শীত আর ফিরবে না

‘গেম অব থ্রোনস’ সিরিজের শেষ মৌসুমের দৃশ্য
‘গেম অব থ্রোনস’ সিরিজের শেষ মৌসুমের দৃশ্য

‘উইন্টার ইজ কামিং’—এপ্রিল মাসে শীতের এই আহ্বান আর আলোড়ন তুলবে না টিভি সিরিজপ্রেমীদের মনে। বাস্তব ও কল্পনার এক অতুলনীয় রসায়নে সৃষ্ট গেম অব থ্রোনস ২০ মে ইতি টানল। প্রায় এক দশক ধরে দর্শকমহলে আধিপত্য বিস্তার করা এই সিরিজ শেষ হয়েও যেন কোথাও একটা রেশ রেখে গেল। ঘটনা আরেকটু দূর এগোলে হয়তো ভালো লাগত, এই আক্ষেপটা জিইয়ে রেখে শেষ হলো জিওটি। বহুল আলোচিত এই সিরিজের শেষ অর্থাৎ অষ্টম মৌসুম (সিজন) নিয়ে আজকের লেখা।

দ্য নাইট কিং
কী নেই গেম অব থ্রোনসে? হোয়াইট ওয়াকার নামে মরা মানুষের দল, ড্রাগন, জায়ান্ট, সঙ্গে ক্ষমতার জন্য লড়াই তো আছেই। শুরু থেকে হোয়াইট ওয়াকারের বিষয়টি অস্পষ্ট থাকলেও একসময় তা পরিষ্কার হতে থাকে। আট নম্বর মৌসুমে তাদের দেখা যায় নর্থের উইন্টারফেলে হানা দিতে। ‘উইন্টারফেল’ ছিল এবারের মৌসুমের প্রথম পর্বের নাম। এতে দেখা গেছে, যুদ্ধের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। জীবিত আর মৃতদের লড়াই হবে। ‘দ্য লং নাইটে’ সবাই যেন আশা ছেড়ে দিয়েছিল বাঁচার। একে একে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জোরাহ মরমোন্ট, লেডি লিয়ানা মরমোন্ট, ডলোরোস এড, থিওন গ্রেজয়, বেরিক ডানডারিওনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্র। নাইট কিংয়ের মৃত্যু যে আরিয়া স্টার্কের হাতে হবে, এটা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। শেষ মৌসুমের মূল নাটকীয়তার শুরু মূলত সেখান থেকেই। খবর বেরিয়েছিল, দ্য লং নাইট–এর শুটিংয়ের জন্য লেগেছিল টানা ৫৫ রাত। এত বছর ধরে যেই হোয়াইট ওয়াকারদের জন্য অপেক্ষা, রাতারাতি তাদের ঘটনা শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন অনেকে। আবার সুদীর্ঘ এই রজনীর দৃশ্যগুলো এতই অন্ধকার দেখানো হয়েছিল যে এ নিয়ে কিছু দর্শকের অভিযোগের কমতি ছিল না।

দ্য ম্যাড কুইন
প্রথম থেকেই ডেনেরিস টারগেরিয়ানের জন্য বেশ সহানুভূতি কাজ করছিল সবার মনে। ‘বেচারি’ মেয়েটা ডথরাকি বাহিনীর কাছে বিক্রি হয়ে যায়, একটি ড্রাগন মারা যায় নাইট কিংয়ের হাতে। কিন্তু এরপরও সব সময় ড্যানি বলেছিল বাবার মতো উন্মাদ কখনোই হবে না সে। তাই অনেকেই ডেনেরিসের রাগী চরিত্রকে পাত্তা দেননি। যার ফলে এই মৌসুমের পাঁচ নম্বর পর্ব খানিকটা চমকে দিয়েছে দর্শকদের। ড্যানি যে ম্যাড কুইনে পরিণত হয়েছে এই পর্বে তা বোঝা যায়। বাবা ম্যাড কিংয়ের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে ড্যানি নিজেকে প্রমাণ করেছে পর্ব পাঁচে।

