চলচ্চিত্র নিয়ে যত আশা

সিয়াম আহমেদ, আকরাম খান, সাদিয়া খালিদ, আমিতাভ রেজা চৌধুরী, কামার আহমাদ সাইমন ও বেলায়াত হোসেন মামুন
সিয়াম আহমেদ, আকরাম খান, সাদিয়া খালিদ, আমিতাভ রেজা চৌধুরী, কামার আহমাদ সাইমন ও বেলায়াত হোসেন মামুন

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে হতাশা দানা বাঁধতে বাঁধতে তা মোটামুটি দানবের আকৃতি ধারণ করেছে। সমস্যা, অভিযোগ অনেক। দর্শক হলে সিনেমা দেখতে যায় না। ভালো ছবি নির্মিত হয় না। যা নির্মিত হয়, তা দর্শক পর্যন্ত পৌঁছায় না। যদিও পৌঁছায়, সেই লাভের গুড় প্রায় পুরোটাই চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পেটে। আমাদের গল্পের অভাব নেই। ইউরোপীয় চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির কাছে নাকি বাংলাদেশ গল্পের আধার। কিন্তু আমাদের চলচ্চিত্রে সেসব গল্প বলা হয় না।

দু–একটা ছবি মাঝেমধ্যে সিনেমা হলের দৃশ্যপট বদলে দেয় বটে, ভালো ব্যবসাও করে; কিন্তু ঘুণে খাওয়া আর ধসে পড়া ব্যবস্থার কারণে প্রযোজক, পরিচালক বা শিল্পীরা লাভবান হন না। কমে গেছে চলচ্চিত্র, প্রেক্ষাগৃহ, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলীর সংখ্যা—সবই। বাংলাদেশে মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম অনেক বেশি। তাই ভালো চলচ্চিত্র হওয়া কঠিন। পেছাতে পেছাতে এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর পেছানোর সুযোগ নেই। এবার তাই সামনে এগোনোর পালা।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে হতাশার শেষ নেই, এটা সত্যি। আমাদের হল নেই, ছবি নেই, ছবিতে গল্প নেই, বাজেট নেই, পরিচালক নেই, শিল্পী নেই, ভালো লোকেশন নেই, প্রযুক্তি নেই। এই নেই নেই নেই-এর দুষ্টচক্রে যেন আটকা পড়েছে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র। এ যেন হতাশার এক চোরাবালি। কিন্তু সেখান থেকেও উদ্ধার পাওয়ার উপায় আছে। মুদ্রার এক পিঠে যত হতাশা, অপর পাশে উঁকি দিচ্ছে ঠিক ততটাই আশা আর সুযোগ।

এবার মুদ্রার উল্টো পিঠের সেসব আশার কথা বলেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, সমালোচক, গবেষক, শিক্ষক, শিল্পী ও প্রদর্শকেরা। অনেক হয়েছে, এবার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। সেই ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে, কোথায় করতে হবে, কেন করতে হবে—সেসব বলেছেন চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। হতাশার ভেতর ডুবে থাকা আশা আর সুযোগগুলো খুঁজে খুঁজে বের করেছেন তাঁরা। সেসব নিয়েই এবারের আয়োজন।

ধ্বংস হওয়ার কোনো সুযোগ নেই: সিয়াম আহমেদ
‘পোড়ামন টু’ (২০১৮), ‘দহন’ (২০১৮), ‘ফাগুন হাওয়ায়’–এর (২০১৯) মতো দর্শকনন্দিত চলচ্চিত্রের অভিনেতা সিয়াম আহমেদ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে খুবই আশাবাদী। তিনি মনে করেন, গ্লাসটা অর্ধেক পূর্ণ। সম্পূর্ণ করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাঁর মতে, ১৬ কোটি মানুষের একটা অন্যতম মৌলিক চাহিদা হলো বিনোদন। আর সেখানে চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার আছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে বিনোদন দেওয়ার সেই সুযোগ, ফাঁকা জায়গাটা নিতে হবে, কাজে লাগাতে হবে। সিয়াম আহমেদ স্বীকার করেন, ‘আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই এখন হয় ধ্বংস হয়ে যেতে হবে, নতুবা পুনর্জাগরণ হবে। কিন্তু ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের যে পুনর্জাগরণ ঘটবে, তাঁর ইঙ্গিত মিলছে বলেই মনে করেন জনপ্রিয় এই তারকা।

সিয়াম আহমেদ বলেন, ‘কিছুদিন আগেও আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কথা উঠলেই বন্ধুমহল নাক সিটকাত। কিন্তু এখন তারাই বলে, “ভালো একটা ছবি আসছে, চল সবাই মিলে দেখে আসি।” ১০ বছর আগেও কিন্তু এমন অবস্থা ছিল না। এখন তো বছরে তিন থেকে চারটা ভালো ছবি আসছে। এর ভেতর দু–তিনটা ভালো ব্যবসাও করছে। চলচ্চিত্রের লেখচিত্র ক্রমে ওপরের দিকে যাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, এই সংখ্যাটা বাড়বে। আমি নিজেই অনেক ভালো কাজের প্রস্তাব পাচ্ছি।’

