এক মঞ্চে রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী

রাজধানীর সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে গানের সঙ্গে ছিল সমবেত নৃত্য। ছবি প্রথম আলো
রাজধানীর সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে গানের সঙ্গে ছিল সমবেত নৃত্য। ছবি প্রথম আলো

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর কাজী নজরুল ইসলাম অনেক বিষয়ে পরস্পরের কাছাকাছি ছিলেন; এবং সে নৈকট্য কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়। দুজনেরই প্রধান পরিচয় তাঁরা কবি। নিজেদের তাঁরা ওভাবেই দেখতেন, লোকেও তাঁদের সেভাবেই দেখে। তাঁরা দুজনেই আবার ছিলেন বহুমুখী; সাহিত্যের সব শাখাতেই তাঁদের কাজ আছে এবং তাঁরা দেশের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন, সমাজের অগ্রগতি ও মানুষের মুক্তি নিয়ে তাঁদের চিন্তা ছিল সার্বক্ষণিক। রবীন্দ্রনাথের মতোই নজরুলেরও ছিল সংগীতের প্রতি গভীর আকর্ষণ এবং সংগীতের ক্ষেত্রে দুজনের অবদানই অসামান্য। হাজার হাজার গান তাঁরা রেখে গেছেন। গানে সুর দিয়েছেন, সুর সৃষ্টি করেছেন, সুরের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। নিজেরাও গাইতেন। তাঁরা দুজনেই জানতেন যে তাঁদের গান বাঙালিকে অনেক কাল গাইতে হবে, এবং সে ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়নি। দুজনেই নাটক লিখেছেন, নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন, অভিনয় করেছেন। তাঁদের ছিল কৌতুকের অসাধারণ বোধ এবং তাঁরা শিশুদের জন্য যা লিখেছেন, তা-ও অতুলনীয়। বক্তৃতা করেছেন সভা-সমাবেশে। সম্পাদনা করেছেন পত্রিকা। 

রাজধানীর সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আজ বুধবার বাংলা সাহিত্যের দুই গুণীকে স্মরণ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন অতিথিরা। আজ সন্ধ্যায় এক আয়োজনে এ দুই কৃতী ব্যক্তির জয়ন্তী উদযাপন করল সাংস্কৃতিক সংগঠন বহ্নিশিখা। কথন, গান, আবৃত্তি আর নৃত্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় তাঁদের সৃজনকর্ম।
এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও বহ্নিশিখার সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আতিউর রহমান বলেন, রবীন্দ্রনাথ এই উপমহাদেশে বাংলা সাহিত্য ও কাব্যধারার এক আমূল পরিবর্তন এনেছেন। সাহিত্যের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশ ও ভারতকে একই সূত্রে গেঁথেছেন। আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের অবদান অবিস্মরণীয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কাব্য ও গানের যে প্রভাব, রবীন্দ্রনাথ সে প্রভাব সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন।

অনুষ্ঠানে নৃত্যগীতের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলামের সৃজনকর্ম। ছবি প্রথম আলো
অনুষ্ঠানে নৃত্যগীতের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলামের সৃজনকর্ম। ছবি প্রথম আলো

কাজী নজরুল ইসলাম প্রসঙ্গে আতিউর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর কবিতার ছন্দ কিংবা গানের সুর বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেছে অহর্নিশি। বঙ্গবন্ধু জাতীয় কবির শেষ জীবনে তাঁকে ভারত থেকে এ দেশে এনে যে অসাধারণ কাজটি করেছেন, তার জন্য তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) ধন্যবাদ না জানিয়ে উপায় নেই। এ থেকেই বোঝা যায় বঙ্গবন্ধুও বাংলা সাহিত্য এবং কবিতাকে কত ভালোবাসতেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই সম্মেলক কণ্ঠে বহ্নিশিখার শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে’। সঙ্গে ছিল নৃত্য। তাঁরা গেয়ে শোনান ‘রুমঝুম রুমঝুম কে বাজায়’। সংগঠনের নৃত্যশিল্পীরা ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন।

সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীদের কণ্ঠে গীত হয় ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ এবং উদীচীর শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ ও ‘সংকোচের বিহ্বলতা’। সম্মেলক কণ্ঠে সংগীত পরিবেশন করেন ক্রা‌ন্তি ও স্বভূমির শিল্পীরা।

একক কণ্ঠে শিমুল সাহা ‘উচাটন মন ঘরে রয় না’, আবিদা রহমান সেতু ‘সখি বাঁধলো বাঁধলো’, আসিফ ইকবাল সৌরভ ‘পদ্মার ঢেউরে’ এবং মোহনা দাস ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ গেয়ে শোনান। একক কণ্ঠে আরও সংগীত পরিবেশন করেন পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী কমলিকা চক্রবর্তী। ছিল একক আবৃত্তি পরিবেশনাও। বহ্নিশিখার শিল্পীদের কণ্ঠে ‘মেঘের ডমরু ঘন বাজে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ আয়োজন।