স্ত্রীর হত্যাকাণ্ড এখনো তাড়া করছে পোলানস্কিকে

‘অ্যান অফিসার অ্যান্ড আ স্পাই’ ছবির দৃশ্য
‘অ্যান অফিসার অ্যান্ড আ স্পাই’ ছবির দৃশ্য

স্ত্রীর হত্যাকাণ্ডের ৫০ বছর পর মুখ খুললেন প্রখ্যাত ফরাসি-পোলিশ চলচ্চিত্র পরিচালক রোমান পোলানস্কি। বললেন, তাঁর স্ত্রী, মার্কিন অভিনয়শিল্পী ও মডেল শ্যারন টেইটের মৃত্যুকে খুব জঘন্যভাবে উপস্থাপন করেছে মিডিয়া। এমনকি অনেক মিডিয়া দাবি করেছে, শ্যারন টেইটের মৃত্যুর সঙ্গে যোগসাজশ থাকতে পারে রোমান পোলানস্কির। সেই ট্র্যাজেডির থেকেই হলিউডে তাঁর ‘ইমেজ’ সংকট তৈরি হয়।

গত শতকের ষাটের দশকে সিরিয়াল কিলিংয়ের জন্য কুখ্যাত কাল্ট নেতা চার্লস ম্যানসন। ১৯৬৯ সালে চার্লস আর তাঁর অনুসারীরা নির্বিচারে সাতজনকে হত্যা করে সাড়া ফেলে দেন যুক্তরাষ্ট্রে। হতভাগ্যদের একজন ছিলেন বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা রোমান পোলানস্কির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শ্যারন টেইট। ‘ম্যানসন ফ্যামিলি’ নামে পরিচিত তাঁর অনুসারীরা রোমান পোলানস্কির সাড়ে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শ্যারন টেইটসহ পাঁচজনকে ১৯৬৯ সালের ৯ আগস্ট ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করেন।

রোমান পোলানস্কি
রোমান পোলানস্কি

‘দ্য পিয়ানিস্ট’ কিংবা ‘চায়না টাউন’ ছবির নির্মাতা পোলানস্কি এরপরও একাধিকবার নেতিবাচকভাবে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। ১৩ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণ করার অপরাধে গ্রেপ্তার এড়াতে চার দশক পা রাখতে পারেননি মার্কিন মুলুকে। এখন তিনি অবস্থান করছেন ইতালির ভেনিসে। সেখানে চলছে বিশ্বের সেরা তিন চলচ্চিত্র উৎসবের একটি, ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৯। সেখানে প্রতিযোগিতা করবে রোমান পোলানস্কির ছবি ‘অ্যান অফিসার অ্যান্ড আ স্পাই’। সেখানে ‘ডেডলাইন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথাগুলো বলেছেন তিনি।

রোমান পোলানস্কি আরও বলেছেন, ‘মানুষ তারপর থেকেই আমাকে অন্যভাবে দেখতে শুরু করেছে। যখন এই ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটল, আমি মারাত্মক ট্রমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। আর মিডিয়া আমার দিকেই আঙুল তোলে। আমিই নাকি সেই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।’

‘অ্যান অফিসার অ্যান্ড আ স্পাই’ ছবির দৃশ্য
‘অ্যান অফিসার অ্যান্ড আ স্পাই’ ছবির দৃশ্য

সেই ঘটনা এখনো তাড়া করে ফেরে ৮৬ বছর বয়সী এই পরিচালককে। সময়ের সঙ্গে শোক কমে যায়। কিন্তু রোমান পোলানস্কি সেই ঘটনাকে তুলনা করেছেন একটা তুষারগোলকের সঙ্গে। যেখানে প্রতিবছর নতুন প্রলেপ জমে আর আকারে বড় হয়।

ওই সাক্ষাৎকারে রোমান পোলানস্কি বলেন, ‘কাজের ভেতরে থাকলেই আমি ভালো থাকি। ব্যস্ততার মধ্যে এমন সব মুহূর্ত আসে, মনে হয়, এই তো আমি বেঁচে আছি। আমি সব মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পাই। বেশির ভাগ মানুষ আমার মামলার বিষয়ে কিছু জানেই না। কিন্তু হয়রানি করতে পিছপা হয় না।’

রোমান পোলানস্কি ও তাঁর স্ত্রী শ্যারন টেইট
রোমান পোলানস্কি ও তাঁর স্ত্রী শ্যারন টেইট

অস্কারজয়ী এই পরিচালকের ‘অ্যান অফিসার অ্যান্ড আ স্পাই’ ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেতা জিন ডুজারডিন। ছবির গল্প মূলত ক্যাপ্টেন আলফ্রেড ড্রেফাসের ওপর। তিনি ছিলেন ফরাসি-ইহুদি সৈনিক। তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। তিনি নাকি জার্মানির কাছে গোপন সামরিক তথ্য পাচার করেছেন। সাড়া জাগানো সেই বিচারে ড্রেফাস দোষী সাব্যস্ত হন। তাঁকে ডেভিলস দ্বীপে আজীবন কারারুদ্ধ করে রাখার রায় দেওয়া হয়।

এই রায় নিয়ে বিতর্ক যখন চরমে, তখন একে একে বেরিয়ে আসে আসল সত্যি। যে চিঠি নিয়ে এত কাণ্ড, সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। মূল দোষী সাব্যস্ত হন ফরাসি সেনাবাহিনীর এক মেজর পদবির কর্মকর্তা। ফরাসি কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চায়। কিন্তু তত দিনে ড্রেফাসের একদল সমর্থক তৈরি হয়, তারা নিজেদের ‘ড্রেফাসেডারস’ নামে পরিচয় দিত। তারা ড্রেফাসের মামলা আবার শুরু থেকে শুরু করার জন্য চাপ দিতে থাকে।

‘অ্যান অফিসার অ্যান্ড আ স্পাই’ ছবির দৃশ্য
‘অ্যান অফিসার অ্যান্ড আ স্পাই’ ছবির দৃশ্য

১২ বছর ধরে তীব্র বিতর্ক আর কিছু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। চলে রাজনৈতিক দলাদলি। শেষ পর্যন্ত মেজর জোসেফ হুবার্ট হেনরি মূল নথিপত্র জাল করার দায় স্বীকার করেন এবং আত্মহত্যা করেন। শুরু হয় নতুন করে তদন্ত। ফরাসি আদালত এবারও ড্রেফাসকে দোষী সাব্যস্ত করেন। কিন্তু ড্রেফাসকে ক্ষমা করেন রাষ্ট্রপতি। তার কয়েক বছর পর অবশেষে আদালত রায় দেন, ড্রেফাস নির্দোষ। উনিশ শতকের নব্বইয়ের দশকে প্যারিসের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল এটি।

গত ৩০ আগস্ট ‘অ্যান অফিসার অ্যান্ড আ স্পাই’ ছবিটি ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়।