মধ্যরাতের শুটিং, দায়ী সব পক্ষ

ঈদের জন্য তৈরি জমিদার নাটকে রিয়াজ ও শবনম ফারিয়া। এ নাটকের শুটিংও চলেছে মধ্যরাত পর্যন্ত
ঈদের জন্য তৈরি জমিদার নাটকে রিয়াজ ও শবনম ফারিয়া। এ নাটকের শুটিংও চলেছে মধ্যরাত পর্যন্ত

টেলিভিশন নাটকের কয়েকটি সংগঠন নিয়ম করেও নিয়মের মধ্যে আনতে পারছে না নাটক ও টেলিছবির শুটিং। এখনো প্রায় শোনা যায়, ‘রাত বাজে দুইটা, এখনো শুটিং করছি।’ কেউবা শুটিং শেষে ভোরে বাসায় ফেরার খবরও জানান। অনেক শিল্পী এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা নিজেদের ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে ভক্তদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন।

অভিনয়শিল্পী ও পরিচালকদের একটা সাধারণ অভিযোগ, বাজেট না থাকায় তিন দিনের নাটক দুই দিনে শেষ করতে হয়। আবার কোনো খণ্ড নাটকের শুটিং এক দিনেও শেষ করতে হয়! রয়েছে পরিচালকদের পরিকল্পনার ঘাটতিও। আলোচনায় উঠে এসেছে, অনেক অভিনয়শিল্পীর অল্প সময়ে অধিক অর্থ লাভের আকাঙ্ক্ষার কথাও।

অভিনয়শিল্পী শবনম ফারিয়ার মতে, অভিনয়টা তো শিল্প। এটা কোনো অবস্থায় সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব না। যদি করাও হয় তাহলে বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে যায় এবং মানসম্পন্ন হয় না। তিনি বলেন, ‘আমার পরিচালক যেভাবে অভিনয় কিংবা অভিব্যক্তি চাইছেন, সেভাবে দিতে পারছি না। আবার দেখা গেল দৃশ্যটাকে নান্দনিক করে ফুটিয়ে তুলতে ঠিকভাবে লাইট করতেও অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।’

বাজেটও এখানে বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। ফারিয়া বলেন, ‘বাজেট না থাকার কারণে এখন দুদিনের মধ্যে নাটকের শুটিং শেষ করতে হয়। একটা নাটক তিন দিন কিংবা চার দিনে করা সম্ভব হলে বেশ আরাম করে কাজটা করা যেত। আমাদের জ্যেষ্ঠ সহশিল্পীদের কাছ থেকে প্রায়ই শুনি, এক ঘণ্টার নাটকের শুটিংয়ে তাঁরা সাত দিনও সময় নিতেন। চার দিন শুটিং করতেন, তার আগে তিন দিন মহড়া করতেন। আমরা তো নাটকে মহড়ার কথা কল্পনাও করতে পারি না। দুদিন আগে স্ক্রিপ্ট হাতে পাই। এমনও হয়, সকালে শুটিংস্পটে এসে স্ক্রিপ্ট হাতে পাই, গল্পটা শুনছি, মাথায় নিচ্ছি। গল্প বুঝে চরিত্রে ঢুকতেও তো সময় লাগে। যদি বাজেট একটু বাড়ে এবং এক ঘণ্টার নাটকের শুটিং এক দিন বাড়ানো সম্ভব হয় তাহলে যে চাপ নিয়ে কাজ করি, তা অনেকটাই কমে যাবে।’

কেউ কেউ এও বলেন, বাংলাদেশের নাটক থেকে দর্শকেরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। শিল্পীদের দিনরাত কাজের ফলে পরের দিনের কাজেও ব্যাঘাত ঘটে। এমনও দেখা যায়, পরের দিনের কাজে শিল্পী মনোযোগ দিতে পারছেন না। শুটিংয়ে যেতেও একটু দেরি করেন।

বিষয়টি নিয়ে চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি সারা রাত ধরে শুটিং করি না। দিনেই করি।’ তবে শুটিংয়ের সময়টা মধ্যরাত কিংবা সারা রাত হওয়ায় কিছু কারণ ব্যাখা করেন তিনি। প্রথমত, এটাকে ট্রেন্ড মনে করছেন তিনি। দ্বিতীয়ত, বেশির ভাগ পরিচালকের নিজেদের পরিচালনা নিয়ে সন্দিহান থাকা এবং তৃতীয়ত, তিন দিনের কাজ দুদিন এবং ক্ষেত্রবিশেষে এক দিনে করাটাকে মনে করছেন তিনি।

‘প্রধান চরিত্রের অভিনয়শিল্পীদের কয়েকজন দেরি করে সেটে যান, যে কারণে শুটিং শেষ করতে রাত হয়। আমি আমার পরিচালকদের বলেও রাখি, সকাল ১০টার মধ্যে সেটে যাব, রাত ৯টায় ছেড়ে দিতে হবে। বড়জোর ১০টা। এতে করে প্রোডাকশন বয়, মেকআপ আটিস্ট থেকে শুরু করে সবাই খুশি থাকেন। সবাই তাড়াতাড়ি কাজ করলে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে পারি। আমাদের শিল্পীদের অনেকে দুপুর ১২টা, ১টা কিংবা ২টা এমনকি ৩টায়ও সেটে যান। আবার রাত ২টা ৩টা পর্যন্ত কাজ করেন। এমনকি রাত শেষেও শুটিংস্পটে। এতে করে পরদিন শুটিংয়ে যেতে সমস্যা হয়।’ বললেন চঞ্চল চৌধুরী।

এটার সমাধান মনে করেন চঞ্চল এভাবে, ‘যাঁদের নামে নাটক কিংবা টেলিছবি চলছে, এই ধরনের শিল্পীর সংখ্যা ২০–৩০ জন। তাঁরা যদি মনে করেন, আমি আজেবাজে নাটকে অভিনয় করব না, অযোগ্য পরিচালকের কাজ করব না, ভালো স্ক্রিপ্ট ছাড়া কাজ করব না, তাহলে আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রির চিত্রটা বদলে যাবে।’

অভিনয়শিল্পী মেহজাবীন বললেন, ‘আমাকে এই ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে, বৃষ্টির কারণে। পরিচালকদের পরিকল্পনায় ঘাটতি থাকে। ঢাকা শহরে শুটিংয়ের ক্ষেত্রে লোকেশনের বৈচিত্র্য থাকলেও জ্যামের কারণে নির্ধারিত শুটিংস্পটে পৌঁছাতে দেরি হয়। পরিচালক বলেন, বাজেট নাই। এক দিনে নাটকের শুটিংটা শেষ করে দিতে হবে। কখনো আবার দুই দিনের বেশি শুটিং করা সম্ভব হয় না। একটা অস্থির সময়ের মধ্যে কাজ করছি।’

ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিকেরও জমিদার নাটকটি সম্প্রতি মধ্যরাত পর্যন্ত শুটিং হয়। তিনি বলেন, ‘আমার এই নাটকের শুটিং বৃষ্টির কারণে দেরি হয়। তবে মধ্যরাত পর্যন্ত শুটিংয়ের বেশ কিছু অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। আমরা সাংগঠনিকভাবেও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। তবে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা, নাটকের বাজেট বাড়াতে হবে। আগের মতো তিন দিনে নাটকের কাজ করলে মানও ঠিক থাকবে, শিল্পীদেরও রাত জেগে কাজ করতে হবে না।