বাংলাদেশ থেকে আমাকে কেউ ডাকেই না: টাবু

সমসাময়িক অভিনেত্রীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছেন টাবু। দৃশ্যম, গোলমাল অ্যাগেইন, হায়দার, আন্ধাধুন–এর সাফল্য সহজেই প্রমাণ করে টাবুর অভিনয় ছাপিয়ে যায় এ সময়ের অনেক কাঙ্ক্ষিত বলিউড নায়িকার মেধাকেই। বেশ কয়েকটি থ্রিলারের পর টাবু আবার কমেডিতে মজেছেন। দৃশ্যম আর গোলমাল অ্যাগেইন–এর পর আবার জুটি বেঁধেছেন অজয় দেবগনের সঙ্গে। এবারের ছবির নাম দে দে পেয়ার দে। মুম্বাইয়ের এক পাঁচ তারকা হোটেলে দাপুটে অভিনেত্রী টাবুর মুখোমুখি প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। নানান কথায় জমে উঠেছিল এই আড্ডা।
টাবু
টাবু

অজয় দেবগনের সঙ্গে আবারও পর্দায় এলেন। যত দূর জানি আপনাদের বন্ধুত্বও বেশ গভীর। বিজয়পথ থেকে আজকের অজয়ের মধ্যে কতটা পরিবর্তন দেখেন?
আমরা খুবই ভালো বন্ধু। মানুষ হিসেবে এত বছরেও অজয়ের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ও একই রকম আছে৷ তবে অভিনেতা অজয়ের মধ্যে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। অভিনেতা হিসেবে এখন ও অনেক পরিণত, অভিনয়ে বিস্তৃতি বেড়েছে। তবে অজয় চিরকালই লাভজনক অভিনেতা৷ এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

দে দে পেয়ার দে ছবিরগল্পে একজন নারী ও পুরুষের মধ্যে বয়সের বড় তফাত প্রাধান্য পেয়েছে। আপনি এ বিষয়ে কী মনে করেন?
প্রথমত বলতে চাই যে এই ছবিতে বয়সের তফাতটা হলো গৌন। মুখ্য হলো নারী-পুরুষের সম্পর্ক। একটা যুগলের সম্পর্ককে ঘিরে নানান জটিলতা। আর আমার মনে হয় নারী-পুরুষের মধ্যে বয়সের তফাত নিয়ে মন্তব্য করা অনুচিত। কারণ, একটি সম্পর্ক যে দুটি মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে তাঁরাই জানেন এর রসায়ন। তাঁরাই তাঁদের সম্পর্কটা উপলব্ধি করতে পারেন। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিটা মানুষের অভিজ্ঞতা আলাদা ৷

আপনাকে সব সময় পর্দায় নানান চরিত্রে দেখা গেছে। এমন কোনো চরিত্র যা আবার করতে চান?

আমি একবার যে চরিত্রে অভিনয় করি সেটা দ্বিতীয়বার আর করি না। তবে কিছু চরিত্র আছে যা আমার হৃদয়ের খুব কাছের। হু তু তু, মকবুল, অস্তিত্ব, হায়দার, মাচিস এই সব ছবির চরিত্রগুলো আমার খুবই প্রিয়।

গুলজার থেকে শুরু করে এ প্রজন্মের পরিচালকদের সঙ্গেও সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন। কতটা বদলেছে বলিউডের পরিচালনার ধরন?

আমি যখন সিনেমার জগতে আসি, তখন গুলজার সাহেব, জে পি দত্ত আমার থেকে বয়সে বড়। আর এখনকার পরিচালকেরা আমার বয়সী কিংবা আমার চেয়ে ছোট। তাই এদের সঙ্গে আমার রসায়ন ভিন্ন। তবে এখনকার বা তখনকার পরিচালক নয়, প্রতিটা পরিচালকের কাজের ধরন আলাদা। গুলজার, জে পি দত্ত, মনিরত্নম, সুরজ বরজাতিয়া, ডেভিড ধাওয়ান, মহেশ মঞ্জরেকর—প্রত্যেকে প্রত্যেকের চেয়ে আলাদা। কেউ ভালোবেসে কাজ করান, আবার কেউ একটু দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করান। একেকজন পরিচালক একেক রকমভাবে অভিনেতার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। আমি এই বিষয়টা উপভোগ করি।

আপনি কোন পরিচালকের সংস্পর্শে এসে অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন?

