৩৩ দিন পর জামিন পেলেন করণ

করণ ওবেরয়
করণ ওবেরয়

ভারতের ছোট পর্দার জনপ্রিয় তারকা করণ ওবেরয়কে গত ৬ মে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পুলিশ। এরপর তাঁকে ৩৩ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। কয়েকবার তাঁর জামিনের জন্য আবেদন করা হয়। শেষ পর্যন্ত গত শুক্রবার ৫০ হাজার রুপির মুচলেকা এবং শর্ত সাপেক্ষে করণ ওবেরয়ের জামিন মঞ্জুর করেন মুম্বাই হাইকোর্ট। বিচারপতি রেবতী মোহিতে দেরে এই রায় ঘোষণা করেন। এরপর করণ ওবেরয়ের আইনজীবী দীনেশ তিওয়ারি তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

আগেই জানানো হয়েছে, ৬ মে মুম্বাইয়ের ওশিয়ারা থানার পুলিশ করণ ওবেরয়কে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ও ৩৮৪ ধারায় ধর্ষণ এবং জোর করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। একজন নারী পুলিশকে জানিয়েছেন, করণ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে সহবাস করেন এবং ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি মোবাইলে ধারণ করেন। এরপর বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অর্থ দাবি করেন। ক্রমেই বাড়তে থাকে সেই দাবি। তিনি তা দিতে অস্বীকার করলে ওই সব ছবি আর ভিডিও ফুটেজ ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন করণ।

১৯৯৫ সালে মডেলিং দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন করণ। এরপর মহেশ ভাটের ‘স্বাভিমান’ (১৯৯৫) দিয়ে তাঁর টিভি সিরিয়ালের যাত্রা শুরু। কিন্তু তিনি জনপ্রিয় হন ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চলা সনি টিভির জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘জেসি জ্যায়সি কোয়ি নেহি’ দিয়ে। এখানে তিনি রাঘব চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক হিন্দি হিট সিরিয়াল উপহার দিয়েছেন। ২০০১ সালে ‘আ ব্যান্ড অব বয়েজ’ গানের দলে যোগ দেন তিনি। আমাজন প্রাইমে ‘ইনসাইড এজ’ ওয়েব সিরিজেও দেখা গেছে তাঁকে।

করণ ওবেরয়
করণ ওবেরয়

একসময় ‘জেসি জ্যায়সি কোয়ি নেহি’ সিরিয়ালের কেন্দ্রীয় চরিত্র জেসি অর্থাৎ মোনা সিংয়ের সঙ্গে করণ ওবেরয়ের প্রেমের সম্পর্ক শোনা গিয়েছিল। অভিনয় আর গানের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেন তিনি। বিজ্ঞাপনে দেখা যায় তাঁকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দারুণ সক্রিয় এই টিভি তারকা।

করণ ওবেরয়কে গ্রেপ্তার করার পর অভিনয়শিল্পী, উপস্থাপক এবং কলাম লেখক পূজা বেদি বলেন, ‘সবাই জানে করণ কেমন। সে পুরোদস্তুর একজন ভদ্রলোক। তার ওপর যে অভিযোগ আরোপ করা হয়েছে, তা মিথ্যা। করণ নিরপরাধ। ১৫ বছর ধরে করণকে একজন ভদ্র, দয়ালু ও চমৎকার ভদ্রলোক হিসেবে সবাই চেনেন। নারীদের সম্মান করেন করণ।’ নিজেকে করণের সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলে উল্লেখ করে পূজা বেদি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে নারী অধিকারের জন্য লড়াই করছেন করণ।’

করণ ওবেরয়
করণ ওবেরয়

গণ্যমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অভিযোগকারী নারীর সঙ্গে করণের পরিচয় ২০১৬ সালের শেষ দিকে, একটা ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে। এটি ২০১৭ সালের ঘটনা। তখন কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোনো নিউজ হয়নি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে করণ নিজেই ওই নারীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে হয়রানির অভিযোগ দায়ের করেন। ২০১৮ সালে ওই নারী এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, তাঁর আর করণের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ সময় তিনি তাঁর বক্তব্যের পক্ষে কিছু উপহার ছাড়াও অন্যান্য কিছু দেখান। আর ২০১৯ সালে এসে দেখা গেল, সেই নারী করণের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। এই নারীর ২০১৮ সালের বক্তব্য আর ২০১৯ সালের মামলা সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি একজন নারী এবং পুলিশ ওই মামলা নিতে বাধ্য। করণ যতই নিরপরাধ হোন না কেন, সব প্রমাণ করণের পক্ষে থাকলেও আইন অনুযায়ী পুলিশকে এখন সব আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।’

পূজা বেদি
পূজা বেদি

পূজা বেদি আরও বলেন, ‘একজন নারীর কোনো অধিকার নেই একটা পুরুষের জীবন ধ্বংস করার। ধর্ষণ মারাত্মক অপরাধ। এই আইন নারীকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু সেই আইনকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলায় যদি তা একজন পুরুষকে ফাঁসানো হয়, তা জঘন্য অপরাধ। করণকে ধর্ষক বিবেচনায় তাঁর কর্মক্ষেত্রে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা “মেন টু” আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়েছি। কাল যদি সব মিথ্যা প্রমাণিত হয়, সেটা খুব ছোট্ট করে গণমাধ্যমে আসবে। আর করণের ধর্ষক ট্যাগ থেকেই যাবে। করণের পেশা, নাম, সম্মান নষ্ট করার জন্য এবং করণ আর তাঁর পরিবারের মানহানির জন্য ওই নারীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সেই নারী আইনের অপব্যবহার করেছেন।’