সন্ধ্যায় চার দ্রৌপদী আসবেন

‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের চার অভিনেত্রীর সঙ্গে মাসুম রেজা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের চার অভিনেত্রীর সঙ্গে মাসুম রেজা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ভীষণ ব্যস্ত নাট্যকার মাসুম রেজা। কারণ, দুই যুগ পরে তাঁকে মঞ্চে দেখা যাবে। ১২ জুলাই ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের দুটি প্রদর্শনী হবে। সেখানে দ্রোণাচার্য হয়ে আসছেন মাসুম রেজা। নিজের লেখা নাটকটির নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। অভিনয়, নির্দেশনা—সব মিলে দম ফেলার সময় যেন নেই মাসুম রেজার!

২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মঞ্চে নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী হয়। মাঝে বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল নাটকের প্রদর্শনী। নির্দেশক মাসুম রেজা বলেন, ‘এ নাটকটি একটা সময় অনেক জনপ্রিয় ছিল। এমন অনেক দর্শক আছেন, যাঁরা ২০ থেকে ৩০ বারও আমাদের শো দেখেছেন। সেই মানুষগুলোই আমাকে তাগিদ দিয়ে আসছিলেন এত বছর। এরপর ২০১২ সালে দিলীপ যখন মারা গেল, তখন আমরা ভেবে নিয়েছি, এ নাটক আর মঞ্চে তোলা কখনো সম্ভব নয়। কারণ, ওর মতো শক্তিমান অভিনেতা কিংবা একলব্য চরিত্রে অভিনয় করার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যা হোক, এসব দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে দিলীপের শেষ মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা মনে শক্তি জোগাই। সিদ্ধান্ত নিই তাকে স্মরণ করে হলেও নাটকটি ফের মঞ্চে আনা প্রয়োজন।’

‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের একটি দৃশ্য। ফাইল ছবি
‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের একটি দৃশ্য। ফাইল ছবি

সেই দীর্ঘ বিরতি ভেঙে ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে নাটকটি পুনরায় মঞ্চস্থ হয়। এক–দুই করে শততম রজনীর পথে ‘নিত্যপুরাণ’। ১২ জুলাই ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের ৯৯ ও ১০০তম প্রদর্শনী হবে। শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে বিকেল চারটায় ও সন্ধ্যা সাতটায় দুটি প্রদর্শনী হবে।

‘নিত্যপুরাণ’ প্রদর্শনী শেষে নির্দেশক হিসেবে মঞ্চে মাসুম রেজা। ফাইল ছবি
‘নিত্যপুরাণ’ প্রদর্শনী শেষে নির্দেশক হিসেবে মঞ্চে মাসুম রেজা। ফাইল ছবি

আজ মঙ্গলবার দুপুরে যখন মাসুম রেজার সঙ্গে কথা হয়, তখন তিনি বলেন, নিয়মিত মহড়া করে নিজেকে তৈরি করছি। আজ সন্ধ্যা চার দ্রৌপদী আসবেন মহড়ায়। সবাইকে নিয়ে মহড়া হবে। নাটকে চার দ্রৌপদী চরিত্রে অভিনয় করবেন শিরিন খান মনি, নাজনিন হাসান চুমকি, বন্যা মির্জা ও সুষমা সরকার। নাটকে একলব্য চরিত্রে রূপদান করেছেন মামুন চৌধুরী রিপন, ব্যাসদেব চরিত্রে আসিফ হাসান, যুধিষ্ঠিরের চরিত্রে কামাল আহমেদ, ভীমসেন চরিত্রে ফিরোজ আলম, অর্জুনের চরিত্রে লরেন্স উজ্জ্বল গোমেজ, নকুল চরিত্রে হোসাইন নীরব, সহদেবের চরিত্রে মাইনুল হাসান মাঈন, দ্রোণাচার্যের চরিত্রে তিনি নিজে অভিনয় করবেন।

মাসুম রেজা ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটকের মধ্যে রয়েছে ‘বিরসা কাব্য’, ‘নিত্যপুরাণ’, ‘আরজ চরিতামৃত’, ‘জলবালিকা’, ‘শামুকবাস’। টেলিভিশনে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাঁর লেখা ‘রঙের মানুষ’ ও ‘ভবের হাট’। ‘মোল্লাবাড়ির বউ’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার তিনি। নাটকের সঙ্গে মাসুম রেজার সম্পর্ক কৈশোরে, কুষ্টিয়া শহরে, নাটকের দল বোধনের মাধ্যমে। এরপর পরিচয় নাট্যকার সেলিম আল দীনের লেখার সঙ্গে। মাসুম রেজা বলেন, ‘একরকম তাঁকে অনুসরণ করেই নাট্যকার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর “নিত্যপুরাণ’ নাটকে এই প্রথম আমি নিজেই অভিনয় করতে যাচ্ছি।’
মাসুম রেজা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কালীশংকরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই যোগ দেন কুষ্টিয়ার স্থানীয় নাট্যদল বোধনে। শামসুল আলম বকুল, ইশরাত নিশাত, সালাহউদ্দিন লাভলু, তপন দাশ, শিরিন খান মনি, মাসুম রেজা, এনায়েত লিপনসহ আরও কিছু নাটকপাগল কর্মীর সমন্বয়ে ১৯৮৭ সালের জুলাই মাসে দেশ নাটক প্রতিষ্ঠা করেন।

‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের একটি দৃশ্য। ফাইল ছবি
‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের একটি দৃশ্য। ফাইল ছবি

মাসুম রেজার প্রথম নাটক ১৯৭৯ সালে চাঁদ আলীর ওপর রচিত পথনাটক। প্রথম পূর্ণ মঞ্চনাটক হলো ‘বিরসা কাব্য’। তাঁর রচিত প্রথম টেলিভিশন নাটক ‘কৈতর’।

২০০১ সালে দেশ নাটকের প্রযোজনায় তাঁর রচনায় এবং নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয় ‘নিত্যপুরাণ’। এই নাটকে তিনি মহাভারতের চরিত্র একলব্যকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে নিয়ে আসেন। ২০০১ সালে ‘মেঘলা আকাশ’ চলচ্চিত্রের কাহিনি ও সংলাপ রচনা করেন। ২০০৩-০৪ সালে সেলিম আল দীন এবং তাঁর যৌথ রচনায় ‘রঙের মানুষ’ ধারাবাহিক নাটকটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য টেলিভিশন নাটক হলো ‘সেকু সেকান্দর’, ‘ছায়াঘড়ি’, ‘দ্বিচক্রযান’ ও ‘বীজমন্ত্র’।

২০০১ সালের ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মঞ্চে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী হয় ফাইল ছবি
২০০১ সালের ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মঞ্চে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী হয় ফাইল ছবি

২০১৬ সালে মাসুম রেজা টেলিভিশন নাট্যকার সংঘের প্রথম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে দেশ নাটকের প্রযোজনায় মঞ্চে আসে ‘সুরগাও’। এই নাটকের রচনা ও নির্দেশনা দেন মাসুম রেজা।