'সা রে গা মা পা' নিয়ে বলতে চান না নোবেল

নোবেল। ছবি: প্রথম আলো
নোবেল। ছবি: প্রথম আলো

শেষ হয়েছে ভারতের জি বাংলার ‘সা রে গা মা পা’র এবারের সিজন। গান, প্রশিক্ষণ, গান নিয়ে আলাপ, খুনসুটি, ভোট—সব মিলে দারুণ একটা সময় কেটেছে বাংলাদেশের ছেলে মাঈনুল আহসান নোবেলের। আজ মঙ্গলবার রাতে ভারতের কলকাতা থেকে ফিরছেন তিনি। আপাতত তিন সপ্তাহ দেশে থাকবেন। এরপর আবার উড়াল দেবেন মুম্বাইয়ের উদ্দেশে। আজ দুপুরে কলকাতা থেকে জানালেন তিনি। জি বাংলার গানবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘সা রে গা মা পা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুই বাংলায় নোবেল এখন দারুণ জনপ্রিয়।

গত শনিবার কলকাতার বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে এই প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্বটি জি বাংলায় দর্শক দেখতে পাবেন ২৮ জুলাই রাতে। তবে তার আগেই বিভিন্ন সূত্রে প্রতিযোগিতার ফলাফল জানাজানি হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে নোবেলকে। ‘সা রে গা মা পা’র এবারের আসরে তিনি প্রিতমের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় রানারআপ অর্থাৎ তৃতীয় হয়েছেন। চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন অঙ্কিতা। বিচারকদের রায়ে এই ফল হলেও দর্শকের ভোটে সেরা নোবেল। তিনি ‘মোস্ট ভিউয়ার চয়েস’-এ বিজয়ী হয়েছেন। আয়োজনটির সঙ্গে জড়িত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোর কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নোবেল
নোবেল

বাংলাদেশের দর্শকের কাছে এই ফলাফল একেবারই অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি নোবেল। ফলাফল নিয়ে মোটেও ভাবছেন না। আজ দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘আপাতত আমার ব্যান্ড “নোবেলম্যান”-এর গান নিয়েই ভাবছি। প্রতিযোগিতা নিয়ে আর মাথা ঘামাচ্ছি না।’ আরও বললেন, ‘এই শোর মাধ্যমে আমি দুই বাংলায় পরিচিতি পেয়েছি। সবাই আমার গান পছন্দ করেছেন, আমাকে ভালোবেসেছেন। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। গ্র্যান্ড ফিনালে রেকর্ড হয়েছে, কিন্তু প্রচার হতে এখনো প্রায় এক মাস বাকি। তাই এটা নিয়ে এখনো অফিশিয়ালি কিছু বলতে পারছি না। আমি আগেই বলেছি, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেয়ে আমি গানটা ঠিকমতো গাওয়ার দিকে বেশি জোর দিয়েছি। ফলাফল যা-ই হোক, আপনারা আগে যেমন আমার সঙ্গে ছিলেন, আশা করছি ভবিষ্যতেও সেভাবেই আপনাদের পাশে পাব।’

গতকাল সোমবার ‘সা রে গা মা পা’র চূড়ান্ত পর্বের ফলাফল জানাজানি হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকের মতে, নোবেলের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আবার অনেকেই বলেছেন অঙ্কিতা ভট্টাচার্য ছিলেন যথার্থ।

তবে ফলাফল যা-ই হোক, এরই মধ্যে নোবেল দুই বাংলার মানুষের মন জয় করেছেন। এই তরুণের গান, গায়কি, গান উপস্থাপনে মুগ্ধ বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দর্শকেরা।

জানা গেছে, আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ‘সা রে গা মা পা’র শেষ পর্ব প্রচারের আগে এই প্রতিযোগিতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না নোবেল। তাই জানালেন নিজের আগামী পরিকল্পনা ও স্বপ্নের কথা। যে স্বপ্নের পুরোটাজুড়ে আছে তাঁর ব্যান্ড ‘নোবেলম্যান’। তাঁর ইচ্ছা, নোবেলম্যান ছড়িয়ে যাবে দেশ-বিদেশে। নতুন নতুন গান নিয়ে আসবে নোবেলম্যান। আজম খান, লাকী আখান্দ্‌, হ্যাপি আখন্দ, আইয়ুব বাচ্চুদের তৈরি করা বাংলা ব্যান্ডের ঐতিহ্য ধরে রাখবেন।

নোবেল
নোবেল

আজ দুপুরে যখন ঢাকা থেকে মুঠোফোনে নোবেলের সঙ্গে কথা হয়, তখন তিনি ব্যস্ত নিজের ব্যান্ড নিয়ে। এখন তাঁর সব ভাবনা ব্যান্ড আর মৌলিক গান তৈরি নিয়ে। জানালেন, আপাতত নতুন গান আর গানের ভিডিও তৈরির কাজকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

