প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানতে ব্যর্থ আমদানির ছবিগুলো

গার্লফ্রেন্ড ও ভিলেন ছবির পোস্টার
গার্লফ্রেন্ড ও ভিলেন ছবির পোস্টার

আমদানি-রপ্তানি নীতিমালায় ভারত থেকে আমদানি করা বাংলা ছবির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের শিল্পী, কলাকুশলীরা কম আন্দোলন করেননি। ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ২০১৭ সালে এসে আরও জোরদার হয়। তবু ঠেকানো যায়নি ভারতীয় বাংলা ছবিকে। তবে আমদানি করা এই ছবিগুলো কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে?

২০১০ সালে এসে বন্ধ থাকা উপমহাদেশের ভাষার ছবি গেজেটে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর যতগুলো ছবি ভারত থেকে আমদানি করে বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর দু-একটি বাদে প্রায় সব ছবিই প্রেক্ষাগৃহে মুখ থুবড়ে পড়েছে, জানিয়েছেন আমদানিকারকেরা। গত আট-নয় বছরে ভারত থেকে দুটি হিন্দি ছবি ওয়ান্টেড, ডন ২-সহ প্রায় অর্ধশত বাংলা ছবি আমদানি করা হয়েছে। এনেছে ইন উইন এন্টারপ্রাইজ, তিতাশ কথাচিত্র, এন ইউ আহম্মদ ট্রেডার্স, খান ব্রাদার্স, আরাধনা এন্টারপ্রাইজ, এসকে ইন্টারন্যাশনাল, শাপলা মিডিয়া প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো জোর, বদলা, সংগ্রাম, বিসর্জন, খোকা বাবু, খোকা বাবু ৪২০, বেপরোয়া, যুদ্ধশিশু, অভিমান, বেলা শেষে, হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা, ওয়ান, কেলোর কীর্তি, তোমাকে চাই, ইন্সপেক্টর নটি কে, ইয়েতি অভিযান, সুলতান-দ্য স্যাভিয়র, ভাইজান এলো রে, চালবাজ, গার্লফ্রেন্ড, পোস্ত, ভিলেন, জিও পাগলা, নাকাব, ভোকাট্টা ইত্যাদি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছবিগুলো দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছে এবং হচ্ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি আনা কিডন্যাপ, ভুতনাথ, শেষ থেকে শুরু, বিবাহ অভিযান, বচন নামে আরও পাঁচটি কলকাতার বাংলা ছবি বাংলাদেশে মুক্তির অনুমোদন পেয়েছে। আমদানিকারকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একমাত্র শাকিব খান অভিনীত ভাইজান এলো রে ও চালবাজ ছাড়া কোনো ছবিই দর্শক টানতে পারেনি।

সব শেষ গত ২৮ জুন কলকাতার ভোকাট্টা ছবিটি অনেকটা নীরবেই বাংলাদেশের প্রায় ৫০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। দর্শক এ নিয়ে কোনো আলোচনাই করেনি। আগামী শুক্রবার বেশ কিছু হল থেকে নেমে যাচ্ছে ছবিটি। নিজেদের হলের কথা এভাবেই জানিয়েছেন ঢাকার বলাকা হলের ব্যবস্থাপক সাজিদ আলী। ছবির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়ার চেয়ারম্যান অবশ্য এ নিয়ে কথা বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘কেন ভালো যাচ্ছে না, বলতে পারব না।’

কেউ কেউ বলছেন, নানা জটিলতায় ছবিগুলো বাংলাদেশে আনতে সময় লাগছে। এখানে মুক্তির আগেই ছবিগুলো ভারতে পাইরেসি হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি এসব ছবির কোনো প্রচারণাও নেই। ইন উইন এন্টারপ্রাইজের ব্যানারে হিন্দি ছবি ডন টু ও ওয়ান্টেড বাংলা ছবি জোর, বদলা, সংগ্রাম ও বিসর্জন ছবিগুলো বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে। ছবিগুলো কোনো ব্যবসা করেনি বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ইফতেখারুদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, ‘নীতিমালা মেনে দাপ্তরিক কাজ সেরে ছবি আনতে দীর্ঘ সময় লাগছে। ভারতের হিট ছবিগুলোও আমদানি করে এনে এখানে চলছে না। কারণ, আমাদের এখানে আনতে আনতে ভারতে দু-তিন মাস পেরিয়ে যায়। এ সময়ে ছবিগুলো পাইরেসি হয়ে যাচ্ছে, কোনো কোনো প্রযোজক ইউটিউবে ছবি প্রকাশ করে দিচ্ছেন। ফলে হলে গিয়ে ছবিগুলো দেখার আগ্রহ হারাচ্ছেন দর্শকেরা।’ তবে তিনি মনে করেন, হলিউডের মতো ভারতের বাংলা ছবিগুলোও যদি একই সময়ে বাংলাদেশে মুক্তি পেত, তাহলে ছবিগুলো বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারত।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তিতাশ কথাচিত্র তোমাকে চাই, সুলতান-দ্য স্যাভিয়র, গার্লফ্রেন্ড ছবিগুলো আমদানি করে মুক্তি দিয়েছে। সব কটি ছবিই প্রেক্ষাগৃহে ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আবুল কালামও নওশাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, ‘দুই দেশের দুই ধরনের কালচার। ভারতের ছবির গল্পে সে দেশের কালচারই প্রাধান্য পায়। সুতরাং এটিও ছবি ব্যবসা না করার অন্যতম কারণ।’

কিন্তু আমদানির ছবি ভাইজান এলো রে, চালবাজ-এর সাফল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ছবি দুটিতে শাকিব খান আছেন। তাঁর ভক্ত দেশজুড়ে। মোট হিসাবের সঙ্গে এ দুটি ছবি মেলানো যাবে না।’

ভাইজান এলো রে, চালবাজ, ভিলেন, জিও পাগলা ছবিগুলোর ব্যর্থতা প্রসঙ্গে কথা বলতে চাননি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এন ইউ আহম্মদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক আমদানিকারক বলেন, ‘ছবি ক্রয়সহ আমদানি খরচই ওঠে না, আবার প্রচারণায় বাড়তি খরচের ঝুঁকি কে নেবে?’