দেখে এলাম নোলক

নোলক ছবিতে শাকিব খান, ববি
নোলক ছবিতে শাকিব খান, ববি

বাংলাদেশের সিনেমার জয় হোক, ব্যাপারটা আমার কাছে সত্যিই আর ভবিষ্যতের বলে মনে হয় না। মনে হয় জয়টা এই মুহূর্তে হচ্ছে, গতকাল রাতেও হচ্ছিল, আগামীকাল সকালেও হবে এবং হতে থাকবে। সিনেমার মতো কমপ্লেক্স কোনো ইন্ডাস্ট্রির জয় তো আর এক রাতে ঘোষণা দিয়ে হয় না। ব্যাপারটা ঘটতে থাকে। আমাদের ‘সিনেমার জয়’ এটা প্রেজেন্ট কনটিনিউয়াস।

নোলক ঈদের ছবি। শাকিব খান আর ববি সেখানে শাওন আর কাজলা। সাকিব সনেটের প্রথম পরিচালনা। নোলক দেখেও ওই কথাই মনে হলো। সিনেমার দুর্দিন শেষ হওয়ার সময় খুব কাছে, খুব। এখন দরকার বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া আর পরিশ্রম করার একান্ত মনোভাব। তাহলেই হবে, হতেই হবে।

নোলক একটা ট্র্যাজেডির গল্প, একটা প্রেমের ছবি। লাইলি-মজনু, রোমিও-জুলিয়েটের মতো ট্র্যাজিক ভালোবাসার গল্প। সেই গল্পকে তুলে ধরা হয়েছে দারুণ ঝকঝকে ছবি, বাস্তববিবর্জিত সেট, বাংলার মানুষের পছন্দের অভিনয়শিল্পী, সুন্দর গান, যথাযথ সাউন্ডের মধ্য দিয়ে। সিনেমার অনেক জায়গায় সিনেম্যাটিক নাটকীয়তা তৈরি হয়েছে। তাই ঈদের আমেজে অবশ্যই পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে দেখার মতো ছবি এই নোলক

নোলক
অভিনয়: শাকিব খান, ববি, তারিক আনাম খান, নিমা রহমান, ওমর সানী, মৌসুমী, রজতাভ দত্ত, সুপ্রিয় দত্ত, শহীদুল আলম সাচ্চু, রেবেকা প্রমুখ।
কাহিনি: ফেরারি ফরহাদ চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: সাকিব সনেট অ্যান্ড টিম।

ছবির শুরুর দিকেই গান আছে, আছে নানা মজার সংলাপে দর্শককে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা। তবে ছবিটা অবশ্যই বিরতির পর আরও জমে ওঠে, যখন থেকে প্রেমটা ঘটে। শেষ দৃশ্যগুলো অভিনয়, সিনেম্যাটোগ্রাফি, গ্রাফিকস—সবকিছু মিলিয়ে সবার মনেই দাগ কাটবে। সাকিব সনেটকে অভিনন্দন, অভিনন্দন শাকিব–ববিকে। ছবির শেষে শাওন (শাকিব) ও কাজলার (ববি) পরিবারের ঐতিহ্য যে নোলক সেটা একটু অদ্ভুতভাবে মাটিতে ছিটকে পড়ে। এরপরের অংশটা বেশ সুন্দর ছিল। একটা নোলক মাটিতে পড়ে আছে, তার ওপর বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে, নোলকটা আস্তে আস্তে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে...। পুরো সিনেমাটা
এমন অনুভূতিতে তৈরি হলে দারুণ হতো।

নোলক–এর গল্প মৌলিক। গল্প বলার ঢঙে এখনকার জনপ্রিয় ভারতীয় ধারার অনেকটা ছাপ পাওয়া যায়। আমার বিশ্বাস, আমরা এই ঘরানার ছবি বানাতে চাই। কারণ, এই ভারতীয় ধারা বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীকে ভেতর থেকে আন্দোলিত করে। তাই দর্শকের হৃদয়ের গভীরে পৌঁছে যাওয়ার রাস্তাও নিশ্চয়ই এটাই।

নোলক–এর গল্পের কয়েকটা জায়গাকে অবশ্যই আরও সাজানো যেত। যেমন কাজলা আর শাওনের প্রেম হওয়ার জন্য মারামারির ভেতর দিয়ে যে ক্রাইসিস পয়েন্ট তৈরি করা হয়েছে, সেসব শত্রুকে আমরা আগে কখনো দেখিনি। তাই আমরা দর্শক হিসেবে জানি না যে তারা শত্রু। আর এমন রূপকথার রাজ্যে হুট করে শত্রু কোত্থকে এল, সেটাও জানি না। তাই এভাবে প্রেম হওয়াটা খুব আরোপিত মনে হয়েছে। প্রেমের ছবি ঠিকমতো প্রেম অনুভব করার আগেই নায়ক–নায়িকা বিয়ে করে ফেলে এবং সেই বিয়েতে ভয়ংকর বাদ সাধেন নায়িকার বাবা। কেন বাদ সাধে সেটাও বোঝা যায় না। আর ছবির লোকেশনগুলো সুন্দর হলেও বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলকে কি এটা তুলে ধরে? সেটাও স্পষ্ট হওয়া যায়নি।

নিশ্চিতভাবে বাজে হলে বসে কারোরই সিনেমা দেখতে ইচ্ছা করে না। তারপরেও আমাদের দর্শক গল্প প্রাণের ভেতর থেকে ভালোবাসেন। তাঁদের কাছে টানলে এখনো তাঁরা সব সহ্য করে ওই পচা সিনেমা হলেই চলে যান, এমনটাই আমি শুনেছি।

আমাদের হলগুলো ভালো হয়ে যাক, পারলে কালকেই, আর বাংলা সিনেমা এগিয়ে যাক ঝড়ের গতিতে—এই আশা বুকে নিয়ে নোলক–এর জন্য শুভকামনা। অমর হয়ে থাক শাওন-কাজলার প্রেম।