ঈদের দিন হাসপাতালে এ টি এম শামসুজ্জামান

ঈদের দিন হাসপাতালে এ টি এম শামসুজ্জামানকে দেখতে যান ইলিয়াস কাঞ্চন। ছবি: সংগৃহীত
ঈদের দিন হাসপাতালে এ টি এম শামসুজ্জামানকে দেখতে যান ইলিয়াস কাঞ্চন। ছবি: সংগৃহীত

এবার ঈদের দিন হাসপাতালেই কাটালেন একুশে পদক পাওয়া বরেণ্য অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। আগের তুলনায় এখন তিনি অনেকটাই ভালো আছেন। স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছেন। পরিজনদের সঙ্গে স্বাভাবিক কথা বলছেন। হাসপাতালের খাবার এড়িয়ে বাসার খাবারের জন্য বায়না ধরছেন। এসব নিয়ে মান–অভিমানও করছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটা ভালো লক্ষণ। এভাবে চলতে থাকলে বাসায় যেতে আর খুব বেশি সময় লাগবে না।

গতকাল ঈদের দিন বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন এ টি এম শামসুজ্জামান। পরিবারের সদস্য ছাড়াও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন অনেকেই। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। অনেকটা সময় তিনি হাসপাতালে ছিলেন। ইলিয়াস কাঞ্চনকে কাছে পেয়ে এ টি এম শামসুজ্জামানও খুশি হয়েছেন, কোলাকুলি করেছেন। অসংখ্য চলচ্চিত্রে তাঁরা একসঙ্গে অভিনয় করেছেন।

এ টি এম শামসুজ্জামান এখন পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ৪০টি দিন তিনি এখানেই আছেন। এখন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) একটি কেবিনে আছেন।

চিকিৎসকদের কাছ থেকে জানা গেছে, বাসায় যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন এই বর্ষীয়ান অভিনেতাকে চিকিৎসকের আওতায় থাকতে হবে। তখনো চিকিৎসক সরাসরি তাঁকে পর্যবেক্ষণ করবেন। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য তাঁকে আরও অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মতিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপাতত সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে, কোনো ঝুঁকি নেই। তবে দর্শনার্থী এলে তিনি আলাপ জুড়ে দেন। নিজের অসুস্থতার কথা ভুলে যান। একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তখন অবস্থা একটা নাজুক হয়ে পড়ে।’

ডা. মো. মতিউল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, এ ধরনের রোগীর যেকোনো সময় অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে। যেকোনো কিছু হতে পারে। তা ছাড়া তাঁর বয়স হয়েছে। তাই দর্শনার্থীরা যদি তাঁকে দেখে চলে যান, সেটাই মঙ্গল। তা না হলে ওনার ক্ষতি হবে।’

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বাসায় নিলেও নিয়মিতই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাসায় তাঁকে দেখাশোনার জন্য হাসপাতাল থেকে একাধিক সার্বক্ষণিক নার্স রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তাঁকে বাসায় গিয়ে পর্যবেক্ষণ করবেন। জানা গেছে, এ বিষয় নিয়ে পরিবারও ভাবছে। বাসায় না নিয়ে অন্য কোন হাসপাতালের কেবিনে রাখার কথাও ভাবা হচ্ছে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘এ টি এম শামসুজ্জামান ভাই আমাদের পরিবারের নিকটজন। আমার প্রয়াত স্ত্রী জাহানারার ভীষণ প্রিয় একজন মানুষ। আমার স্ত্রীকে স্নেহ করতেন। যে দুর্ঘটনায় আমার স্ত্রী মারা যায়, সেদিন ওই গাড়িতে ভাইও ছিলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে থাকতে থাকতে তিনি নিঃসঙ্গতায় ভুগছেন। এ সময় সহকর্মীদের তাঁর পাশে থাকা খুব প্রয়োজন।’

গত ২৬ এপ্রিল রাতে বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এ টি এম শামসুজ্জামান। সেদিন খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। রাতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের একজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, এ টি এম শামসুজ্জামানের অন্ত্রে প্যাঁচ লেগেছিল। সেখান থেকে আন্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা। এর ফলে খাবার, তরল, পাকস্থলীর অ্যাসিড বা গ্যাস বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং অন্ত্রের ওপর চাপ বেড়ে যায়। যার ফলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। এসব সারাতেই অস্ত্রোপচার করা হয়। সেখান থেকে কিছু জটিলতা হয়েছিল।