বেশ কিছু প্রত্যাশা পূরণ করেছে ডিরেক্টরস গিল্ড

বর্তমান কমিটির সদস্যরা ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর শপথ গ্রহণ। ছবি: ডিরেক্টরস গিল্ডের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
বর্তমান কমিটির সদস্যরা ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর শপথ গ্রহণ। ছবি: ডিরেক্টরস গিল্ডের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

টেলিভিশন নাটকের পরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভা আসন্ন। বিগত এক বছর টেলিভিশন নাটক ও পরিচালকদের জন্য কী করেছে সংগঠনটি, কী কী করা উচিত ছিল, সেসবের ওপর একটি প্রতিবেদন পেশ করবেন সাধারণ সম্পাদক। সদস্য পরিচালকেরা তাই প্রস্তুত। আগামী শনিবারের জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা। গত এক বছরে বেশ কিছু প্রাপ্তিযোগ ঘটেছে সংগঠনের সদস্যদের।

গত এক বছরে নাটক ও নাটকের পরিচালকদের বেশ কিছু প্রত্যাশা পূরণ করেছে ডিরেক্টরস গিল্ড। কিছু পূরণ করতে পারেনি। সংগঠনের সদস্যরা শুটিংয়ের সময় পুলিশের সহযোগিতা পাবেন, পুলিশের সঙ্গে ডিরেক্টরস গিল্ডের এমন চুক্তি হয়েছে। ল্যাবএইড, আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারবেন ৩০ শতাংশ ছাড়ে। এ ছাড়া বাজার-সদাই করতে ৫ শতাংশ ছাড় পাবেন চেইনশপ স্বপ্ন থেকে।

ডিরেক্টরস গিল্ডের দাবি ছিল, ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিক যাতে একটি নিয়মের মধ্যে প্রচারিত হয়। তাদের এই দাবি আমলে নিয়ে টেলিভিশন মালিকদের সংগঠনকে চিঠি দিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, সরকারের অনুমতি ছাড়া ডাবিং করা বিদেশি ধারাবাহিক প্রচার করা যাবে না। তবে নাটকের শুটিংয়ের ক্ষেত্রে নিয়মকানুন মানার বিষয়টি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এ ব্যাপারে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা নাটকের ছয় সংগঠন চুক্তি করেছিলাম। তবে এখনো ফল পাচ্ছি না। আশা করছি শিগগিরই পাওয়া যাবে।’

ডিরেক্টরস গিল্ডের বর্তমান সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু ও সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক । ছবি: প্রথম আলো
ডিরেক্টরস গিল্ডের বর্তমান সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু ও সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলিক । ছবি: প্রথম আলো

গত এক বছর সংগঠন পরিচালনা করতে গিয়ে নেতাদের মধ্যে কিছু বিরোধের কথাও শোনা গেছে। বিভিন্ন কাজে নেতাদের মধ্যে মতদ্বৈধতা ও দ্বন্দ্বের আভাস পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক সদস্য অভিযোগ করেছেন, সংগঠনের বিভিন্ন কাজের সিদ্ধান্ত নিতে সারা বছরই সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের ঠান্ডা লড়াই লেগে ছিল। সংগঠনের ইফতার মাহফিলে তথ্যমন্ত্রীকে ‘তোষামোদ’ করে বক্তব্য দেওয়ায় সাধারণ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক। এতে অভিমান করে দুই মাস ছুটি নিয়ে সংগঠনের সব কাজ থেকে দূরে ছিলেন তিনি।
সদস্যদের অভিযোগ ছিল, মন্ত্রীকে নিয়ে ও রকম বক্তব্য দেওয়া সংগঠনের নৈতিকতাবিরোধী। তা ছাড়া কাউকে সুযোগ না দিয়ে একাই ইফতার অনুষ্ঠান পরিচালনা করার অভিযোগও ছিল সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে অলিক বলেন, ‘সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী টেলিভিশন নাটকের জন্য কিছু কাজ করে দিয়েছেন। আরও নানা সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। এ কারণেই তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলাম, এতটুকুই।’ তবে ছুটি নিয়ে সংগঠন থেকে দূরে থাকার তথ্যটি সঠিক নয় বলে জানান এই পরিচালক নেতা। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজের জন্য দুই মাস ছুটি নিয়েছিলাম।’

বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বর্তমান কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে কেক কাটেন তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বর্তমান কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে কেক কাটেন তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ছবি: প্রথম আলো

বিরোধের প্রশ্নে অলিক বলেন, ‘অন্য কিছু নিয়ে আমাদের বিরোধ নেই। সংগঠন থেকে কোনো কাজের সিদ্ধান্ত নিতে গেলে কমিটির সদস্যদের মধ্যে দুই ধরনের মত আসতেই পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে সিদ্ধান্ত পাস হলে পরে কোনো কথা থাকে না। এটাকে বিরোধ বলা যাবে না।’
এ বিষয়ে মুখ না খুললেও দ্বন্দ্বের বিষয়টি একরকম স্বীকার করেই নিয়েছেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক তুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘অলিক ভাই সাংগঠনিক মানুষ। এই কমিটিতে তিনি গতবারও ছিলেন, এবারও আছেন। একটা পরিবারেও অনেক সময় ভাইয়ে-ভাইয়ে মতবিরোধ থাকে। ডিরেক্টরস গিল্ড একটি বড় সংগঠন। কোনো কোনো কাজে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে কমিটির সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। তবে বড় কোনো সমস্যা এখানে নেই।’

ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘একটি সিদ্ধান্ত নিতে গেলে নানা রকম মত আসতে পারে। কিন্তু মতবিরোধ আমাদের মধ্যে নেই। মাঝে দুটো অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু কথা হয়েছে বটে, কিন্তু সেটা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।’
গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ডিরেক্টরস গিল্ডের নির্বাচন। ভোটের মাধ্যমে দুই বছরের জন্য সংগঠনের নেতা নির্বাচন করেন সদস্য পরিচালকেরা।