পরিচালকদেরও পেশা অনিশ্চিত
বেশ কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে সিনেমা নির্মাণ কমছে। এতে করে বিএফডিসিকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের পরিচালকদের সিনেমা নির্মাণও কমে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে যেসব মানুষ পেশা হিসেবে সিনেমা পরিচালনা বেছে নিয়েছিলেন, তাঁদের পেশাও অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পরিচালকদের অনেকেই এখন কাজবিহীন জীবন যাপন করছেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সূত্র বলছে, সমিতির ৩৬৪ জন পূর্ণ সদস্যের মধ্যে এখন মাত্র ১০ থেকে ১৫ জন পরিচালক নিয়মিত ছবি পরিচালনা করছেন। বাকিদের দুয়েকজন বিছিন্নভাবে দুয়েকটি কাজ করলেও বেশির ভাগ পরিচালকের হাতেই কাজ নেই। তাঁদের কারও কারও এখন বিএফডিসির সমিতির কার্যালয়ে গল্পগুজব করে সময় কাটে। কেউ কেউ অন্য পেশায় গিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।
জীবন দিয়ে ভালোবাসি, প্রতিশোধের আগুন, রঙিন সুজন সখি, শেষ ঠিকানা, নিয়তির খেলা প্রভৃতি আলোচিত সিনেমার নির্মাতা শাহ আলম কিরণ। তাঁর শেষ ছবি’ ৭১-এর মা জননী মুক্তি পায় ২০১৪ সালে। দীর্ঘ পাঁচ বছর ছবি নির্মাণ করেননি। কেন—জানতে চাইলে শাহ আলম কিরণ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্রের নানা সমস্যর কারণে অনেক পেশাদার প্রযোজক এখান থেকে সরে গেছেন। তবে পাঁচ বছরে যে দুয়েকজন প্রযোজকের কাজের প্রস্তাব পাইনি, তা নয়। কিন্তু বাজেট স্বল্প, প্রযোজকের পছন্দের শিল্পী নিতে হবে, এসব কারণে কাজ করিনি।’
দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, ছটকু আহমেদ, মনতাজুর রহমান আকবর, সোহানুর রহমান সোহান, এফ আই মানিক, রায়হান মুজিব, বাদল খন্দকার, নাদিম মাহমুদ, শওকত জামিল, মুশফিকুর রহমান গুলজারদের হাতেও দীর্ঘদিন ধরে নতুন ছবি নেই। তাহলে এখানে পেশার জায়গাটা কি অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে না? শাহ আলম কিরণ বলেন, অবশ্যই অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। এটা অস্বীকার করার কোনোই উপায় নেই। এ জন্য এখন কেউ কেউ অন্য পেশাতেও যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
মিয়া বাড়ির চাকর, প্রেমে পড়েছি, ও প্রিয়া তুমি কোথায়, তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা, বলোনা কবুলসহ প্রায় ৫০টি ছবির নির্মাতা শাহাদাৎ হোসেন লিটন। তাঁর সবশেষ ছবি অহংকার। শাকিব-বুবলী অভিনীত ছবিটি ২০১৭ সালে মুক্তি পায়। এরপর আর ছবি নেই তাঁর হাতে। চলচ্চিত্র থেকে সরে গিয়ে তাঁর বোনের গাড়ির শোরুমে বসেছিলেন কিছুদিন। এরপর নিজেই গাড়ির ব্যবসার চেষ্টা করেন। শাহাদাৎ হোসেন লিটন বলেন, ‘এখন মানুষ ঘরে বসেই বড় বাজেটের বিভিন্ন দেশের ভালো মানের ছবি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। আমাদের বাজেট কমে গেছে। কম বাজেটে ভালো ছবি হচ্ছে না। তাই একটা জেনারেশন গ্যাপ হয়ে গেছে।’
এই নির্মাতা আরও বলেন, ‘চলচ্চিত্রের এই দুরবস্থার মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে অন্য ব্যবসার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু সেখানেও গুছিয়ে উঠতে পারছি না। মনে হচ্ছে আবার সিনেমাতেই ফিরতে হবে। কিন্তু সেখানেও ভবিষ্যৎ দেখছি না।’
পরিচালক সাফি উদ্দিন সাফি নির্মাণ করেছেন তোমার জন্য মরতে পারি, প্রেম মানে না বাধা, ও সাথী রে, ঢাকার কিং, মাথা নষ্ট, মেশিনম্যান ইত্যাদি ছবি। বছর তিনেক হলো তাঁর হাতেও নতুন ছবি নেই। সাফি বলেন, আগে সফল পরিচালকেরা তারকা শিল্পীদের নিয়ে ছবি বানিয়েছেন। এখন একমাত্র শাকিব খান তারকা শিল্পী। তাঁর পারিশ্রমিক আকাশছোঁয়া। তাঁকে নিয়ে কাজ করতে গেলে বাজেট আড়াই কোটি। বর্তমান বাজারে আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ করা বিরাট ঝুঁকির ব্যাপার।
এ ব্যাপারে একটু ভিন্নধারার চলচ্চিত্রের পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলেন, সিনেমা পাড়ার হিসাবমতে যদি শত শত পরিচালকের মধ্যে মাত্র ১০–১৫ জন কাজ করে, তাহলে তো এই পেশা শূন্যের কোঠায় চলে গেছে। পুরোপুরিই অনিশ্চিত।
কেয়ামত থেকে কেয়ামত, সে আমার মন কেড়েছে, আমার ঘর আমার বেহেস্ত, অনন্ত ভালোবাসা প্রভৃতি সফল ছবির পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের গত পাঁচ বছরে নতুন কোনো ছবি নেই। সোহান বলেন, পরিচালকের পেশা এখন পুরোপুরি অনিশ্চিত। শত শত পরিচালক পরিবার–পরিজন নিয়ে অনিশ্চিত জীবন যাপন করছেন।