পরিবারের সঙ্গে থাকাই তো ঈদ

নোবেল
নোবেল

ছোটবেলায় ঈদের উন্মাদনা ছিল অন্য রকম। কিন্তু এখনকার ঈদ আমার কাছে অনেকটাই সাদামাটা। কতটা ভালো-মন্দ খাওয়া আর ঘুম হলো, এই তো এখন ঈদের দিনের ভাবনা! নামাজ পড়ে এসে, খাওয়াদাওয়া করে ঘুমানোর চেষ্টা করি।

ছোটবেলার কথাই বরং বলি। আমার মামাতো, চাচাতো ও ফুফাতো ভাইবোন অনেক। যখন সাত-আট বছর বয়স, তখন কাজিনদের সঙ্গে নতুন জামাকাপড় কেনা নিয়ে প্রতিযোগিতা হতো। কাজিনদের কারও যদি দুইটা জামা কেনা হতো, পাল্লা দিয়ে আমি তিনটা কিনতাম। কোনো ঈদে কেউ যদি এক জোড়া স্যান্ডেল কিনত, আমি দুই জোড়া কিনতাম। কারও স্যান্ডেলের দামের চেয়ে আমার স্যান্ডেলের দাম যদি দু-চার শ টাকা বেশি হতো, মনে হতো আমিই রাজা! তখন ঈদের দিন আরেকটা কাজ করতাম সবাই মিলে। খেলনা বন্দুক কিনে রাস্তায় গিয়ে রাস্তার মানুষদের ভয় দেখাতাম। আবার নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি করতাম। আআআ...শব্দ করে মরে যাওয়ার ভান করে শুয়ে থাকতাম।

মজার ছিল দিনগুলো। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। তারপরও ছোটবেলা থেকে চাওয়ার আগেই পরিবার থেকে সবকিছু পেয়েছি। কোনো কিছুর অভাব অনুভব করিনি।

নবম শ্রেণি পাস করার পর ভারতে চলে গেলাম। দার্জিলিংয়ে হিমালী বোর্ডিং স্কুল থেকে পাস করে কলকাতায় কলেজজীবন শেষ করি। ভারতে পড়তে গিয়ে কোনো কোনো ঈদে বাড়ি আসার সুযোগ হয়নি। এতে করে আস্তে আস্তে আমার মধ্যে ঈদের উন্মাদনা কমে যেতে লাগল। পরিবার থেকে দূরে থাকতে থাকতে এমনটা হয়েছিল। ২০১৪ সালে একবারে বাংলাদেশে চলে আসি। যখন বাড়িতে থাকতে শুরু করলাম, মনে হয় তখনই ঈদের আমেজ আবার ফিরে আসতে লাগল।

এরপর বাইক চালানো শিখলাম। ২০১৪ সালের পর ঈদের দিনগুলোতে বাইক চালানোর উন্মাদনা ছিল। মজার ব্যাপার হলো, সে সময় আমার সমবয়সী কোনো বন্ধু ছিল না। আমার থেকে সাত-আট বছরের বড়দের সঙ্গে আমি ঈদের দিন বাইকে করে এদিক-ওদিক ঘুরতাম। বিশেষ করে ঈদের দিন মহাসড়কে সবাই মিলে বাইক চালানোর মজাই ছিল আলাদা। ঈদের দিন কোনো কারণে বাইক জোগাড় করতে না পারলে বাড়িতে রাগারাগি করতাম। তবে তখন আর নতুন জামাকাপড় নিয়ে তেমন মাথাব্যথা ছিল না। দেখা যেত নতুন জামা কিনে ঈদের আগেই পরে ফেলেছি!

এবার তো ঈদের সময় দেশেই থাকতে পারছি না। জি-বাংলায় সারেগামা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর প্রথম ঈদ এটা। ঈদের দিন কলকাতায় থাকতে হবে। ওই দিন জি-বাংলায় রেকর্ডিং আছে।

ঈদ মানেই তো খুশি, আনন্দ। জীবনে খুব খুশির কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা বলি ‘ঈদের খুশি’। এখন একটা গান যদি প্রকাশের দিনই ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়, সেটাই আমার কাছে ঈদের খুশি মনে হয়। আবার দেখা গেল ঈদের দিন আমার কোনো গান প্রকাশ পেল, কিন্তু তেমন সাড়া ফেলল না, তাতে একটু হলেও ঈদের খুশি কিছুটা তো কমেই যায়। এখনকার ঈদগুলো আমার কাছে এমনই।

(অনুলিখিত)

লেখক: সংগীতশিল্পী