যিনি অভিযোগ করেছেন, তাঁকেই গ্রেপ্তার
ভারতের ছোট পর্দার জনপ্রিয় তারকা করণ ওবেরয়ের বিরুদ্ধে যিনি ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন, এবার সেই মহিলাকেই গ্রেপ্তার করেছে মুম্বাইর ওশিওয়াড়া থানার পুলিশ। পুলিশের মতে, এই মহিলা নাকি করণ ওবেরয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি সেই মহিলার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই ঘটনাও ছিল সাজানো। ওই মহিলা পরিচিত একজনকে ১০ হাজার রুপি দিয়ে নিজের ওপর হামলা করিয়েছেন। এই মহিলার ওপর যে ব্যক্তি হামলা করেছিলেন, তাঁকে আটক করার পর আসল ঘটনা প্রকাশ পায়। করণ ওবেরয়কে কঠিনভাবে ফাঁসানোর জন্য সেই মহিলা এমন পরিকল্পনা করেছিলেন।
গত ৬ মে ধর্ষণের অভিযোগে করণ ওবেরয়কে গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পুলিশ। এরপর তাঁকে ৩৩ দিন কারাগারে থাকতে হয়েছে। কয়েকবার তাঁর জামিনের জন্য আবেদন করা হয়। শেষ পর্যন্ত ৭ জুন ৫০ হাজার রুপির মুচলেকা এবং শর্ত সাপেক্ষে করণ ওবেরয়ের জামিন মঞ্জুর করেন বোম্বে হাইকোর্ট।
মুম্বাইয়ের ওশিওয়াড়া থানার পুলিশ করণ ওবেরয়কে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ও ৩৮৪ ধারায় ধর্ষণ এবং জোর করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছিল। তখন পুলিশ জানিয়েছে, একজন নারী জানিয়েছেন, করণ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে সহবাস করেন এবং ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি মোবাইলে ধারণ করেন। এরপর বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অর্থ দাবি করেন। ক্রমেই বাড়তে থাকে সেই দাবি। তিনি তা দিতে অস্বীকার করলে ওই সব ছবি আর ভিডিও ফুটেজ ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন করণ।
এ ছাড়া সম্প্রতি প্রাতর্ভ্রমণের সময় অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তি ওই নারীর ওপর হামলা করেন। ওই নারী তখন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, সেই দুষ্কৃতকারী ছিল মোটরবাইকে। ধারালো একটি ছুরি দিয়ে তাঁর হাতে সে আঘাত করে। সেই দুষ্কৃতকারী হুমকি দিয়েছে, তিনি যদি তাঁদের কথা না শোনেন, তাহলে তাঁর গায়ে অ্যাসিড ছুড়ে দেওয়া হবে। যাওয়ার আগে রাস্তায় কয়েকটি কাগজ ফেলে যায়, সেগুলো তাঁকে পড়ার জন্য বলে। ওই সময় করণ ওবেরয় ছিলেন কারাগারে। ওই নারী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য করণ ওবেরয় কারাগারে বসেই তাঁর ওপর হামলা করিয়েছেন।
১৯৯৫ সালে মডেলিং দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন করণ। এরপর মহেশ ভাটের ‘স্বাভিমান’ (১৯৯৫) দিয়ে তাঁর টিভি সিরিয়ালের যাত্রা শুরু। কিন্তু তিনি জনপ্রিয় হন ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চলা সনি টিভির জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘জেসি জ্যায়সি কোয়ি নেহি’ দিয়ে। এখানে তিনি রাঘব চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক হিন্দি হিট সিরিয়াল উপহার দিয়েছেন। ২০০১ সালে ‘আ ব্যান্ড অব বয়েজ’ গানের দলে যোগ দেন তিনি। আমাজন প্রাইমে ‘ইনসাইড এজ’ ওয়েব সিরিজেও দেখা গেছে তাঁকে।
একসময় ‘জেসি জ্যায়সি কোয়ি নেহি’ সিরিয়ালের কেন্দ্রীয় চরিত্র জেসি অর্থাৎ মোনা সিংয়ের সঙ্গে করণ ওবেরয়ের প্রেমের সম্পর্ক শোনা গিয়েছিল। অভিনয় আর গানের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেন তিনি। বিজ্ঞাপনে দেখা যায় তাঁকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দারুণ সক্রিয় এই টিভি তারকা।
করণ ওবেরয়কে গ্রেপ্তার করার পর অভিনয়শিল্পী, উপস্থাপক এবং কলামলেখক পূজা বেদি বলেন, ‘সবাই জানে করণ কেমন। সে পুরোদস্তুর একজন ভদ্রলোক। তার ওপর যে অভিযোগ আরোপ করা হয়েছে, তা মিথ্যা। করণ নিরপরাধ। ১৫ বছর ধরে করণকে একজন ভদ্র, দয়ালু ও চমৎকার ভদ্রলোক হিসেবে সবাই চেনেন। নারীদের সম্মান করেন করণ।’ নিজেকে করণের সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলে উল্লেখ করে পূজা বেদি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে নারী অধিকারের জন্য লড়াই করছেন করণ।’
গণ্যমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অভিযোগকারী নারীর সঙ্গে করণের পরিচয় ২০১৬ সালের শেষ দিকে, একটা ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে। এটি ২০১৭ সালের ঘটনা। তখন কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোনো নিউজ হয়নি। ২০১৮ সালের অক্টোবরে করণ নিজেই ওই নারীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে হয়রানির অভিযোগ দায়ের করেন। ২০১৮ সালে ওই নারী এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, তাঁর আর করণের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ সময় তিনি তাঁর বক্তব্যের পক্ষে কিছু উপহার ছাড়াও অন্যান্য কিছু দেখান। আর ২০১৯ সালে এসে দেখা গেল, সেই নারী করণের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। এই নারীর ২০১৮ সালের বক্তব্য আর ২০১৯ সালের মামলা সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি একজন নারী এবং পুলিশ ওই মামলা নিতে বাধ্য। করণ যতই নিরপরাধ হোন না কেন, সব প্রমাণ করণের পক্ষে থাকলেও আইন অনুযায়ী পুলিশকে এখন সব আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।’