সাধারণ মানুষের হাতে প্রযুক্তি: আকরাম খান
প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের হাতে এসেছে। সেই সঙ্গে প্রযুক্তির একটা গণতন্ত্রায়ণ ঘটেছে। বিষয়টিকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া ‘খাঁচা’ (২০১৭) ও ‘ঘাসফুল’ (২০১৫) ছবির পরিচালক আকরাম খান। বললেন ফরাসি চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা জ্যঁ-লুক গদারের উক্তি, সিনেমা যখন কাগজ–কলমের মতো সস্তা হয়ে যাবে, তখন ‘সৎ চলচ্চিত্র’ বানানোর সুযোগ ও সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তাই প্রযুক্তির সহজলভ্যতাকে দারুণ সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন আকরাম খান। তিনি আরও বলেন, ‘চলচ্চিত্র একাডেমিক জায়গায় চলে আসায় এটি প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি যে প্রতিষ্ঠিত নয়, এটিকেও ইতিবাচকভাবে দেখছেন তিনি।’ তাঁর মতে, প্রাতিষ্ঠানিক জায়গায় যেহেতু যায়নি, তাই কোনো একটা নির্দিষ্ট মতাদর্শিক বা ধারার বদলে বৈচিত্র্যময় ও নানা জীবনবোধের ছবি নির্মিত হচ্ছে এবং হবে।

এই সংকট কেটে যাবে: বিধান রিবেরু
চলচ্চিত্রবিষয়ক লেখক বিধান রিবেরুর মতো, সমাজে যখন কোনো সংকট তৈরি হয়, তখন সমাধানও তার ভেতরেই নিহিত থাকে। তরুণেরা এই সংকট নিয়ে ভাবছে, আর সেখান থেকেই উত্তরণের উপায় বের হয়ে আসছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম স্কুল হচ্ছে। সেখানে ফিল্ম ক্লাব, গোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে। তারা চলচ্চিত্রের চর্চা করছে। দল বেঁধে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানাচ্ছে। ক্যামেরা না থাকলে মোবাইলেই বানাচ্ছে। নিয়মিত বিদেশে ছবি যাচ্ছে। পুরস্কারও নিয়ে আসছে। সময় লাগবে, তবে এই সংকট কেটে যাবে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে ভাবতে হবে: কামার আহমাদ সাইমন
অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়া নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমনের একটা চরিত্র একবার বলেছিল, ‘যার স্বপ্ন দেখার সাহস নেই, তার বেঁচে থাকার অধিকার নেই।’ কথাটা মনে রেখেই তিনি আশাবাদী। সেই আশা নিয়েই তিনি প্রতিনিয়ত নিজের মাটির গল্প নিজের ভাষায় বলেন। সেই খোঁজেই ‘একটি সুতার জবানবন্দি’ বানিয়েছেন, ‘অন্যদিন’-এর পেছনে ছুটছেন, ‘শিকলবাহা’র স্ক্রিপ্ট নতুন করে লিখছেন। তবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষিত, তরুণ আর মেধাবীদের আরও বেশি করে চলচ্চিত্রে আসতে হবে। যার কিছু হবে না, সে বানাবে সিনেমা—এই ধারণা থেকে বের হয়ে সিনেমার সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে ভাবতে হবে। সিনেমা একটা জাতির স্মৃতি তৈরি করে। জাতির স্মৃতি রক্ষার দায়িত্ব যেন আমরা যার–তার হাতে তুলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে না রাখি।’

অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে: অমিতাভ রেজা চৌধুরী
জাতীয় পুরস্কার পাওয়া গুণী এই নির্মাতা ছোট্ট করে বলেন, ডিজিটাল মাধ্যম নির্মাতাদের জন্য দুর্দান্ত একটা জায়গা। নির্মাতাদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের এই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। তাঁদের এসব মাধ্যমনির্ভর কনটেন্ট নির্মাণ করতে হবে। এখানে যেমন কাজের স্বাধীনতা আছে, তেমনি অন্য কোনো ঝুঁকিও নেই।’

