মুক্তির আগে 'মায়াবতী'র মিলনমেলা

‘মায়াবতী আড্ডা’ অনুষ্ঠানে আসা শিল্পী ও অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো
‘মায়াবতী আড্ডা’ অনুষ্ঠানে আসা শিল্পী ও অতিথিরা। ছবি: প্রথম আলো

পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের ‘না’ বলার অধিকার আছে, সবার উচিত এটাকে সম্মান করা— আর এই বার্তা নিয়েই অরুণ চৌধুরী ‘মায়াবতী’ সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন।

‘আমরা চেষ্টা করেছি বিষয়টি সুন্দরভাবে সিনেমায় উপস্থাপন করতে’, বলছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর বাংলামোটর এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিশা দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবি দেখার আহ্বান জানান। তিশা বলেন, ‘অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নির্মাতারা সিনেমা বানান শুধু দর্শকদের জন্য। দর্শক যখন প্রেক্ষাগৃহে সপরিবারে সিনেমা দেখতে আসেন, তখনই আসলে এত পরিশ্রম সার্থক হয়। আর ভবিষ্যতে নির্মাতাদের আরও সিনেমা বানাতে সাহস জোগায়। দর্শকদের বলতে চাই, তাঁরা যেন সিনেমা দেখেন, তাঁদের মন্তব্য জানান এবং সাপোর্ট করেন।’

‘মায়াবতী’ ছবিতে জুটি বেঁধেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা ও ইয়াশ রোহান। ছবি: প্রথম আলো
‘মায়াবতী’ ছবিতে জুটি বেঁধেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা ও ইয়াশ রোহান। ছবি: প্রথম আলো

মাঝে আর মাত্র দুই দিন। শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মায়াবতী’। ছোট পর্দায় সুপরিচিত নির্মাতা অরুণ চৌধুরীর পরিচালনায় এ ছবিতে জুটি হয়েছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা ও ইয়াশ রোহান। ছবিটির মুক্তি উপলক্ষে ‘মায়াবতী আড্ডা’ নামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক অরুণ চৌধুরী, অভিনেত্রী আফরোজা বানু, নুসরাত ইমরোজ তিশা, অভিনেতা নরেশ ভুঁইয়া, ইয়াশ রোহান, সংগীতশিল্পী আগুন, প্রযোজক আনোয়ার আজাদসহ অনেকে। ‘মায়াবতী আড্ডা’ আয়োজনটি একপর্যায়ে শিল্পী, কলাকুশলী, সাংবাদিকদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে জমজমাট মিলনমেলায় পরিণত হয়।

২০১৮ সালে ‘স্বপ্নজাল’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে ইয়াশ রোহানের। এক বছর পর আবারও নতুন সিনেমা নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছেন তিনি। অনুষ্ঠানে ইয়াশ রোহান বলেন, ‘মায়াবতী’ আমার দ্বিতীয় সিনেমা। এর গল্পটা খুব চমৎকার। সিনেমাটির যে কয়টি জায়গায় সুযোগ ছিল, আমি ভালো করার চেষ্টা করেছি। এখন আমার ক্যারিয়ারে এমন একটি সিনেমা খুব দরকার ছিল। অনেক কিছু শিখেছি। সবাইকে পরিবার নিয়ে সিনেমাটি দেখার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’

‘মায়াবতী’ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। ছবি: প্রথম আলো
‘মায়াবতী’ নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। ছবি: প্রথম আলো

‘মায়াবতী’ নির্মাতা অরুণ চৌধুরীর দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তাঁর প্রথম ছবি ‘আলতাবানু’। দ্বিতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সাফল্যের বিষয়ে দারুণ আশাবাদী পরিচালক অরুণ চৌধুরী। দর্শক ‘মায়াবতী’ দেখে নিরাশ হবেন না বলেও অনুষ্ঠানে জানান তিনি। অরুণ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ২০টি হলে মুক্তির পরিকল্পনা করেছি। যদিও জাজ মাল্টিমিডিয়া ৪০টিতে মুক্তি দিতে চাচ্ছে। কিন্তু এখনই এতগুলো হল চাচ্ছি না। প্রথম সপ্তাহে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখে আমরা কতগুলো হল বাড়াব, সেই সিদ্ধান্ত নেব। আর এখন ঢাকার যেই হলগুলোতে দর্শক বেশি হয়, সেগুলোতে মুক্তি দিচ্ছি।’ প্রসঙ্গক্রমে অরুণ চৌধুরী বলেন, ‘আমার মতে প্রতিটি সিনেমা মূলধারার। প্রতিটি সিনেমা নির্মাণ করা উচিত দর্শকদের কথা মাথায় রেখে। ফর্মুলার বাইরের সিনেমাগুলোর দর্শক দিন দিন বাড়ছে। আমাদের নির্মাতা মনে করেন ফর্মুলা সিনেমা নির্মাণ করলেই দর্শকেরা দেখবেন। আমি সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, “মনপুরা”, “আয়নাবাজি”, “দেবী” এগুলো কোনো ফর্মুলা সিনেমা নয়। কিন্তু দর্শক দেখেছেন। দর্শকেরা কিন্তু সিনেমা দেখতে চান। আমরা নির্মাতারা তাঁদের টানতে পারছি না।’

পরিচালক অরুণ চৌধুরীর সঙ্গে ‘মায়াবতী’র দুই শিল্পী নুসরাত ইমরোজ তিশা ও ইয়াশ রোহান। ছবি: প্রথম আলো
পরিচালক অরুণ চৌধুরীর সঙ্গে ‘মায়াবতী’র দুই শিল্পী নুসরাত ইমরোজ তিশা ও ইয়াশ রোহান। ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন রুম্মান রশীদ খান। আনোয়ার আজাদ ফিল্মস ও অনন্য সৃষ্টি অডিও ভিশন প্রযোজিত ‘মায়াবতী’তে তিশা, রোহান ছাড়াও অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, রাইসুল ইসলাম আসাদ, দিলারা জামান, মামুনুর রশীদ, নরেশ ভুঁইয়া, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, আফরোজা বানু, অরুণা বিশ্বাস, আবদুল্লাহ রানা, তানভীর হোসেন প্রবাল, আগুন, মীমসহ অনেকে।

২ ঘণ্টা ২০ মিনিট ব্যাপ্তির এ ছবির গল্প গড়ে উঠেছে নারী পাচারকে ঘিরে। সমাজের পারিপার্শ্বিক অবস্থা চিত্রায়িত হয়েছে এ চলচ্চিত্রে। নিটোল প্রেমের গল্পের পাশাপাশি পরিচালক অরুণ চৌধুরী এতে সমাজের নানা অসংগতি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, মায়া নামের এক কিশোরী ছোটবেলায় তার মায়ের কাছ থেকে চুরি হয়ে যায়। পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ে সে। তাকে দৌলতদিয়ার যৌনপল্লিতে বিক্রি করা হয়। সেখানে মায়াকে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন গানের গুরু খোদা বক্স। ওদিকে মায়ার গানের প্রেমে পড়েন একজন ব্যারিস্টার। একসময় ভয়ংকর খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে মেয়েটি। শুরু হয় নতুন গল্প। নতুন সংগ্রাম।
গল্পের প্রতি বিশ্বস্ততার কারণে দৌলতদিয়ার যৌনপল্লিতে শুটিং করেছেন এ ছবির শিল্পী ও কলাকুশলীরা।