ঈদে বসেছিল মানহীন নাটকের হাট

মামুনুর রশীদ, তারিক আনাম খান, জাহিদ হাসান, বিপাশা হায়াত
মামুনুর রশীদ, তারিক আনাম খান, জাহিদ হাসান, বিপাশা হায়াত

দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে খণ্ডনাটক, টেলিছবি ও ধারাবাহিক মিলিয়ে এবারের ঈদে চার শতাধিক নাটক প্রচারিত হয়েছে। কয়েকটি নাটক প্রশংসিত হলেও বেশির ভাগ নাটক নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন অভিনয়সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। নাট্যজন মামুনুর রশীদের মতে, এই ঈদে মানহীন নাটকের হাট বসেছিল। অনেকে ইউটিউবে নাটকের ভিউ নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছে। মিলিয়ন ভিউ হলেও মানের দিক থেকে নাট্যজনদের হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি বেশির ভাগ নাটক।

জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পীদের কেউ কেউ আবার এই ঈদের নাটক দেখে অসুস্থতাবোধ করেছেন বলেও জানান। নাটক নিয়ে পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের আসলে রুচির নির্মাণটা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন নাট্যজন তারিক আনাম খান।

কোরবানির ঈদের সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেমন গরু-ছাগলের হাট বসে, তেমনি টেলিভিশনে নাটকের নাম করে অনেক মানহীন নাটকের হাট বসেছে বলে জানালেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘নাটকগুলো দেখে শুধু মনে হয়েছে, খুব অনাদরে আর অযত্নে তৈরি করা হয়েছে। কম পয়সায় বানিয়ে মুনাফা লাভের আশায় বেশির ভাগ এজেন্সি এ ধরনের নাটক বানিয়েছে। ঈদের এই সময়টায় অনেক নাটক হওয়ায় অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার ও পরিচালকদের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি হয়। এই সময়টায় শুধু অর্থ উপার্জন মূল উদ্দেশ্য। এ কারণে নাটকগুলো খুবই নিম্নমানের হচ্ছে।’ মামুনুর রশীদ আরও বলেন, ‘আমাদের যে দক্ষ অভিনয়শিল্পী আছেন, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দক্ষ পরিচালকও আছেন। শুধু অর্থের লোভটা সংবরণ করতে পারলেই আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতাম।’

অদক্ষ পরিচালকের কারণে শুটিং সেটে অভিনয়শিল্পীরাও পরিচালকের ওপর নিয়ন্ত্রণ খাটান বলে জানান অভিনয়শিল্পী তারিক আনাম খান। এ কারণেও নাটকের মান খারাপ হয় বলে জানান এই অভিনয়শিল্পী। তিনি বলেন, ‘নাটকে গল্প বলার কৌশলে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। কয়েক বছর ধরে একই ঘেরাটোপে বন্দী আছি। আবার কোনো সেটে পরিচালক যখন দুর্বল থাকে, তখন অভিনয়শিল্পীরা প্রভাব বিস্তার করে থাকে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গুণী অভিনয়শিল্পী বলেন, ‘আমি রীতিমতো অসুস্থতা অনুভব করেছি। কী অদ্ভুত। নিজেদের ছেলে-মেয়েরাই তো কাজ করছে। আমরা কোনো দিকে যেতে পারছি না। এই ঈদে শত শত নাটক হয়েছে, দেখা গেল মাত্র তিন থেকে চারটা। এসব আর ভালো লাগে না।’

অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক স্বামী তৌকীর আহমেদের কারণে কয়েকটি নাটক দেখার চেষ্টা করেছেন অভিনয়শিল্পী ও নাট্যকার বিপাশা হায়াত। কিন্তু নাটকের উদ্দেশ্যহীন সংলাপ তাঁকে হতাশ করেছে। তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে ঈদের যে কয়েকটা নাটকের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করেছি, সেগুলোতে ছিল উদ্দেশ্যহীন সংলাপ। যখন একজন নাট্যকার উদ্দেশ্যহীনভাবে সংলাপ লিখে গেছেন, তাঁকে নাট্যকারও তো বলতে পারব না। প্রতিটি সংলাপের পেছনে একটা কার্যকারণ থাকবে। চরিত্র সৃষ্টিতেও কার্যকারণ থাকবে। কিন্তু সেসবের কোনো বালাই নেই।’

বিপাশা এ–ও বলেন, ‘আমি নিজে থেকে নাটক দেখার জন্য বসিনি। তৌকীর দেখছে, আমি বোঝার চেষ্টা করছিলাম, কী হচ্ছে। কী ঘটছে। তরুণ প্রজন্মের দক্ষ অভিনয়শিল্পী হিসেবে যাঁদের মনে করি, তাঁরা অনেকে কাজ করেছে। কিন্তু নাটকের স্ক্রিপ্ট হাতে পেয়ে তাঁরা কেন বলেন না, অন্তঃসারশূন্য গল্প? আমরা কিন্তু অনেক সময় তা করেছি। এরপর সংশোধন করতেন নাট্যকার। আমাদের চর্চা যেহেতু থিয়েটার ছিল, তাই সত্যিকার অর্থে নাটক না হয়ে উঠতে পারলে থিয়েটার থেকে নাটক বানানো হতো না। শুধু পারফর্ম করাটাই শেষ কথা নয়। পারফর্ম করার আগে অভিনয় দেখা কিংবা অভিনয়সংক্রান্ত কোনো বই সবার পড়া উচিত। থিয়েটারে অভিনয় না করুক, থিয়েটার দেখুক।’

অভিনয়শিল্পী ও পরিচালক জাহিদ হাসান বলেন, ‘এখন নাটকের সুন্দর চিত্রনাট্যের জন্য কেউই সময় দিচ্ছে না। পরিচালক বলছেন, নাট্যকারও যা খুশি তাই বানিয়ে দিচ্ছেন। একজন চিত্রনাট্যকারের চাপ বেশি। তাই এমনটা হচ্ছে।’