কিছু মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ করছে: বিজন ইমতিয়াজ
‘মাটির প্রজার দেশে’ (২০১৮) ছবির পরিচালক বিজন ইমতিয়াজ পড়াশোনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে, স্কুল অব থিয়েটার, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে। এর আগে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমা থেকে। তিনি কোনো আশার মরীচিকায় বিশ্বাস করতে রাজি নন। তাঁর মতে, কিছু মানুষ এখন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। অন্যরা কী করছে, কেন করছে, কী ভালো হচ্ছে, কী খারাপ হচ্ছে—এ ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই। তারা সম্মিলিতভাবে অন্য কোনো কিছু না ভাবে শুধু মন দিয়ে নিজেদের কাজটা ভালোভাবে করে যাবে। তবেই পরিবর্তন আসবে।

অচিরেই বদলাবে এই অচলাবস্থা: জাকির হোসেন রাজু
চলচ্চিত্রবিষয়ক শিক্ষক ও গবেষক জাকির হোসেন রাজু বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে আশাবাদী। তবে আলাপের শুরুতে বলেছেন, কোনো তরুণ যদি পাত্রী দেখতে গিয়ে বলে সে নির্মাতা, তাহলে সেখানে বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যদিও তিনি বিশ্বাস করেন, অচিরেই বদলাবে এই অচলাবস্থা। বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ফান্ড জোগাড় করছে। সেসব ছবি আন্তর্জাতিকভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে। আর প্রশংসাও কুড়াচ্ছে। নিয়মিত যদি এই অনুশীলন চলে, তাহলে একটা পরিবর্তন আসবেই। চলচ্চিত্রকে জাতীয় পর্যায় থেকে বের করে বহুজাতিক ও আন্তর্জাতিক করে তুলতে হবে।

জাকির হোসেন রাজু বলেন, ‘চলচ্চিত্র হতে পারে “সফট টুলস”। এই “সফট পাওয়ার” হতে পারে বৈদেশিক কূটনীতির মাধ্যম। যেমন চীনের জনগণ ভারতীয় ছবি দেখে। এর মাধ্যমে তারা ভারতকে জানে। আমরা যেমন চীন, কোরিয়া, ইরানের ছবি দেখে দেশগুলো সম্পর্কে জানি, সেই দেশের ইতিহাস আর দেশের মানুষ সম্পর্কে জানি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি প্রবাসী রয়েছেন। তাঁরাও দেশের সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের তথ্য ও প্রযুক্তির (সফটওয়্যার, অ্যাপস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রভৃতির) সঙ্গে চলচ্চিত্রের সম্মিলন ঘটিয়ে বড় পরিসরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে পথ হাঁটতে হবে। আমি মোটেও হতাশ নই। আমার ছাত্ররাই সেই সম্ভাবনার ধারক ও বাহক।’

সম্ভাবনার জোয়ার চলছে: সাদিয়া খালিদ
সাদিয়া খালিদ পাঁচটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইউসিএলএ থেকে ডিপ্লোমা শেষ করে হলিউডে কিছুদিন কাজ করেছেন। বাংলাদেশের নারী হিসেবে তিনিই প্রথম এ বছর ৭২তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের ফিপরেস্কি বিভাগে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাদিয়া খালিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে একটা সম্ভাবনার জোয়ার চলছে। আমাদের দেশে এখন এমন অনেক উদীয়মান চলচ্চিত্র নির্মাতা আছেন, যাঁরা নিজেদের কাজ দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাচ্ছেন। মাহাদী হাসানের ছবি “স্যান্ড সিটি” কানের লা ফেব্রিকে গিয়েছে। ভবিষ্যতে আমাদের ছবি “বিগ থ্রি”তে (কান, ভেনিস ও বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব) অংশ নেবে। “কমলা রকেট” ছবির পরিচালক নূর ইমরান জানিয়েছেন, তাঁর ছবিটি লগ্নি করা অর্থের দ্বিগুণ ব্যবসা করেছে। আমাদের তরুণ নারী নির্মাতাদের মধ্যে তাসমিয়াহ আফরিন, সেঁজুতি টুসিদের কাজে শৈল্পিক রুচির ছাপ পাই। এই পথচলা অব্যাহত থাকলে আমদেরও নিয়মিত ভালো ছবি হবে।’

আমি আশাবাদী: আরিফুর রহমান
গুপী বাঘা প্রোডাকশনস লিমিটেডের একজন কর্ণধার ও নির্মাতা আরিফুর রহমান বুসান এশিয়ান ফিল্ম স্কুল থেকে প্রযোজনা ও পরিচালনা বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। প্রযোজনা করেছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত একাধিক চলচ্চিত্র। তিনি প্রচলিত বাণিজ্যিক ছবি নিয়ে কোনো আশা দেখেন না। ইন্টারনেটের এই যুগে মানুষের বিনোদনের মাধ্যম অনেক বেড়ে গেছে। তাই মানুষকে হলমুখী করতে হল সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন। কেবল নতুন প্রোজেক্টর লাগালেই চলবে না, সিট ঠিক করতে হবে, ফুডকোর্ট থাকতে হবে, অনলাইন টিকেটিং ব্যবস্থা থাকতে হবে! মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে স্বাধীন গল্পনির্ভর ছবি, যেমন: ‘মাটির প্রজার দেশে’, ‘লাইভ ফর্ম ঢাকা’, ‘জালালের গল্প’, ‘আন্ডার কন্সট্রাকশন’, ‘খাঁচা’ বা ‘টেলিভিশন’-এর মতো চলচ্চিত্রগুলো চালাতে হবে। নামমাত্র নয়, সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে। এই বিষয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেছেন এভাবে, ‘সিনেমা হলের সংখ্যা ১২০০-১৪০০ থেকে ১৭০-এ নেমে এসেছে। তবুও আমি আশাবাদী, কারণ আমরা নতুনেরা হাল ছাড়িনি, হাল ছাড়ব না।’

