ঈদের ছবির বাধা বৃষ্টি, তবু আশায় হলমালিকেরা

যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসের সামনে সিনেমাপ্রেমীরা
যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসের সামনে সিনেমাপ্রেমীরা

ডেঙ্গুর আতঙ্ক থেকে দর্শকদের আশ্বস্ত করতে পারলেও ঈদের সময়টায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পুরোপুরি জমতে দেয়নি ঢাকার প্রেক্ষাগৃহ। বৃষ্টি সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহমুখী হতে দেয়নি। তবে প্রেক্ষাগৃহের মালিকদের আশাবাদ, শুক্রবার থেকে চিত্রটা পাল্টে যেতে পারে।

সারা দেশের ১৫৪টি ও ঢাকার ২১টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে জাকির হোসেন রাজুর মনের মতো মানুষ পাইলাম না। অন্যদিকে সারা দেশের ৫৩টি প্রেক্ষাগৃহ ও ঢাকার ৬টি প্রেক্ষাগৃহে রাজা চন্দের বেপরোয়া মুক্তি পেয়েছে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি ও প্রেক্ষাগৃহের মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এবারের ঈদের ছবি এখনো জমে ওঠেনি।

ঈদে মুক্তি পাওয়া মনের মতো মানুষ পাইলাম না ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও বুবলী। আর বেপরোয়া ছবিতে অভিনয় করেছেন রোশান ও ববি। মুক্তির আগে ছবি দুটির প্রচারণা দর্শকদের আগ্রহকে উসকে দিতে পারেনি বলেও মত দিয়েছেন অনেকে।

ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সে ঈদের দুটি ছবিই মুক্তি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাগৃহে দুটি ছবির প্রতিদিন চারটি করে শো দেখার সুযোগ পাচ্ছেন দর্শকেরা। প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আজ পর্যন্ত মনের মতো মানুষ পাইলাম না ৩৯ শতাংশ এবং বেপরোয়া ২৮ শতাংশ ব্যবসা করেছে; ঈদের ছবি হিসেবে যা মোটেও সন্তুষ্ট হওয়ার মতো না। অনেকে বৃষ্টির দোহাই দিচ্ছেন, কিন্তু এর মধ্যেই তো আমাদের প্রেক্ষাগৃহে হলিউডের যেসব ছবি মুক্তি পেয়েছে, সেগুলোর কালকেরও (আজ বৃহস্পতিবার) কোনো টিকিট নেই। আমাদের দেশের ছবি নিয়ে ভালোভাবে ভাবার সময় এসেছে।’

যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার সিনেমাসে ঈদে মুক্তি পাওয়া দুটি সিনেমার ব্যবসা নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্টির কথা জানালেন প্রতিষ্ঠানটির বিপণন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। এই প্রেক্ষাগৃহে বেপরোয়ার দুটি এবং মনের মতো মানুষ পাইলাম নার তিনটি করে শো দেখছেন দর্শকেরা। মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ কথা ঠিক, হলিউডের ছবির তুলনায় দেশের সিনেমার দর্শকসংখ্যা কম। আমাদের ব্যবসায়িক জায়গা থেকে প্রত্যাশা আরও বেশি ছিল। তারপরও এই মুহূর্তে এতেই সন্তুষ্ট। ঢাকায় মানুষ ফেরা শুরু করলে এই দৃশ্য পাল্টাবে বলে আশা করছি।’

যমুনা ব্লকবাস্টার প্রেক্ষাগৃহে গত মঙ্গলবার বন্ধুদের নিয়ে বাংলা সিনেমা দেখতে এসেছিলেন বাড্ডার শহীদুল ইসলাম। দুই দলে ভাগ হয়ে সাত বন্ধু দুটি সিনেমাই দেখেছেন। কেউ শাকিব-বুবলীতে তাঁদের মুগ্ধতার কথা, আবার কেউ নতুন নায়ক হিসেবে রোশানেরও প্রশংসা করেন। ববিকেও ভালো লেগেছে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার শ্যামলী প্রেক্ষাগৃহের সামনে কথা হয় বিভিন্ন বয়সী কয়েকজন মানুষের সঙ্গে। মৌসুমী আক্তার তাঁর স্বামীর সঙ্গে ছবি দেখতে এসেছেন। বললেন, ‘দেশপ্রেমিক শাকিব খানকে দেখলাম। এই ছবি থেইকা অনেক কিছু শিখনের আছে।’

১ হাজার ৫ আসনের জোনাকী প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন জানান, ঈদের দিন দর্শক কম ছিলেন। তবে দ্বিতীয় দিন আবার বেড়েছে। প্রত্যাশা মেটাতে না পারলেও একেবারে খারাপ বলা যাবে না।

মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে মনের মতো মানুষ পাইলাম না। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতিও। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো শো হাউসফুল যায়নি। ১ হাজার ২০০ আসনের এই প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি নিয়ে দর্শকেরা মোটামুটি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ঈদের প্রথম সপ্তাহে তো দর্শক একটু কম থাকেন।’

নিজের প্রেক্ষাগৃহের বাইরে ঢাকার অন্য প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া ছবির মধ্যে বেপরোয়াও ব্যবসায়িকভাবে সন্তুষ্ট করতে পারেনি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদকে। তবে নতুন নায়ক রোশানের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী এই প্রযোজক।

বলাকা প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক এস এম শাহীন বলেন, ‘ঈদের সময়টায় সাধারণত সন্ধ্যার শোতে দর্শকসমাগম থাকে বেশি। কিন্তু এবার বৃষ্টি পুরোপুরি পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। তা ছাড়া ঢাকায় মানুষও কম। আমাদের আগের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দ্বিতীয় সপ্তাহে জমবে।’