ছবিটি আয়রন ম্যানেরও!

মার্ভেল–ভক্তদের মন ভেঙেছে গত এপ্রিলে। অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম–এর মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে আয়রন ম্যান, ব্ল্যাক উইডো, ক্যাপ্টেন আমেরিকার মতো প্রিয় চরিত্রগুলো; আর সেই ব্যথায় মলম লাগাতে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে স্পাইডার–ম্যান: ফার ফ্রম হোম। মলমে কি কাজ হলো? সম্ভবত না। খোদ পিটার পার্কার ওরফে স্পাইডার–ম্যানই এই ছবির প্রায় পুরোটাজুড়ে আয়রন ম্যানকে হারানোর শোকে কাতর ছিল। এন্ডগেমের বিভীষিকা ভুলতে সে চেনা শহর থেকে দূরে কোথাও যেতে চেয়েছিল, চেয়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে একটা চমৎকার ছুটি কাটাতে। বোধ করি এই ভাবনা থেকেই ছবির নাম স্পাইডার–ম্যান: ফার ফ্রম হোম।

ভাবছেন ‘স্পয়লার’ দিচ্ছি? মোটেই না। স্পাইডার–ম্যান যে আয়রন ম্যান ওরফে টনি স্টার্ককে হারিয়ে শোকে কাতর, এটা ফার ফ্রম হোম–এর ট্রেলারেই স্পষ্ট বোঝা গেছে। সিনেমাতে শুধু দেখা গেছে সেই শোকের গভীরতা। কিছু কিছু জায়গায় আয়রন ম্যান অর্থাৎ টনি স্টার্ককে ঘিরে (রবার্ট ডাউনি জুনিয়র) স্মৃতিচারণা দর্শককে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে পুরোনো সময়ে। টনিরই দেহরক্ষী ও বন্ধু হ্যাপির (জন ফেভরেয়্যু) উপস্থিতি আরও স্মৃতিকাতর করেছে সবাইকে। হঠাৎ হঠাৎ মনে হয়েছে, এই বুঝি সবাইকে চমকে দিয়ে পর্দায় ধরা দেবেন আয়রন ম্যান। ‘টার্মিনেটর’ আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগারের মতো বলবেন, ‘আই অ্যাম ব্যাক!’ 

স্পাইডার–ম্যান: ফার ফ্রম হোম–এর দৃশ্যে আয়রন ম্যানের গ্রাফিতি, আবহসংগীতে আয়রন ম্যান ছবির সাউন্ডট্র্যাক সংযোজন আর টনি স্টার্কের চশমা মোড়ে মোড়ে একটা শূন্য অনুভূতি দেবে দর্শকদের। কিন্তু কিছু অংশ আবার আশাও জাগাবে। গলার কাছে আয়রন ম্যান না থাকার কষ্টটা দলা পাকাবে, কিন্তু কিশোর পিটার পার্কারের চেষ্টা সেই কষ্টকে ভুলিয়ে দেবে।

ছবিটির গল্প প্রশংসার দাবি রাখে। অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে ‘অ্যাভেঞ্জার্স’–এর মতো বিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজি শেষ হওয়ার পর মার্ভেল হয়তো বিপদে পড়বে, দর্শক হয়তো এই কমিক বইয়ের অতিমানবদের ওপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্স হাল ছাড়েনি। তারা ঠিকই বুঝিয়ে দিয়েছে, দর্শককে কীভাবে ছলে–বলে–কৌশলে ধরে রাখতে হয়, সেটি তারা জানে। শুধু সুপারহিরো নয়, একটি মৌলিক গল্প যে সিনেমার সবচেয়ে বড় ‘হিরো’—স্পাইডার–ম্যান: ফার ফ্রম হোম তা আবার প্রমাণ করেছে। অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম–এর পর যে মার্ভেল–ভক্তদের কল্পনার রাজ্য বিষাদে ভরে গিয়েছিল, তাঁরা প্রাণ খুলে হেসেছেন নতুন ছবিটি দেখে। 

এবার অভিনয়ে আসি। স্পাইডার–ম্যান চরিত্রে টম হল্যান্ড আগের সুনাম ধরে রেখেছেন। ‘মিস্টেরিও’ জেক গিলেনহালও নিরাশ করেননি দর্শকদের। ছবিতে তাঁর নানা রূপ দর্শককে একই সঙ্গে আনন্দ, উল্লাস, বিভীষিকা আবার ভীতির স্বাদও দিয়েছে। এমনকি মিড–ক্রেডিট সিনেও (ছবি শেষ হওয়ার আগমুহূর্তের দৃশ্য) জেক ছিলেন দেখার মতো। একটা চরিত্র যে বিদায় নিয়েও ছবির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে, সেটি এই ছবির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উপলব্ধি করবেন দর্শক। একজন অভিনেতার কথা আলাদা করে না বললেই নয়। অগুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেও জন ফেভরেয়্যুর ‘হ্যাপি’ চরিত্রটি ফার ফ্রম হোমকে অনেকাংশে উপভোগ্য করে তুলেছে। এই অভিনেতা ও নির্মাতার সঙ্গে অ্যাভেঞ্জার্স ফ্র্যাঞ্চাইজির রীতিমতো নাড়ির সম্পর্ক। কেমন করে? আসুন, একটু স্মৃতি ঝালাই করে নিই। অ্যাভেঞ্জার্স ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম ছবি আয়রন ম্যান–এর পরিচালক ও নির্বাহী প্রযোজক এই জন ফেভরেয়্যু। ২০০৮ সালে পুরো মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের শুরুটা তাঁর হাত ধরেই হয়েছিল। তাই এন্ডগেমের মধ্য দিয়ে অনেক প্রিয় চরিত্রের বিদায় ঘটলেও জনের সঙ্গে মার্ভেলের সম্পর্ক এত সহজে শেষ হওয়ার নয়। 

ছবির অন্য অভিনয়শিল্পীরা, যেমন স্যামুয়েল এল জ্যাকসন (নিক ফিউরি), জেনডায়া (মেরি জেন), কোবি স্মুলডার্স (এজেন্ট হিল), জ্যাকব বাটালন (নেড) ছবিকে টেনে নিয়ে গেছে অনেকটা অংশই। 

আবার মনে করিয়ে দিচ্ছি, ছবিটা কিন্তু ‘স্পাইডার–ম্যান’–এর। আর এটাই এই ছবির সবচেয়ে বড় ঘাটতি। কারণ শুরু থেকেই ‘আয়রন ম্যান’ যেভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে স্পাইডার–ম্যানকে ঘিরে রেখেছে, তাতে নতুন দর্শকদের ভুল হতেই পারে। এমনটা কিন্তু এর আগে স্পাইডার–ম্যান: হোমকামিং সিনেমায়ও হয়েছিল। সেবার খোদ ‘আয়রন ম্যান’ টনি স্টার্কই বলেছিলেন, ‘আমি চাই তুমি আমার মতো নয়, আমার চেয়েও সেরা হও।’ কিন্তু নতুন ছবিতে কি সেটা আদৌ হতে পারলেন স্পাইডার–ম্যান? এখনো তো প্রয়াত টনি স্টার্কের ছায়াতেই বড় হচ্ছে শক্তিশালী এই অতিমানব। থাক, কিশোর ‘স্পাইডার–মান’কে আমরা নাহয় আরেকটু সময় দিই। সামনে তো তার আরও ছবি আসছে, তখন দেখা যাবে, কী করে আরেক নায়কের ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে মেলে ধরে সে। হয়তো গল্প তখন আরও জমবে। মার্ভেলের কাছে তো ভালো গল্পের প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।