দুই মলাটে মাসুদ করিমের ৮০০ গান

মাসুদ করিমের লেখা গানের বইয়ের প্রচ্ছদ
মাসুদ করিমের লেখা গানের বইয়ের প্রচ্ছদ

নিভৃতচারী মানুষ ছিলেন মাসুদ করিম। বেশির ভাগ সময় চুপচাপ থাকতেন, কিন্তু মুখে একটা হাসি লেগেই থাকত। পোশাকে-আশাকে ছিলেন পরিচ্ছন্ন। কবিদের বাইরে রোমান্টিক ধারার গান রচনায় তিনি ছিলেন সফল। তেমনি মানুষ হিসেবে তিনি বড় মনের অধিকারী ছিলেন। এখন সময় এসেছে তাঁর কাজ নিয়ে মূল্যায়ন করার।

গীতিকবি মাসুদ করিমকে নিয়ে এই মন্তব্য তাঁর কাছের মানুষদের। মাসুদ করিমের নাম শুনে হয়তো প্রথমে তাঁকে চিনতে একটু ভাবতে হবে। তবে তাঁর লেখা গানের প্রথম কয়েকটা শব্দ শুনলেই কারও সমস্যা হবে না গীতিকার মাসুদ করিমকে চিনতে বা জানতে। তন্দ্রা হারা নয়ন আমার, শক্র তুমি বন্ধু তুমি, সজনী গো ভালোবেসে এত জ্বালা, চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিঁড়ে, আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই, যখন থামবে কোলাহল, সন্ধ্যার ছায়া নামে, তোমরা যারা আজ আমাদের ভাবছ মানুষ কি না, শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাব। মাসুদ করিমের লেখা এসব গান এখনো সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের মুখে মুখে ফেরে।

মাসুদ করিম এখন নেই, দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর কানাডায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন তাঁর সৃষ্টিকর্মে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই তাঁর গান সম্পর্কে জানে না। সে কারণে মাসুদ করিমের স্ত্রী কণ্ঠশিল্পী দিলারা আলো তাঁর লেখা গানগুলো সংগ্রহের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁরই সম্পাদিত মাসুদ করিমের লেখা সহস্রাধিক গানের মধ্য থেকে ৮০০ গান নিয়ে ‘৮০০ গানের সংকলন মাসুদ করিম’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হলো। প্রকাশ করেছে অনন্যা প্রকাশনী।

মাসুদ করিমের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে (বাঁ থেকে) সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, নাট্যব্যক্তিত্ব কেরামত মাওলা, সুরকার শেখ সাদী খান, সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, মাসুদ করিমের স্ত্রী প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী দিলারা আলো ও চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ। ছবি: প্রথম আলো
মাসুদ করিমের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে (বাঁ থেকে) সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, নাট্যব্যক্তিত্ব কেরামত মাওলা, সুরকার শেখ সাদী খান, সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, মাসুদ করিমের স্ত্রী প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী দিলারা আলো ও চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ। ছবি: প্রথম আলো

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চ্যানেল আই ভবনে এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, নাট্যব্যক্তিত্ব কেরামত মাওলা, গীতিকার ও সুরকার শেখ সাদী খান, চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, ব্যান্ডতারকা ফুয়াদ নাসের বাবুসহ বিভিন্ন অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, কোনো কোনো চলচ্চিত্র তাঁর গানের জন্যই খ্যাতি পেয়েছে। শাহনাজ রহমতুল্লাহ, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, বশির আহমেদ, সৈয়দ আব্দুল হাদী, মাহমুদুন্নবী, মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, খোন্দকার ফারুক আহমেদ, কাজী আনোয়ার হোসেন, কাদেরী কিবরিয়া, প্রবাল চৌধুরী, নার্গিস পারভিন প্রমুখ শিল্পী তাঁর লেখা গান গেয়ে বাংলা গানের জগৎকে সমৃদ্ধ করেছেন। ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী শ্যামল মিত্র, ভূপেন হাজারিকা, উদিত নারায়ণ, কুমার শানু, অনুরাধা পাড়োয়াল, ঊষা উত্থুপ প্রমুখ গীতিকবি মাসুদ করিমের অসংখ্য গান করেছেন।

রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত গীতিকার মাসুদ করিমের লেখা আধুনিক, ছায়াছবি, দেশাত্মবোধক, পল্লিগীতিসহ বাংলা গানের বিভিন্ন শাখায় রয়েছে সহস্রাধিক গান।

গীতিকার মাসুদ করিমের জন্ম কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। তিনি বেড়ে উঠেছেন ঢাকাতেই। পরে ধীরে ধীরে কবি ও গীতিকার রূপে প্রতিষ্ঠিত হন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পরে তিনি বেতারে প্রযোজক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। খুব অল্প সময়েই বেতার ও টেলিভিশনের গীতিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তিনি চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য দুবার শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।