বাজেট নয়, বিটিভির দরকার শুধু পরিকল্পনা...

কোথাও কেউ নেই নাটকে লুৎফর রহমান জর্জ, আসাদুজ্জামান নূর ও সুবর্ণা মুস্তাফা। এরকম জনপ্রিয় নাটকের জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা।
কোথাও কেউ নেই নাটকে লুৎফর রহমান জর্জ, আসাদুজ্জামান নূর ও সুবর্ণা মুস্তাফা। এরকম জনপ্রিয় নাটকের জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা।

টেলিভিশন নাকি এখন আর দর্শক পায় না। স্মার্টফোন আসায় পর এই মাধ্যম আরও বেশি হুমকিতে। তবে অভিনয় ও সংগীতজগতের অনেকের মতে, মানুষ এখনো টেলিভিশনে নাটক, গান কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে পরিচালক ও অন্যান্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা প্রায়ই বলেন, বাজেট নেই, তাই ভালো মানের অনুষ্ঠান তাঁরা নির্মাণ করতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যতিক্রম বিটিভি। প্রতিষ্ঠানটিতে বাজেট কোনো সমস্যাই নয়, সমস্যা পরিকল্পনার ও সৃজনশীল মানুষের। কেউ কেউ আবার বলছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও ছকেবাঁধা নিয়ম থেকে বের হতে না পারাটাও বড় কারণ।

একটা সময় বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়া অন্য কোনো চ্যানেল দেখার সুযোগ ছিল না। দুই দশকে সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। দর্শকের হাতে এখন বেছে নেওয়ার সুযোগ অনেক। রিমোটে চাপ দিয়ে যেকোনো চ্যানেলে চলে যাওয়া যায়।

বাংলাদেশ টেলভিশনের মহাপরিচালক হারুণ অর রশিদ বলেন, ‘বাজেট বিটিভির সমস্যা নয়। আমরাই আমাদের বাজেট নির্ধারণ করি।

আমাদের দরকার শুধু পরিকল্পনা। দরকার শুধু সৃজনশীল মানুষ।’

কেন বিটিভি দেখতে চায় না মানুষ—এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘বিটিভিতে সৃজনশীল মানুষেরা খুব একটা সুযোগ পান না চাকরির নীতিমালার কারণে। এ ছাড়া বিটিভির নিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। যার ফলে নতুন মেধা আসার সুযোগ পায়নি। দর্শক রুচির পরিবর্তন হয়েছে। নতুন প্রজন্মকে অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত করতে না পারলে এসব অনুষ্ঠান নিয়ে কেউ ভাববে না এটাই স্বাভাবিক।’

বাইরে থেকে চুক্তিভিত্তিতে লোক নিয়োগ দেওয়া, বেতন কম হওয়ায় সৃজনশীল তরুণেরাও বিটিভিতে চাকরি করতে আগ্রহী হচ্ছে না বলে মনে করছেন রামেন্দু মজুমদার। তিনি বলেন, ‘সৃজনশীল মানুষেরা ধরাবাঁধা নিয়মের মধ্যে থাকতে চান না। তাঁদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া উচিত। বিটিভির মতো কারিগরি সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশের সব কটি চ্যানেল একসঙ্গে করলেও পাওয়া যাবে না। কিন্তু আমরা তা কাজে লাগাতে পারছি না। এ জন্য নীতিমালা শিথিল করতে হবে, সময়োপযোগী উদ্যোগ নিতে হবে। বিটিভির বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার নিয়ে বসতে পারে, যারা বলবে কীভাবে এগোলে অনুষ্ঠানের মান বাড়ানো যায়।’

একটা সময় বিটিভিতে সংবাদপাঠ করতেন রামেন্দু মজুমদার। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তা আর করছেন না তিনি।

নাটক ও অন্যান্য অনুষ্ঠান দর্শকপ্রিয় করতে বাংলাদেশ টেলিভিশনের বর্তমান মহাপরিচালকের চেষ্টার কথা তুলে ধরেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘যদিও এই প্রতিষ্ঠানে সিস্টেম জটিলতা আছে, এরপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান ডিজি। সবচেয়ে বড় যে সমস্যা, ১৯৮১ সালের পর এ প্রতিষ্ঠানে কোনো প্রযোজক নিয়োগ হয়নি। রাষ্ট্রীয় এই গণমাধ্যমকে চাঙা করতে হলে প্রতিভাবানদের ডেকে এনে চাকরি দিতে হবে। আমি যত দূর জানি, মুস্তাফা মনোয়ার, আবদুল্লাহ আল–মামুন, কলিম শরাফীর মতো গুণীজনদের ডেকে এনে বাংলাদেশ টেলভিশনে চাকরি দেওয়া হয়। মেধা ছাড়া ভালো অনুষ্ঠান হবে, এমনটা ভাবলে তো হবে না।’

১৫ বছর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে অবসর নিয়েছেন মোস্তফা কামাল সৈয়দ। তিনি এখন বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির অনুষ্ঠান বিভাগের উপদেষ্টা। তাঁর মতে, তাঁদের সময়টাতে যেভাবে কাজ হয়েছিল, এখন সেভাবে হচ্ছে না। একটা শূন্যতা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, সেগুলো কাটিয়ে ওঠাও বেশ কঠিন। ভালো অনুষ্ঠান নির্মাণে যে প্রতিবন্ধকতা, তা দূর করতে হবে। আমাদের সময়টাতে দলবেঁধে কাজ করতাম। এখন তা নেই বললেই চলে। ফ্রিল্যান্সারদেরও সুযোগ করে দিতে হবে। আমরা কিছু গুণীর সান্নিধ্য পেয়েছি, যাঁদের কাছ থেকে শিখেছি। নিজেদেরও জানার আগ্রহ ছিল।’