ইউটিউবে 'ভিউ' বেশি হলেই মানসম্মত নয়

এক্স গার্লফ্রেন্ড নাটকের দৃশ্যে আফরান নিশো এবং ‘ঝুম’ গানের দৃশ্যে মিনার। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ইউটিউবে নাটক ৯৩ লাখ ১৬ হাজার ও গান ৩ কোটি ৬১ লাখ ভিউ হয়েছে। তবে গান ও নাটকের ক্ষেত্রে সব সময় ইউটিউব ভিউ মান নির্ধারক নয় বলে মনে করছেন অনেকে
এক্স গার্লফ্রেন্ড নাটকের দৃশ্যে আফরান নিশো এবং ‘ঝুম’ গানের দৃশ্যে মিনার। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ইউটিউবে নাটক ৯৩ লাখ ১৬ হাজার ও গান ৩ কোটি ৬১ লাখ ভিউ হয়েছে। তবে গান ও নাটকের ক্ষেত্রে সব সময় ইউটিউব ভিউ মান নির্ধারক নয় বলে মনে করছেন অনেকে

গান সংগ্রহ করতে কাউকে ‘সিডি কিংবা ক্যাসেটের দোকানে যাচ্ছি’ বলতে শোনা যায় না। তেমনিভাবে নাটক দেখতে সেভাবে টেলিভিশন সেটের সামনে অপেক্ষা করছেন, এমনটাও বলেন না। হাতে থাকা মুঠোফোনের ইউটিউব অপশনে গিয়ে দর্শক কিংবা শ্রোতারা পছন্দের নাটক ও গান খুঁজে নেন। দর্শক–শ্রোতা যত বেশি শোনেন কিংবা দেখেন ততই বাড়ে ‘ভিউ’। কেউ বুস্ট করে ভিউ বাড়ান—এমন খবরও আছে। তাই ডিজিটাল মাধ্যমের এই ভিউ নিয়ে আছে নানা কথা।

কেউ বলছেন, নাটক আর গানে ভিউ বেশি মানেই মানসম্মত নয়। অন্য কেউ বলছেন, ইউটিউব ভিউ মোটেও একটা মানসম্মত কাজের মাপকাঠি হতে পারে না। কোনো নাটক কিংবা গানের ভিউ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মন্তব্যের ঘরে দেখা যায় নেতিবাচক কথা। ভিউয়ের সঙ্গে যখন লাইক–ডিজলাইক ও মন্তব্যে বিষয়টি ইতিবাচক থাকে, তখনই একটি কাজকে মানসম্পন্ন বলা যেতে পারে। ভিউকে কেউ মানসম্মত না বললেও সুনির্দিষ্ট গান, নাটক কিংবা কনটেন্টের জনপ্রিয়তা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

নাটক কিংবা গানের ক্ষেত্রে ইউটিউব ভিউকে মানসম্পন্ন মনে করাটাকে বোকামি মনে করছেন পরিচালক অমিতাভ রেজা। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘বাংলাদেশে গুগলে সবচেয়ে বেশি খোঁজা হয় কোন শব্দটা? সেক্স। গণমানুষ তো কখনোই মানসম্মত জিনিস দেখবে না। যেটা গণ, সেটা কখনোই মানসম্মত হতে পারে না। গণমানুষ যদি মানসম্মত জিনিসই দেখে, দেশে তো এত কোপাকুপি, মারামারি ঘটত না। মানসম্মত হওয়ার কারণেই যদি ভিউ হতো তাহলে ধরে নিতে হবে, এ দেশে মানুষের শিক্ষার মান, মনন, চিন্তা অনেক ওপরে। ইউটিউব ভিউকে স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে নির্ধারণ করাটা বোকামি। এ দেশে কয়জন মানুষ শহীদুল জহির পড়েন?’

নাটক ও গানের ক্ষেত্রে ইউটিউব ভিউকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে চাইছেন পরিচালক মুহাম্মদ মোস্তাফা কামাল রাজ। তিনি বলেন, ‘একটা নাটক কিংবা গান ইউটিউবে তখনই বেশি ভিউ হবে, যখন শিল্পী জনপ্রিয়, তাঁর কাজটি মানসম্মত। কোনো নাটক কিংবা গান ইউটিউবে প্রকাশের পরপরই তাঁর ভক্তরা তাঁদের ফেসবুক শেয়ার করেন। এরপর সেই কনটেন্ট নিয়ে সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ তৈরি হয়। এতেই ভিউ বাড়ে। আমি দেখেছি, অনেকে এটা নেতিবাচকভাবে দেখছেন। আবার সেই তাঁদেরই কোনো নাটক কিংবা গান অনেক ভিউ হয়, তখন নিজেদের ফেসবুকে শেয়ার করে অনুভূতি ব্যক্ত করেন।’

জনপ্রিয় গায়ক ও সংগীত পরিচালক মিনারের গাওয়া কয়েকটি গান ইউটিউবে কোটি ভিউয়ের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। তারপরও ভিউ কোনো শিল্পী কিংবা কনটেন্টের মানদণ্ড হতে পারে না বলে মনে করছেন তিনি। মিনার বলেন, ‘আমার অনেক গান পছন্দ, তা অন্য অনেকের পছন্দ না–ও হতে পারে। গানের ভিউ দিয়ে শিল্পীর মান নির্ধারণ করার যে প্রবণতা, সেটার আমি ঘোর বিরোধী। যাঁরা সংগীত নিয়ে পড়াশোনা করেন বিভিন্ন স্কুল–কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে, তাঁদের কি আমরা ইউটিউব ভিউ দিয়ে যাচাই করব? যে তরুণ বছরের পর বছর পিয়ানো শিখছে, স্টাফ নোটেশন বাজাচ্ছে, ইউটিউবে সে একটা পিয়ানোর ভিডিও আপলোড করল, সেটার ভিউ ১০০ হলো, তার মানে কি এটাই ওই শিল্পীর মানদণ্ড? ইউটিউবকে আমি প্রচারণার একটা মাধ্যম ছাড়া আর কোনোভাবেই দেখছি না।’

গানের ক্ষেত্রে ভিউ টেম্পারিং করে বাড়ানো হয় বলে মনে করছেন গায়ক ও সংগীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদার। তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে ভিউ টেম্পারিং করা হয়। বুস্ট দিয়ে বানানো হয়। যেভাবে ভিউ ব্যাপারটাকে সামনে নিয়ে আসা হয়, এটা অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবোধক। ভিউ বেশি হওয়া মানেই মানসম্মত, এটা আমি মানি না। এই ভিউ নিয়ে সংশয় আছে। গানের মান কিংবা শিল্পীর মান ভালো, মানতে পারছি না।’

ইউটিউব নিয়ে সাত বছর ধরে কাজ করছে কাইনেটিক নেটওয়ার্ক। প্রতিষ্ঠানটির ক্লায়েন্ট সার্ভিস ডিরেক্টর জুয়েল মোর্শেদ বলেন, ‘লাখ–কোটি ভিউ মানেই মানসম্মত সরাসরি বলা যাবে না। মানসম্মত গান, নাটক কিংবা কনটেন্টের ক্ষেত্রে লাইক–ডিজলাইক এবং মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। এই তিনটা বিষয় এক ধারায় চললে সেটাকে আমরা অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট বলি। এই সম্পৃক্ততা যখন অনেক বেশি হয়, তখনই মানসম্মত কাজ বলি। অনেক মানহীন কনটেন্টও ভিউ বেশি হয়।’