কমে গেছে প্রযোজক, সমিতির নির্বাচন হবে?

আইনি জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নির্বাচন। মধ্যে তিন দফায় সমিতির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনজন উপসচিব। প্রায় সাত বছর পর গত মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এফবিসিসিআইয়ের অঙ্গসংগঠন প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নির্বাচন (২০১৯-২১)-এর তফসিল ঘোষিত হয়েছে। আগামী ২৭ জুলাই নির্বাচনের কথা রয়েছে। তার আগে ২৭ মে পর্যন্ত সাধারণ সদস্যদের চাঁদা আদায় শেষে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। চলতি ১৭ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও জমা হওয়ার কথা। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৬ জুলাই।

এই নির্বাচনে সাধারণ সদস্য ভোটার ও সহযোগী সদস্য ভোটার দুই-ই কমে গেছে। সমিতির অফিস সেক্রেটারি সমেন্দ্র চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, ২৭ মে চাঁদা জমা দেওয়ার শেষ দিনে দেখা যায়, সমিতির সাধারণ সদস্য ১৩৯ এবং সহযোগী সদস্য ৫২ জন। পরে নির্বাচনী আপিল বোর্ডের কাছে আবেদন করে সদস্যপদ ফিরে পেয়েছেন একজন সাধারণ ও দুজন সহযোগী সদস্য। ২০১১-১৩ সালে শেষ নির্বাচনের পর এবার তালিকা থেকে কমেছে ২০ জন সাধারণ সদস্য ও ১৯ জন সহযোগী সদস্য ভোট। ২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির ১৯ জন নির্বাচিত হবেন ১৪০ জন সাধারণ সদস্যের ভোটে। বাকি দুজন নির্বাচিত হবেন ৫৪ জন সহযোগী সদস্যের ভোটে।

সদস্য কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সিনেমার মন্দাকে দায়ী করলেন সাবেক প্রযোজক নেতা নাসির উদ্দিন দিলু। তিনি বলেন, ‘সিনেমার অবস্থা ভালো না। অনেক প্রযোজক লোকসানের কারণে নিরুত্সাহিত হয়ে প্রযোজনা ছেড়ে দিয়েছেন। তা ছাড়া দীর্ঘদিন প্রযোজক সমিতি সক্রিয় না থাকায় সমিতির সঙ্গে অনেকেরই যোগাযোগ নেই।’

এদিকে যে আইনি জটিলতায় বিগত দিন বারবার নির্বাচন বন্ধ করতে হয়েছে, সমিতির গঠনতন্ত্রের সেই ৯ (গ) ধারা সামনে এসে দাঁড়াতে পারে। তাহলে আবারও বন্ধ হয়ে যেতে পারে নির্বাচন। ওই ধারায় বলা আছে, কেউ যদি পরপর তিনবার, অর্থাৎ টানা ছয় বছর নির্বাচিত হন, তাহলে পরের একবার বিরতি দিয়ে আবার তিনি নির্বাচন করতে পারবেন। এ ধারা অনুসারে এর আগে ২০১৬-১৮ মেয়াদের নির্বাচনটি ভেস্তে যায়। সেই নির্বাচনে পরপর তিনবার নির্বাচিত প্রার্থী ছিলেন সাতজন। সমিতির গঠনতন্ত্রের ওই ধারার সূত্র ধরে প্রযোজক সাইফুল ইসলাম হাইকোর্টে মামলা ঠুকে দিলে সেবার নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়।

এবারও বিগত দিনে পরপর তিনবার নির্বাচিত খোরশেদ আলম খসরু, শামসুল আলমসহ অনেকই নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। গঠনতন্ত্রের ৯ (গ) ধারায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হলে তাঁরা আদালতে যাবেন। এতে আবারও জটিলতা তৈরি হতে পারে। বন্ধ হতে পারে নির্বাচন। খোরশেদ আলম বলেন, ‘সাত-আট বছর সমিতির নির্বাচন হয়নি। মধ্যে তিনবার প্রশাসকেরা দায়িত্ব পালন করেছেন। তাহলে মধ্যের এই সময়ের হিসাব কীভাবে করা হবে? গঠনতন্ত্রে এ ব্যাপারে কিছু বলা নেই। মনোনয়নপত্র বাতিল হলে আমরা আইনের আশ্রয় নেব। আমাদের যুক্তি তুলে ধরব। আদালত নির্বাচন করার অনুমতি দিলে করব, না দিলে করব না। এবার যেকোনোভাবেই সমিতির নির্বাচনটা চাই আমরা।’

নির্বাচন বন্ধের আশঙ্কা প্রসঙ্গে প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির প্রশাসক সেলিম হোসেন বলেন, ‘১৭ থেকে ২৭ জুন মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও জমা দেওয়ার সময়। তারপর জানা যাবে কারা প্রার্থী। তার আগেই সমস্যার কথা বলা যাচ্ছে না।’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির সবশেষ নির্বাচন হয় ২০১১ সালের ১৮ আগস্ট। ২০১১-১৩ মেয়াদি এই নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হন যথাক্রমে সোহেল রানা ও ডিপজল।