অনুদানের দুটি ছবি দুরন্ত টিভিতে

শিশুতোষ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাধো’
শিশুতোষ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাধো’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনায় নির্মিত দুটি শিশুতোষ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবার দেখা যাবে দুরন্ত টিভিতে। আগামী বুধবার বাইশে শ্রাবণ। রবীন্দ্রমহাপ্রয়াণ দিবস উপলক্ষে সেদিন দুরন্ত টিভিতে সম্প্রচার করা হবে শিশুতোষ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাধো’ আর ‘ডাকঘর’। ‘মাধো’ দেখা যাবে বুধবার রাত ১০টায়, এরপরই শুরু হবে ‘ডাকঘর’। এই দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আবার দেখা যাবে পরদিন বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায়।

শিশুতোষ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র  ‘ডাকঘর’-এর দৃশ্য
শিশুতোষ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ডাকঘর’-এর দৃশ্য

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মাধো’ কবিতা অবলম্বনে তৈরি হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাধো’। পরিচালনা করেছেন সুমনা সিদ্দিকী। চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন অলোক বসু। ‘মাধো’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছড়ার ছবি’ গ্রন্থের একটি কবিতা। চলচ্চিত্রের কাহিনি তৈরি হয়েছে ‘মাধো’কে নিয়ে। এই চলচ্চিত্রে পরিণত বয়সের মাধোর দৃষ্টিকোণ থেকে কাহিনি শুরু হয়। পরিণত মাধোর উপলব্ধিতে ধরা দেয় শৈশবের মাধো। বর্তমানের মাধো পাটকলে কাজ করে। শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে পাটকল বন্ধ। অবসর কাটে না, তাই মাধো নদীর ঘাটে বসে থাকে। একদিন নদী পার হয়ে একটা কুকুর তার ঘাটের দিকে আসতে দেখে মাধোর ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। তারও এমন একটা কুকুর ছিল। নাম ‘বটু’। বটুকে নিয়েই কাটত তার শৈশবের সারা বেলা। এই কুকুরকে দেখে একে একে তার শৈশবের সব কথা মনে পড়ে, নস্টালজিয়ায় ভুগতে থাকে সে। মনে পড়ে বাবা-মায়ের কথা, ভিটেমাটির কথা। মাধো নিজ ভিটার উদ্দেশে রওনা হয়।

‘মাধো’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন রাইয়ান, মাজনুন মিজান, আজাদ আবুল কালাম, নাজনীন হাসান চুমকী, এস এম মহসিন, অলোক বসু, কাজী উজ্জ্বল, জয়েৎ কল্যাণ, মাহিন, মাহী রহমান ধ্রুব, আরিয়ান, প্রিয়ন্তু, ঋদ্ধ প্রতীম, দিব্যময় দেশ প্রমুখ। চিত্রগ্রহণ করেছেন আজিমুল হক আরজু, সংগীত পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেছেন ফোয়াদ নাসের বাবু।

‘মাধো’ চলচ্চিত্রের দৃশ্য
‘মাধো’ চলচ্চিত্রের দৃশ্য

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটক অবলম্বনে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ডাকঘর’ পরিচালনা করেছেন লুসি তৃপ্তি গোমেজ। চিত্রনাট্যও তিনিই লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ডাকঘর’ নাটকটি রচনা করেন ১৯১২ সালে। এই নাটকে তিনি প্রকৃতির মাঝেই মানুষের নিরন্তর মুক্তির কথা বলেছেন রূপকের মাধ্যমে। গল্পটি যাকে ঘিরে, তাঁর নাম অমল, বয়স সাত বা আট বছর। পিতৃ-মাতৃহীন বালক দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে। কবিরাজ বলেছেন, বেঁচে থাকবার একমাত্র উপায় ‘শরতের রোদ–হাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখা।’ মাধব দত্ত ও তাঁর স্ত্রী তাই পোষ্যপুত্র অমলকে ঘরের মধ্যে আগলে রাখে, ঘর থেকে বের হতে দেন না।

অমলকে তাই ঘরের জানালা দিয়ে বাইরের আলো ঝলমলে পৃথিবী দেখতে হয়। আর সে মনে মনে ভাবে, সেরে উঠলে সেও যাবে কাজ খোঁজা লোকটার মতো কাজ খুঁজতে। ঝরনার ধারে পা ডুবিয়ে ঝরনার জলে ছাতু মেখে খাবে। কিংবা দইওয়ালার সঙ্গে চলে যাবে তাঁদের গ্রামে, সারা দিন দই বিক্রি করবে দূর গ্রামে গ্রামে। আর সুধার জন্য উঁচু ডাল থেকে ফুল পেড়ে দিতেও তাঁর আপত্তি নেই। তা না হলে রাজার ডাকঘরের ডাকহরকরা হবে, পথে পথে, দেশে দেশে লোকের চিঠি বিলি করে বেড়াবে।

‘ডাকঘর’ চলচ্চিত্রের দৃশ্য
‘ডাকঘর’ চলচ্চিত্রের দৃশ্য

অমলের জানালার সামনেই রাজার নতুন ডাকঘর বসেছে। অমলের বন্ধু বলেছে, রাজার কাছ থেকে অমলের নামে চিঠি আসবে। অমল সে চিঠির জন্য অপেক্ষা করে। এদিন সত্যি সত্যি ঘরের দরজা ভেঙে রাজা আসার খবর আসে। রাজা তাঁর রাজকবিরাজকে পাঠিয়ে দিয়েছেন অমলের জন্য। রাজকবিরাজ এসে বন্ধ দরজা–জানালা খুলে ফেলতে বলেন, যেন তারার আলো এসে পড়তে পারে অমলের চোখে আর কিছুক্ষণের মধ্যে অমল ঘুমিয়ে যায়। অমলের ক্ষুদ্র জীবন মিশে যায় অনন্ত জীবনে।

‘ডাকঘর’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন মাহ্দী আমীন আশরাফ শ্রাবণ, জাহাঙ্গীর আলম, ঝুনা চৌধুরী, খালিদ মাহবুব তূর্য, মো. ইকবাল হোসেন, শরীফ হোসেন ইমন, মাহমুদুল ইসলাম মিঠু, সৌমিত্র দেব, সতেজ চৌধুরী, অপূর্ব রূপকথা, সাদিয়া আফরোজ শিল্পী প্রমুখ।