কিছু কথা টম হ্যাঙ্কসের

টম হ্যাঙ্কস
টম হ্যাঙ্কস
>টম হ্যাঙ্কস তাঁর চরিত্র দিয়ে একেক শ্রেণির দর্শকের মনে একেকভাবে দাগ কেটেছেন। কিন্তু তাঁর মনে দাগ কাটে কোন ছবি? কোন আবেগ দানা বেঁধে থাকে তাঁর হৃদয়ে? তাঁর দর্শন তাঁকে কী শেখায়? আজ জানব এসবই। কারণ সামনেই (৯ জুলাই) এই অস্কারজয়ী অভিনেতার জন্মদিন। তাঁকে নিয়ে লিখেছেন জাহীদ রেজা নূর

টম হ্যাঙ্কসের জীবনে আবেগের মূল্য কতখানি? অনেকেই জানেন না, টম মাঝেমধ্যে একা একা কাঁদেন। কাঁদেন আনন্দ থেকেও। এখন নাতিদের সঙ্গে খেলার সময় দমফাটা হাসিতে মেতে থাকেন। আবার একা থাকার সময় সিনেমা দেখেন যখন, তখনো কখনো কখনো কাঁদতে হয়। এই যেমন একবার দেখছিলেন ১৯৫৭ সালে নির্মিত রুশ চলচ্চিত্র ক্রেইনস আর ফ্লাইং। ‘আমি হু হু করে কেঁদেছিলাম সেই ছবি দেখে। বিশেষ করে যখন বিজয়ের পর সেনারা ফিরে আসছে। জনসমক্ষে আমি তেমন একটা কাঁদি না। কিন্তু একা থাকি যখন, তখন কাঁদি। যখন ঘটনাগুলোর সঙ্গে নিজের জীবনের মিল পাই, তখন কাঁদি।’ 

শুধু কি ক্রেইনস আর ফ্লাইং দেখেই কেঁদেছেন টম হ্যাঙ্কস? আরে না। ২০০১: স্পেস ওডিসি দেখেও চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি তিনি। আটকে রাখতে পারেননি দ্য বেস্ট ইয়ারস অব আওয়ার লাইভস ছবিটি দেখেও। শেষের ছবিটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯৪৯ সালে, কিন্তু টম হ্যাঙ্কসের মনে হয়েছে এ যেন সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত ছবি। আর ট্যাক্সিস্ট? এই ছবি থেকেই টম প্রেমে পড়ে যান স্করসেসের। 

নিজের ছবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো লাগে অ্যাপোলো থারটিন। তবে সেভিং প্রাইভেট রায়ান নিয়েও তাঁর ভালোবাসা আছে। মজার কথা হলো, নিজের করা ছবি একবার দেখার পর দ্বিতীয়বার আর পুরোটা দেখেন না। দেখেন হয়তোবা ছবির কোনো অংশ। 

পরিচালক আর অভিনেতা—টম হ্যাঙ্কসের পরিচয় দুটি। কোন পরিচয়ে কেমন লাগে তাঁর। তিনি তো বলেন, পরিচালনা করতে খুবই ভালো লাগে। অভিনেতা আর পরিচালকের মধ্যে তিনি পার্থক্য দেখেন এক জায়গায়। অভিনেতা হিসেবে যখন ক্যামেরার সামনে তিনি, তখন মাথায় কী আছে, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে না। নিজের কাজটা করে গেলেই হচ্ছে। কিন্তু যখন পরিচালক, তখন নিজের মাথায় যা যা আছে, তার সবই বলতে হচ্ছে সবাইকে। 

টম হ্যাঙ্কস এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘পরিচালক তো নেতা। তাঁকে হতে হয় আত্মবিশ্বাসী। তাঁর সিদ্ধান্তে যে ভুল নেই, সে বিশ্বাস থাকতে হয় তাঁর। চলচ্চিত্রের কোনো এক পর্যায়ে তাঁকে বলতে হয়, “যেমন বলছি, শুধু সে রকমই হবে।” তাহলে পরিচালক তাঁর অধস্তন সবার কাছ থেকে সম্মান পাবেন। তাঁরা সবাই পরিচালকের কথামতোই কাজ করবেন।’ 

খুব পড়তে ভালোবাসেন টম হ্যাঙ্কস। পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়তে গিয়ে মাঝেমধ্যে আবিষ্কার করেন, ‘আরে! বানানো চলচ্চিত্রের চেয়ে বাস্তব জীবনই তো অনেক বেশি আকর্ষণীয়। বাস্তব জীবন থেকে একেবারে প্রস্তুত করা চিত্রনাট্য উঠে আসে।’ 

এখন তো তিনি মহাতারকা। এখন তাঁর ছবি দেখার জন্য লাখ লাখ মানুষ অপেক্ষা করে। কিন্তু একসময় ছিলেন হোটেলের মেসেঞ্জার। সে দিনগুলোর কথা কি মনে পড়ে তাঁর? হ্যাঁ, মনে তো পড়েই। সময় বদলেছে। উনিশ বছর বয়সে তিনি হোটেলের সামান্য মেসেঞ্জার হিসেবে কাজ করেছেন। একবার সিডনি পইটিয়ারকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়েছিলেন। জনপ্রিয় খেলোয়াড়দের স্যুটকেস তুলে দিয়েছেন হোটেল রুমে। সে সময় বকশিশ হিসেবেই পেতেন ১৫–১৬ ডলার, যা সে সময়কার হিসেবে কম ছিল না। 

সাফল্য আর ব্যর্থতা বলতে টম হ্যাঙ্কস আসলে কী বোঝেন? ‘আসলে এটা সাদা-কালোর মতো সহজে আলাদা করা যায় না। সাফল্য হচ্ছে সেই সময়টা, যখন সামনের দরজা দিয়ে না ঢুকে হোটেলে ঢুকতে হচ্ছে পেছনের দরজা দিয়ে, গোপনে। আর ব্যর্থতা হলো, যা করা হয়েছে, তা খুব বেশি ভালো হয়নি। এ জন্য তুমি নিজেই দায়ী। কখনো কখনো খুবই বাজে ছবিতে অভিনয় করেও লাখ লাখ টাকা আয় করা যায়। সেটাও একধরনের সাফল্য। কিন্তু সাফল্য–ব্যর্থতার হিসাব কষে তো আর কাজ করা যাবে না। কাজ আসলে করে যেতে হবে।’ 

শিল্পী কিংবা অভিনেতা, এই পরিচয়টা কেমন দেখেন টম হ্যাঙ্কস? আসলে অভিনয়শিল্পী পরিচয়টা তাঁর জন্য বিশেষ কিছু নয়। এটার ব্যাখ্যাও তিনি দিতে পারেন না। তাঁর মনে হয়, এর চেয়ে সহজ কাজ আর কিছু নেই। পেশাদার অভিনেতা হওয়াটাই ছিল তাঁর নিয়তি।