আজ রাতে ঢাকায় ফিরে কয়েক দিন পুরোপুরি বিশ্রাম নেবেন। তারপর আবার যাবেন মুম্বাইয়ে। তিনি যে ধারায় গান করেন, তা ঢাকা কিংবা কলকাতায় রেকর্ডিং করা সম্ভব নয়। তাই যেতে হবে মুম্বাইয়ে।

আগেই জানানো হয়েছে, নোবেলের বাড়ি গোপালগঞ্জে। সেখানেই তাঁর জন্ম। কিন্তু বড় হয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়। বাবা মোজাফফর এইচ নান্নু ব্যবসা সূত্রে কখনো থেকেছেন খুলনা আবার কখনো ঢাকায়। সেখানেই কেটেছে নোবেলের ছোটবেলা। নোবেলে জানান, ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত গোপালগঞ্জের এস এম মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়েছেন তিনি। এরপর ঢাকা ও খুলনায় কয়েকবার স্কুল বদলাতে হয়েছে। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভর্তি হন গোপালগঞ্জের একটি স্কুলে। সেখানে মারামারির ঘটনায় জড়িত থাকার কারণে তাঁকে স্কুল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। বাবা তাঁকে পাঠিয়ে দেন ভারতের দার্জিলিং। সেখানকার কাশিয়াং এলাকার হিমালি বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে চলে যান কলকাতার হাজরার একটি স্কুলে।

সেলফিশিকারিদের মাঝে নোবেল। ছবি: প্রথম আলো
সেলফিশিকারিদের মাঝে নোবেল। ছবি: প্রথম আলো

মাথায় গানের পোকা ঢোকে কলকাতায় থাকতেই। মাত্র ৬০০ টাকায় পুরোনো সিগনেচার ব্যান্ডের গিটার কিনে তা দিয়েই শুরু করে দেন সংগীতচর্চা। দিন–রাত গিটার দিয়ে গানের চর্চা। মেনে নেননি প্রতিবেশীরা। যার ফলে চারবার বাসা পাল্টাতে হয়। কলকাতার বন্ধুদের কাছ থেকে গিটারের কর্ড শেখেন নোবেল। এভাবেই গান শেখা। ওই সময়ের স্মৃতিচারণা করে নোবেল জানান, যে বাসায় থাকতেন, তার আশপাশের কয়েকজন শ্রোতা নিয়মিত আসতেন। বয়সে বড়। হেমন্ত, হ্যাপি, আদিবসহ কয়েকজন। তাঁরাই নোবেলের প্রথম অনুপ্রেরণা। উৎসাহদাতা। তাঁরা না থাকলে হয়তো এত দ্রুত গানে আসা কঠিন হয়ে যেত। ওই সময়ের চর্চা বেশি কাজে লেগেছে। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা নির্দিষ্ট গুরুর কাছে না শিখে বন্ধুদের সঙ্গে চর্চা আর নিয়মিত অনুশীলন নোবেলকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে।

নোবেল। ছবি: প্রথম আলো
নোবেল। ছবি: প্রথম আলো

কলকাতায় মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ করে ২০১৪ সালে ঢাকায় ফেরেন নোবেল। দেশে ফিরে বাবাকে জানান, গান ছাড়তে পারবেন না। নোবেলের যুক্তি, ‘জিম মরিসন মাত্র সেভেন পর্যন্ত পড়েছিলেন, জেমস পড়াশোনা শেষ না করে বাসা ছেড়েছিলেন। নোবেল হবেন তাঁদের মতো।’ বাবা নাছোড়বান্দা। বলতেন, ‘জেমস একজনই হয়।’ নোবেল জবাব দেন, ‘আমি জেমস না হতে পারি, নোবেল হব। আমিও একজনই।’

এভাবে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা করতে করতে নোবেলের সঙ্গে গানের প্রেম পোক্ত হয়ে যায়। এখন তিনি নোবেলই হয়েছেন। প্রতিযোগিতার ফলাফল নিয়ে ভাবছেন না। কবে নাগাদ নতুন গান শুনতে পারবেন শ্রোতারা? নোবেল বলেন, ‘দিন–রাত কাজ করেছি। জুলাইয়ে ইউটিউবে নোবেলম্যান চ্যানেলে গানগুলো প্রকাশ করা হবে।’

১৯ জুলাই রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটির নবরাত্রি হলে গান শোনাবেন নোবেল। একই মঞ্চে গাইবেন ‘আশিকি টু’ সিনেমার ‘শুন রাহা হ্যায়’ গানের শিল্পী অঙ্কিত তিওয়ারি।