যায়! মেয়েটি নিজেই তা বলেছেন। ইনস্টাগ্রামে গতকাল সোমবার মেয়েটি লিখেছেন, ‘আমার পরিচিতি, ব্যক্তিজীবন, গোপনীয়তা কিছু সময়ের মধ্যেই চুরি হয়ে গেছে।’ মেয়েটির নাম দীপিকা ঘোষ। বাঙালি পরিবারের মেয়ে। বাবা-মায়ের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে আছেন অনেক বছর। ৪ মে আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু বনাম সানরাইজারস হায়দরাবাদের ম্যাচ বদলে দিয়েছে তাঁর জীবন। সেদিন বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে চার উইকেটে জিতেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। আর লাখো যুবকের হৃদয় হরণ করেছেন দীপিকা ঘোষ।

৪ মে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু বনাম সানরাইজারস হায়দরাবাদ ম্যাচ এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় টিভিতে। সেখানে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ক্লিপে দেখা যায় দীপিকা ঘোষকে। তাঁর হাতে ছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) পতাকা আর পরনে লাল অফ-শোল্ডার টপ। মুহূর্তেই দীপিকা ঘোষ জাতীয় ক্রাশে পরিণত হন। ইনস্টাগ্রামে এক রাতে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা বেড়েছে এক লাখ। আর আজ মঙ্গলবার তা বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার।

রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি উপভোগ করতে পারেননি দীপিকা ঘোষ। পুরো ব্যাপারটি এখন তাঁর কাছে ‘অত্যাচার’ বলে মনে হচ্ছে। ৪ মে রাতের পর থেকে অসংখ্য নেতিবাচক, অশ্লীল ও আপত্তিকর মন্তব্যে ভরে যায় ইনস্টাগ্রামে দীপিকা ঘোষের অ্যাকাউন্ট। আর তা দেখে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। আতঙ্কের মধ্য দিয়ে কাটছে তাঁর দিনগুলো।

আইপিএল শেষ হওয়ার পর ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্ট দিয়েছেন দীপিকা ঘোষ। সেখানে তিনি নিজের ব্যাপারে লিখেছেন, ‘আমি দীপিকা ঘোষ। আমাকে নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তার মধ্যে এটাই শতভাগ সত্যি। আমি কোনো সেলিব্রিটি নই, খুব সাধারণ মেয়ে। সেদিন মাঠে মনোযোগ পাওয়ার মতো কিছুই করিনি। আর তা চাইনি। আমি অবাক, সবাই দেখছি আমার সম্পর্কে এখন অনেক জানে। আমার ব্যক্তিগত জীবন যেন এক মুহূর্তে সবার সামনে এসে গেছে!’

নিজেকে ‘আরসিবি গার্ল’ পরিচয় দিতে পছন্দ করেন দীপিকা ঘোষ। ৪ মে মাঠে খেলা দেখতে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘আমি কিন্তু আগেও আরসিবির ম্যাচ দেখতে গিয়েছি। আরসিবিকে সমর্থন করা, এই দলের জন্য মাঠে গিয়ে গলা ফাটানো আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। সেদিন আমার জীবনে আলাদা কিছু ঘটবে, তেমনটা একবারও ভাবিনি। আমি পরিচিতি পেতে চাইনি। গ্যালারিতে আমার দিকে টিভি ক্যামেরা কতবার ফোকাস করেছে, তা নিয়েও ভাবিনি।’

দীপিকা ঘোষ একসঙ্গে অনেক কিছু। তিনি নৃত্যশিল্পী, মেধাবী, শিক্ষকতা করছেন, নারী উদ্যোক্তা, সময়ের স্টাইলের সঙ্গে নিজেকে সহজেই মানিয়ে নেন। ৪ মের পর তাঁকে একটি প্রশ্নের বেশি মুখোমুখি হতে হচ্ছে, ‘তোমার জীবনে কী পরিবর্তন হয়েছে?’ দীপিকা ঘোষ লিখেছেন, ‘সত্যি বলছি, কিছুই বদলায়নি। যা বদলে গেছে, তা হলো আমার ইনস্টাগ্রামের ফলোয়ারের সংখ্যা। আমি রীতিমতো বিস্মিত! আমাকে মানসিকভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে।’

‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’র শিকার হয়ে দীপিকা ঘোষ লিখেছেন, ‘এত মানুষের ভালোবাসা পেয়ে আমি আপ্লুত। কিন্তু সবাইকে বলছি, আমাকে নিয়ে চর্চা বন্ধ করুন। আমি খুব বিরক্ত। এই কয়েক দিনে আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আমি আরসিবি গার্ল; কিন্তু নিজের একটা জীবন আছে, একটা পরিবার আছে, বাবা-মা আছেন। এই ব্যাপারগুলো একটু বিবেচনা করুন। আমাকে শান্তিতে থাকতে দিন। স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে দিন।’