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াবে: বেলায়াত হোসেন মামুন
তিনি নির্মাতা, লেখক ও সংগঠক। একই সঙ্গে ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। বেলায়াত হোসেন মামুনের বিশ্বাস, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াবে, কারণ বাংলাদেশের মানুষ চলচ্চিত্র ভালোবাসে। তিনি মনে করেন, অন্য যেকোনো দেশের মানুষের চেয়ে বেশি সময় ধরে চলচ্চিত্র দেখেন এই দেশের মানুষ। আর এটিই প্রথম ও প্রধান কারণ।

বেলায়াত হোসেন মামুনের মতে, চলচ্চিত্রশিক্ষার সংকট আমাদের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল। আগামী দিনে এই সমস্যারও সমাধান হবে। অনেক তরুণ দেশে ও বিদেশে চলচ্চিত্রবিদ্যায় প্রশিক্ষিত হচ্ছেন। তাঁদের কাজের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাণপ্রক্রিয়ার বদল ঘটবে। তাঁরাই সৃজনশীল কাজের পরিসর তৈরি করবেন। তা ছাড়া দেশে চলচ্চিত্রের আধুনিক হল বা সিনেপ্লেক্স হচ্ছে। বিষয়টিকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বেলায়াত হোসেন মামুন। তিনি আরও বলেন, নতুন পরিবেশে দেশের মানুষ আবার হলমুখী হবেন। এই পরিবর্তন হয়তো খুব দ্রুত হবে না, তবে হবে। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্র এখনো বহু তরুণের শখ হিসেবে আছে। এটা যখন পেশায় রূপান্তরিত হবে, তখন দেশের চলচ্চিত্রের প্রতি এই হাজারো তরুণের সিরিয়াসনেস দেশের চলচ্চিত্রের পুরো কাঠামোকে বদলে দেবে। আমি তাই আশাবাদী।’

মধ্যস্বত্বভোগীদের সরাতে হবে: আনন্দ কুটুম
চলচ্চিত্রকর্মী আনন্দ কুটুম শুরু করলেন সমস্যা দিয়ে। বললেন, ‘আমদের চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত কর্তাব্যক্তিরা মনে করেন, তিনি ঠিক আর সবাই ভুল। একবার পদে বসে আর সেই পদও ছাড়তে চান না। নতুনকে গ্রহণ করার মানসিকতা নেই। সুস্থ সমালোচনা নেই। সমালোচনা গ্রহণের মানসিকতাও নেই।’ সমস্যাগুলো থেকেই সমাধানও বাতলে দিলেন। বললেন, ‘তেলবাজি, বাহবা আর হাততালি না দিয়ে যৌক্তিক, শৈল্পিক সমালোচনা করতে হবে। আর সেই সমালোচনা গ্রহণ করে ফ্রেমে ফ্রেমে বলতে হবে আরেকটু নির্ভুল, নিখুঁত গল্প। মধ্যস্বত্বভোগীদের সরাতে হবে। স্বচ্ছতা আনতে হবে। আর শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এগুলোর সমন্বয় ঘটলে কেন নয়?’

মধুমিতার গৌরবের দিন ফিরবে: ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও মধুমিতা হলে কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ প্রথমেই বললেন পিছিয়ে থাকার কারণ। চলচ্চিত্রের বড় বড় চেয়ারে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা কেউ নাকি ওই চেয়ারে বসার কোনো যোগ্যতাই রাখেন না। তবে এরপরই দিলেন সুসংবাদ। বললেন, ‘অন্যদের কথা বলতে পারব না। তবে আমি আশাবাদী। আমি আশাবাদী আমার মধুমিতাকে নিয়ে। এই হল তাঁর পুরোনো জৌলুশ আর ঐতিহ্য নিয়ে ফিরবে। আবারও মধুমিতার গৌরবের দিন ফিরবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়ার হচ্ছে।’ তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। শুধু বলেছেন, যখন আকাশে চাঁদ উঠবে, তখন সবাই দেখতে পাবে।