ভারতকে 'না' বনাম পাকিস্তানকে 'না'

পাকিস্তানের প্রেক্ষাগৃহে বলিউডের ছবি, টেলিভিশনে ভারতীয় সিরিয়াল, চলচ্চিত্র বা অন্য কোনো কনটেন্ট চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে
পাকিস্তানের প্রেক্ষাগৃহে বলিউডের ছবি, টেলিভিশনে ভারতীয় সিরিয়াল, চলচ্চিত্র বা অন্য কোনো কনটেন্ট চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে

এ ঘটনা এবারই প্রথম নয়, এর আগেও অনেকবার ভারতীয় ছবি নিষিদ্ধ করেছে পাকিস্তান। আর ভারতও পাকিস্তানি শিল্পীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যেন পাকিস্তানি শিল্পীরা আর পা রাখতে না পারেন বলিউডে। কিন্তু এবারে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবারও নতুন সংকটের মুখোমুখি। আয়োজন করে পাকিস্তানে চলছে ‘ভারতকে না বলুন’ প্রচারণা। থেমে নেই ভারতও। অল ইন্ডিয়ান সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইসিডব্লিউএ) থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বরাবর আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে। যার মূল বক্তব্য, ‘পাকিস্তানকে না বলুন। পাকিস্তানি শিল্পীদের কঠোরভাবে বর্জন করুন।’ অর্থাৎ পাকিস্তান ও ভারতজুড়ে চলচ্চিত্রশিল্পে চলছে যথাক্রমে ‘ভারতকে না বলুন’ বনাম ‘পাকিস্তানকে না বলুন’ আন্দোলন!

ঘটনার শুরু অনেক আগে। সেই ১৯৪৭ সালেই আজকের ঘটনার বীজ বপন করা। ভারতের ১৯৫০ সালের সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী বিশেষ মর্যাদার অধিকারী জম্মু ও কাশ্মীর। কিন্তু এই ধারা নিয়ে টানাহেঁচড়া কম হয়নি। এবার লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়, এই ধারা বিলুপ্ত করে এ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করবে কেবল ভারত।

পররাষ্ট্র, যোগাযোগ ও প্রতিরক্ষা ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ওই রাজ্যকে দেওয়া হয়েছিল। তাদের আলাদা পতাকা ছিল। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আলাদা সংবিধান ছিল। কালে কালে সব হারিয়ে অবশিষ্ট ছিল সাংবিধানিক ধারা ও কিছু বিশেষ ক্ষমতা। ৫ আগস্ট সেটাও নিয়ে নেওয়া হলো। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হওয়ার ফলে ক্ষমতা হারিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর। জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ এখন ভারতের দুই রাজ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। ভারতের এ সিদ্ধান্তকে পাকিস্তান ‘একতরফা’ ও ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা দিয়েছে।

গত রোববার থেকেই কাশ্মীরের ইন্টারনেট, টেলিফোন লাইন, মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। সেই ধারা ভেঙে মিছিলের চেষ্টার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহত হন। আহত হয়েছেন শতাধিক। চারপাশে আতঙ্ক আর থমথমে পরিস্থিতি। চলছে গণগ্রেপ্তার। নিউইয়র্ক টাইমস এই মুহূর্তে কাশ্মীরকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা’ বলে আখ্যায়িত করেছে। আর এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত অবনতি ঘটেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের।

৭ আগস্ট ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়াকে বহিষ্কার করেছে পাকিস্তান। বাণিজ্য, কূটনীতি, রেল যোগাযোগের পর এবার সব ধরনের সাংস্কৃতিক লেনদেনও বন্ধ করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তথ্য ও প্রচারণাবিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা ফিরদাউস আশিক আওয়ান টুইটারে লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের কোনো হলে বলিউডের ছবি চলবে না। শুধু তা-ই নয়, টেলিভিশনেও কোনো ভারতীয় সিরিয়াল, চলচ্চিত্র বা অন্য কোনো কনটেন্ট চালানো হবে না।’

অন্যদিকে এর বিপরীতে ভারতের এআইসিডব্লিউএ পাকিস্তানি শিল্পী ও কূটনীতিকদের নিষিদ্ধ করেছে। সব বাণিজ্যিক ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতি ঘটাতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠিয়েছেন। অল ইন্ডিয়ান সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুরেশ গুপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভারতীয় জনগণের পক্ষ থেকে এ অনুরোধ করেছেন।