গুলজার সাহেব, মনিরত্নমের কথা বলব। তাঁদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। বিশালের (ভরদ্বাজ) সঙ্গে আমার দারুণ কাজের সম্পর্ক। তবে আমি প্রতিটা পরিচালকের থেকেই কিছু না কিছু শিখেছি। জীবনের প্রতিটা অভিজ্ঞতা থেকে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি। হায়দার-এর পর গোলমাল অ্যাগেইন এবং দৃশ্যম-এরমতো ছবি করেছি। গোলমাল অ্যাগেইন করতে গিয়ে একঝাঁক দুর্দান্ত অভিনেতার কাছ থেকে কমেডি অভিনয়ের অনেক কিছু শিখেছি। মূলত মানুষ জীবনের প্রতিটা অভিজ্ঞতা থেকেই কিছু না কিছু শেখার সুযোগ পায়। সেই সুযোগটা খুঁজে নেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই।

এর মানে আপনি পরিচালকের বাধ্য মেয়ে...

আমি পরিচালকের কথা নিশ্চয়ই শুনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি আমার চরিত্র আর চিত্রনাট্যকে মাথায় রেখে অভিনয় করি৷ পরিচালক হয়তো কোনো দৃশ্য বুঝিয়ে দিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাকেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করতে হয়। তাই চরিত্রটি চরিত্রায়ণের দায়িত্ব আমার কাঁধেই থাকে।

অন্য অভিনেত্রীদের তুলনায় আপনার সিনেমার সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। কোথাও মনে হয় না যে আরও বেশি ছবিতে কাজ করা উচিত ছিল?

এখন তো আমি ঘন ঘন পর্দায় আসছি। সাত বছরে পাঁচটা ছবিতে কাজ করেছি। হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে বাকি অভিনেত্রীদের তুলনায় আমার সিনেমার সংখ্যা কম। তবে আমার কোনো অনুতাপ নেই। আমি যে ছবিগুলো করেছি, আর যেগুলো করিনি এর জন্যই আজ আমি এ জায়গায় দাঁড়িয়ে। আমি আমার সিদ্ধান্তের জন্য এই জায়গায় পৌঁছেছি।

মা দিবস গেল সম্প্রতি। এ উপলক্ষে মাকে ঘিরে কোনো স্মৃতি রোমন্থন করতে চান?

আমাদের স্কুলের সামনে একটা বাগান ছিল। মা দুপুরের খাবারের বিরতির সময় আমাকে ওই বাগানে নিয়ে গিয়ে খাবার খাওয়াতেন। আমি বি, সি, ডি বর্ণগুলো উল্টো লিখতাম। মা খাওয়াতে খাওয়াতে আমাকে সোজা করে সেগুলো লিখতে শেখাতেন। জানেন, মা আমার ছোটবেলার স্কুল ইউনিফর্ম এখনো সযত্নে তুলে রেখেছেন। আসলে মা আমার জীবনের সঙ্গে এমনভাবে জুড়ে আছেন যে মাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। মা আমার জীবনে অক্সিজেনের মতো।

মায়ের কাছ থেকে কী কী শিখেছেন?

জীবনের সব পরিস্থিতিতে শক্ত থাকতে শিখেছি। নিজেকে সক্রিয় রাখতে শিখেছি। যদিও আমি আমার মায়ের মতো অত বেশি কর্মঠ নই। আর মা খুবই সামাজিক। আমি একদমই নয়। আমাদের প্রতিবেশীরা দীপাবলি, গণপতি উৎসব, ঈদ উৎসবে মাকে আমন্ত্রণ করেন। কিন্তু আমাকে কেউ ডাকে না।

শুনেছি, আপনার কাছে একটা ডায়েরি আছে। আর আপনি তাতে কিছু না কিছু নিয়মিত লেখেন। আপনি কি চাইবেন যে আপনার লেখা ডায়েরি প্রকাশিত হোক?

আমার কোনো ইচ্ছা নেই। তবে কিছু প্রকাশক আছেন যাঁরা এটা প্রকাশ করতে চান। আমার মধ্যে যখন সাহস আসবে তখনই ডায়েরিটা প্রকাশ করব।

বাংলাদেশে কি যাওয়া হয়েছে আপনার? শেষ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে ওই দেশে যেতে চান। আপনার বন্ধু–বান্ধবী আছে সেখানে।

হ্যাঁ, আছে তো। বাংলাদেশ যাওয়ার খুব ইচ্ছা আমার। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আমাকে কেউ ডাকেই না।

শুনলাম, এর মধ্যে কলকাতায় গিয়েছিলেন।

হ্যাঁ। গত মাসেই গিয়েছিলাম। অনেক মাছ খেয়েছি৷ লেবু আর দই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি।