এক বহুরূপী

আয়ুষ্মান খুরানা
আয়ুষ্মান খুরানা

নিশান্তের যখন তিন বছর বয়স, তখন বাবা-মা নাম বদলে দিলেন। নতুন নাম হলো আয়ুষ্মান। খুরানাটা বদলে কী হবে! পরিবারের পদবি তো আর বদলানো যাবে না। জ্যোতিষী বাবা কি তাহলে আঁচ করতে পেরেছিলেন, ছেলের নাম আয়ুষ্মান খুরানা রাখলে একদিন সে বড় তারকা হয়ে উঠবে?

সেই কিশোর বয়স থেকে সংগ্রাম করে ধীরে ধীরে বলিউডে জায়গা করে নিয়েছেন আয়ুষ্মান খুরানা। ফিল্মফেয়ার আর অন্যান্য পুরস্কার ছাড়াও অর্জন করে নিয়েছেন ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শুধু যে অভিনয়ে তাঁর দক্ষতা তা নয়, ইতিমধ্যে গানের গুণটাও দেখিয়ে দিয়েছেন। একই ব্যক্তি হয়তো বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে বহু রূপ ধারণ করতে পারেন। কিন্তু তাঁর আছে বহু গুণ। তাই আয়ুষ্মানকে হয়তো একই সঙ্গে বহুরূপী ও বহুগুণী বললে ভুল হবে না!

গান দিয়ে শুরু

‘পপস্টারস’ নামে একটি গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন আয়ুষ্মান। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৭। সাল ২০০২। তারপর নিজের প্রথম চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। এরপর থেকে নিজের অভিনীত প্রায় সব ছবিতেই থাকে তাঁর গাওয়া গান। প্রথম ছবি ভিকি ডোনার-এর ‘পানি দা রং’ তো তাঁকে রাতারাতি সবার ‘প্রিয় গায়ক’-এর তালিকায় তুলে দিয়েছে। গানটা তাঁর নিজের লেখা। সুর করেছেন নিজেই। আবার গেয়েছেনও। আর
এর জন্য জিতেছেন বেশ কয়েকটি পুরস্কার।

এমটিভি রোডিসের যাত্রায়

পপস্টারসের কথা কেউ মনে না রাখলেও সম্ভবত অনেকেই মনে রেখেছেন আয়ুষ্মানের দ্বিতীয় যাত্রার কথা। রিয়েলিটি শো ‘এমটিভি রোডিস’-এর দ্বিতীয় মৌসুমের বিজয়ী তিনি। গানের চর্চার পাশাপাশি থিয়েটারে অভিনয় করতেন। পড়ছিলেন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে। নিজের দৈহিক গঠন ও বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে একেবারেই আত্মবিশ্বাস ছিল না তাঁর। বন্ধুরাও মজা করে বলতেন ‘এই চেহারা নিয়ে আবার অভিনয় করবি!’ কিন্তু কী মনে করে যে তিনি রোডিসে গেলেন, হয়তো নিজেও জানেন না। বিভিন্ন খেল-কসরত দেখিয়ে প্রকাশ করলেন নিজের অন্য গুণ। সেখানে বিজয়ী হওয়ার পর আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে গেল। বয়স হয়ে গেল ২০। কিন্তু তখনো সংগ্রাম করতে হয়েছিল তাঁকে।

মাঝপথে কথাবন্ধু

মোটামুটি একটা পরিচয় হলেও বড়সর কোনো কাজ পাচ্ছিলেন না ছোট পর্দায়। বড় পর্দা তো তখন অনেক দূরে! স্নাতকোত্তর শেষ করে প্রথম চাকরি নিলেন দিল্লির ‘বিগ এফএম’ বেতারে, কথাবন্ধু হিসেবে। এই গুণ দেখাতে দেখাতে ২০০৭ সালে পেলেন আরেক পুরস্কার। ‘ইয়ং অ্যাচিভারস’ পুরস্কারটা পেয়েছিলেন সেরা কথাবন্ধু হিসেবেই। এমনকি পেলেন ‘ভারত নির্মাণ’ পুরস্কারও।

সঞ্চালক আয়ুষ্মান

নিজের পরিচয় ধরে রাখার জন্য টেলিভিশনের পর্দা খুব জরুরি ছিল আয়ুষ্মানের জন্য। সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করলেন না। এমটিভির বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করলেন। আরজে (রেডিও জকি বা কথাবন্ধু) থেকে হয়ে গেলেন ভিজে (ভিডিও জকি বা ভিডিও উপস্থাপক)। এরপর অন্যান্য টিভি চ্যানেল ডাকতে থাকল তাঁকে। তবে উপস্থাপনা শুরুর আগে একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করেছিলেন। যা-ই হোক, ২০১১ সালে নাচের প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান ‘ডান্স প্লাস’ উপস্থাপনা করার পর তাঁর জীবনে এল আসল ‘টার্নিং পয়েন্ট’! পরিচিতি বেড়ে গেল আরও। পরিণত আয়ুষ্মানকে দেখতে পেলেন অনেকে। পেয়ে গেলেন ভিকি ডোনার-এর টিকিট।

শেষে অভিনয়ে

ছোট পর্দায় টুকটাক অভিনয় আর সঞ্চালনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কেননা যতই চলচ্চিত্রের জন্য অডিশন দেন না কেন, আলোর মুখ দেখতে পারছিলেন না। অবশেষে ২০১১ সালে প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য ডাক পান। পরের বছর ভিকি ডোনার মুক্তির পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর বাকিটা সবার জানা। সাধারণ চরিত্রগুলোকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলতে জুড়ি নেই তাঁর। নিজেই বলেছেন, ‘আমি চেষ্টা করি একজন অতিসাধারণ, অনুপযুক্ত ব্যক্তির চরিত্রে মনোযোগ দিতে, যিনি বাস্তব জীবনে একজন নায়ক।’

সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

আইএমডিবি, সোশ্যাল ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে