আবদুল আলীমের গান শোনাবেন দুই ছেলে

শিল্পী আবদুল আলীম
শিল্পী আবদুল আলীম

বাংলাদেশের লোকগানের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন শিল্পী আবদুল আলীম। এই অমর শিল্পী বাংলা লোকসংগীতকে অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান, যেখানে জীবন, জগৎ এবং ভাববাদী চিন্তা একাকার হয়ে যায়। ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। আগামী বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) তাঁর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হবে। তাঁকে স্মরণ করে ওই দিন গান শোনাবেন দুই ছেলে আজগর আলীম ও জহির আলীম।

চ্যানেল আই ওই দিন সকাল সাড়ে সাতটায় স্টুডিও থেকে সরাসরি প্রচার করবে আজগর আলীম ও জহির আলীমের অংশগ্রহণে সংগীতানুষ্ঠান ‘গানে গানে সকাল শুরু’। দেড় ঘণ্টার এই অনুষ্ঠানে সন্তানেরা তাঁদের বাবার গানের বিশাল ভান্ডার থেকে গান শোনাবেন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের তালিবপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন সংগীত প্রতিভা আবদুল আলীম। ছোটবেলায় তাঁর সংগীতগুরু ছিলেন সৈয়দ গোলাম আলী। অল্প বয়স থেকেই বাংলার লোকসংগীতের এই অমর শিল্পী গান গেয়ে নাম করেন। আর বিভিন্ন পালা–পার্বণে সেগুলো গাইতেন। এভাবে পালা–পার্বণে গান গেয়ে তিনি জনপ্রিয় হন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তাঁর গানের প্রথম রেকর্ড বের হয়। রেকর্ড করা গান দুটি হলো ‘তোর মোস্তফাকে দে না মাগো’ এবং ‘আফতাব আলী বসল পথে’। এত অল্প বয়সে গান রেকর্ড হওয়া সত্যিই বিস্ময়কর। অবশ্য পরে তা আর বিস্ময় হয়ে থাকেনি, তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার লোকসংগীতের প্রথিতযশা শিল্পী।

দেশভাগের পরে আবদুল আলীম ঢাকায় চলে আসেন এবং রেডিওতে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। টেলিভিশন সেন্টার চালু হলে সেখানেও তিনি সংগীত পরিবেশন শুরু করেন। এ ছাড়া তৎকালীন বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে আবদুল আলীম গান করেছেন। আবদুল আলীমের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো ‘লালন ফকির’। আবদুল আলীম তাঁর আধ্যাত্মিক, মরমি ও মুর্শিদি গানের জন্য অমর হয়ে থাকবেন। পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম ছিলেন ঢাকা সংগীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক।

আবদুল আলীম বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিও ছাড়া দেশের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। শিল্পীর ৫০০ গান রেকর্ড হয়েছে, এ ছাড়া স্টুডিও রেকর্ডেও রয়েছে অসংখ্য গান।

বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করেছে। তাঁর অবিস্মরণীয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘যার আপন খবর আপনার হয় না’, ‘নাইয়া রে নায়ের বাদাম তুইলা’, ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী’, ‘হলুদিয়া পাখি’, ‘মেঘনার কূলে ঘর বাঁধিলাম’, ‘এই যে দুনিয়া’, ‘দোল দোল দুলুনি’, ‘দুয়ারে আইসাছে পালকি’, ‘কেনবা তারে সঁপে দিলাম দেহ মন প্রাণ’, ‘মনে বড় আশা ছিল যাব মদিনায়’, ‘কেহ করে বেচাকেনা কেহ কান্দে’, ‘সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা’ প্রভৃতি।