এলআরবি ব্যান্ড কি টিকবে?

এলআরবি ব্যান্ডের মধ্যমণি ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর চলে যাওয়ার পর ভাঙন কি শুরু হলো? ফাইল ছবি
এলআরবি ব্যান্ডের মধ্যমণি ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর চলে যাওয়ার পর ভাঙন কি শুরু হলো? ফাইল ছবি

ভাঙনের শব্দ শোনা যাচ্ছে এলআরবিতে। নতুন সদস্য নিয়ে এলআরবি গঠনের পর আইয়ুব বাচ্চুর ছেলের শুভকামনা থাকা সত্ত্বেও দুই মাস পর খবর এল, দলটি দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য স্বপনের সঙ্গে আছেন ড্রামার রোমেল। অন্য ভাগে আছেন বেস গিটারিস্ট মাসুদ, ব্যবস্থাপক শামীম এবং নতুন যোগ দেওয়া বালাম। ২১ জুন বিশ্ব সংগীত দিবসে ক্যাডেট কলেজ ক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে স্বপন ও রোমেল আলাদাভাবে শোতে অংশ নিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। ‘ট্রিব্রিউট টু আইয়ুব বাচ্চু’ নামের সেই অনুষ্ঠানে এলআরবি সদস্যদের সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছিলেন জাহিদ মাসুদ ও বিজয় মামুন।

দেশে এবং দেশের বাইরের সংগীতপ্রেমী সবার কাছে এলআরবি ও আইয়ুব বাচ্চুর নাম পরিপূরক হয়ে আছে। একটি ছাড়া অন্যটি কল্পনাও করা যায় না। তাই দেশের এই জনপ্রিয় গিটার জাদুকরের মৃত্যুর পর কে হবেন দলের কান্ডারি, তা নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। হঠাৎ বালামকে এলআরবি ভোকাল হিসেবে ঘোষণা করলে চমকে ওঠেন সবাই। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন বালাম। বালাম নিয়ে এলআরবি সদস্যরা নাম বদল করতে বাধ্য হন।

এলআরবি সদস্যরা গানের দলটির নতুন নাম দেন ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লিগাসি’। এই বিষয় নিয়েও অনেক জল ঘোলা হয়। আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নাম পরিবর্তন কিংবা সদস্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। এলআরবি ব্যান্ডে বালামের অন্তর্ভুক্তি, দিন দশেক পর বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসির এমন ঘটনা চলার মধ্যেই পরিবারের পক্ষ থেকে ১৭ এপ্রিল ছেলে আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব বলেন, ‘এলআরবি অথবা বালাম অ্যান্ড দ্য লিগ্যাসির (তাঁরা এখন এই নামে গান করতে চান) সদস্যদের বলতে চাই, তাঁরা চাইলে এলআরবি নামে গান করতে পারেন। এ নিয়ে আমাদের কোনো বাধা নেই।’

এলআরবি নাম নিয়ে স্বপন ও রোমেলের আলাদা করে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ব্যাপারটি একেবারেই জানা ছিল না ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদের। তিনি বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আয়োজকেরা শুরুতে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু দলের কারও মহড়া না থাকায় শো করতে রাজি ছিলাম না। আমি চেয়েছিলাম, এলআরবি যখন নতুন করে দর্শকের সামনে আসবে, বিষয়টা যেন বর্ণাঢ্য হয়। হুট করে আমাদের না জানিয়ে এমন ঘটনায় বিব্রত বোধ করেছি।’
শামীম বলেন, ‘আমরা তো ভেবেছিলাম, আমরা ঐক্যবদ্ধ। এখন তেমন মনে হচ্ছে না।’

এলআরবি কি থাকছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না থাকার কিছু নেই। তবে কোথায় যেন শুনলাম, আমাদের বাদ দিয়ে এলআরবি! এটা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। স্বপন ভাইয়ের মতো জ্যেষ্ঠ সদস্যের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ আশা করিনি।’

আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে একেবারে শুরু থেকেই আছেন স্বপন। তিনি বলেন, ‘কিছু জটিলতা ছিল, সবশেষে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ১৫ মে থেকে মহড়া হবে। নতুনভাবে ফটোশুট হবে। এলআরবি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবে। আমি আর রোমেল বসে আছি তো আছিই। কবে প্র্যাকটিস, ঈদের শোর কথা ছিল—কিছুই জানতে পারছিলাম না। এর মধ্যে এমনও শুনেছি, ফোয়াদ নাসের বাবু ভাইয়ের সঙ্গে শো নিয়ে কথা বলার সময় শামীম আহমেদ জানায়, এলআরবি আপসেট, এখন শো করবে না। এর বাইরেও আরও কয়েক জায়গায় এমন কথা বলা হয়েছে। শামীম সাহেবের সাউন্ডের ব্যবসা আছে, এলআরবি ছাড়াও তিনি চলতে পারেন। বস (আইয়ুব বাচ্চু) আমাদের শিখিয়েছেন গানবাজনা করে চলতে। আমরা সেভাবেই চলছি। এত দিন ধরে বসে আছি, বাড়ি ভাড়া, সন্তানদের পড়ালেখার খরচ, সংসারের আরও অনেক খরচ আছে—সব বন্ধ। শামীম সাহেব ও মাসুদ সাহেবের আশায় বসে ছিলাম। তাঁরা যোগাযোগই করছেন না। বাধ্য হয়েই ক্যাডেট কলেজ ক্লাবের শো করেছি।’

এলআরবি ব্যান্ডের ড্রামার রোমেল বললেন, ‘শামীম সাহেবকে অনুরোধ করছি, তিনি যেন এলআরবি নিয়ে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কথা না ছড়ান। এলআরবিতে এখন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বাচ্চু ভাইয়ের পরই আছেন স্বপন ভাই। আমরা একসঙ্গে আছি। যত দিন বেঁচে থাকি, মঞ্চে বাচ্চু ভাইয়ের রুপালি গিটার ও মাইক্রোফোন স্ট্যান্ড সবসময় থাকবে। আমরা ভাবব, তিনি আমাদের সঙ্গেই আছেন।’

পুরো বিষয়টি শুনে বালাম বললেন, ‘আমি হতবাক। সংগীতজীবনে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি, যেটা এলআরবিতে যুক্ত হওয়ার পর হয়েছে। শুধু এটুকু বলব, আমাদের সবাইকে একসঙ্গে বসে এই পরিস্থিতির সমাধানে আসা উচিত। আমি চাইব ইতিবাচক সমাধান হোক।’