অপ্রত্যাশিত পরিসমাপ্তি
অনেক দিন আগেই জর্জ আর আর মার্টিন জানিয়েছিলেন, গেম অব থ্রোনসের শেষ হবে ‘বিটার সুইট’ (তিক্তমধুর) স্বাদ দিয়ে। তাই দর্শক মানসিকভাবে নিজেদের প্রস্তুত করে রেখেছিলেন এর জন্য। ধারণা করেছিলেন, হয়তো জন স্নো মারা যাবে অথবা মৃত্যু হবে এমন কোনো প্রিয় চরিত্রের, যা ধারণার বাইরে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে এক ধরনের ‘হ্যাপি এন্ডিং’ বা ‘শুভ পরিণতি’ই হলো। যে থ্রোন বা রাজ আসন নিয়ে হাজার বছর ধরে চলছে যুদ্ধ, সেই সিংহাসনের শেষ পরিণতিকে প্রথমে অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। তবে এর চেয়েও বড় বড় অপ্রত্যাশিত মোড় ‘আয়রন থ্রোন’–এর পরিণতিকেও বিস্ময়ের দিক থেকে হার মানিয়েছে। তাই দর্শককে শেষ নাগাদ সব চমকই হজম করতে হয়েছে একে একে।

গোস্টের সঙ্গে জন স্নোর পুনর্মিলন
গোস্টের সঙ্গে জন স্নোর পুনর্মিলন

যত নাটকীয়তা
অষ্টম মৌসুমের চতুর্থ পর্বের নাম ছিল ‘দ্য লাস্ট অব দ্য স্টার্কস’। সেখানে হোয়াইট ওয়াকারদের সঙ্গে যুদ্ধ–পরবর্তী উদ্‌যাপনের দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু গোল বাধে তখনই, যখন সেই দৃশ্যে ডেনেরিসের সামনের টেবিলে একটি স্টারবাকসের কফির কাপ দেখা যায়। সে কী হুলুস্থুল এ নিয়ে! একই ধরনের ঘটনা ঘটে শেষ পর্বে। স্যামের পায়ের পেছনে দেখা যায় একটি মিনারেল ওয়াটারের বোতল। স্বাভাবিকভাবেই এ জন্য আলোচনা ওঠে দর্শকমহলে। এত বড় সিরিজের দৃশ্যায়নে এমন মারাত্মক ভুল কেমন করে করলেন নির্মাতারা?
গেম অব থ্রোনস নিয়ে আলোচনা–সমালোচনার শুরু হয় প্রথম পর্ব প্রচারের পর থেকেই। রাতারাতি হোয়াইট ওয়াকারদের বংশ নির্মূল, অন্ধকার দৃশ্যায়ন, চতুর্থ পর্বে ঘটনার ধীরপ্রবাহ ক্ষুব্ধ করে দর্শকদের। অনেকে তো প্রতিবাদ হিসেবে প্রযোজক প্রতিষ্ঠান এইচবিওর বিরুদ্ধে পিটিশন খুলে স্বাক্ষর সংগ্রহের কার্যক্রমও শুরু করে দেন। তাঁরা দাবি তোলেন, শেষ মৌসুমটি যেন আবার নতুন লেখক দিয়ে লিখিয়ে নতুন করে বানানো হয়। ক্ষুব্ধ দর্শকদের সেই দলে এখন ১০ লাখ সমর্থক যোগ হয়েছে। ভাবা যায়, ১০ লাখ মানুষ আবার নতুন করে নতুনভাবে দেখতে চায় সিংহাসনের এই অদ্ভুত লড়াই!
জিওটি’র চরিত্রগুলো নিয়ে হয়তো আলোচনা–সমালোচনা চলবে আরও কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস। এরপর দর্শক আবার নতুন কিছুতে মন দেবেন। কিন্তু জন স্নোর লং ক্ল নিয়ে যুদ্ধ, আরিয়ার দুর্ধর্ষতা, সার্সির কূটচাল আর নতুন করে ফিরবে না। কয়েক দশক পর এই প্রজন্মের দর্শকেরা স্মৃতিকাতর হয়ে বলবেন, ‘আমাদের সময় একটা মারমার কাটকাট সিরিজই ছিল, নাম গেম অব থ্রোনস। এর সঙ্গে কি আর কিছুর তুলনা হয়!’

মুসাব্বির হুসাইন