নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র গ্রাফিতির সুবোধ

‘ন-বৃত্তীয়’ নাটকের মহড়া চলছে। ছবি: ‘জীবন সংকেত’ নাটকের দলের সৌজন্যে
‘ন-বৃত্তীয়’ নাটকের মহড়া চলছে। ছবি: ‘জীবন সংকেত’ নাটকের দলের সৌজন্যে

আলোক পরিকল্পনার কোনো কাঠামো নেই, ব্যাক স্ক্রিন, সাইড স্ক্রিন—কিছুই নেই। কার্ড না ঢোকালে ইলেকট্রিসিটি নেই। তবু একটা হল তো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মঞ্চে নতুন প্রযোজনা নিয়ে দাঁড়ানো তো যাবে! সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত একটি হলকে নাট্যোপযোগী করার যুদ্ধে নেমেছে জীবন সংকেত।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কথাগুলো লিখলেন মঞ্চনাটকের পরিচিত মুখ রুমা মোদক। এখানে তাঁর শেষ বাক্যটি ছিল, দর্শক থিয়েটারকে প্রাণিত করুন। সঙ্গে দিয়েছেন বেশ কিছু স্থির চিত্র, যেখানে দেখা যাচ্ছে একটা। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ফেসবুকেই তিনি লিখেছেন, হল প্রায় প্রস্তুত।

দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি সুবোধ এই নাটকের কেন্দ্রীয় ও প্রতীকী চরিত্র। ছবি: ‘জীবন সংকেত’ নাটকের দলের সৌজন্যে
দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি সুবোধ এই নাটকের কেন্দ্রীয় ও প্রতীকী চরিত্র। ছবি: ‘জীবন সংকেত’ নাটকের দলের সৌজন্যে

হবিগঞ্জের তারুণ্যদীপ্ত নাট্য সংগঠন জীবন সংকেত-এর নতুন প্রযোজনা সামনে রেখে এ কথাগুলো রুমা মোদক লিখেছেন। তাঁর লেখা নতুন নাটক ‘ন-বৃত্তীয়’র তৈরি। কাল বৃহস্পতিবার ও পরশু শুক্রবার ‘ন-বৃত্তীয়’ নাটকের দুটি প্রদর্শনী। রুমা মোদকের লেখা নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ফজলুর রহমান। জীবন সংকেত নাট্যদলের এটি ৩৬তম প্রযোজনা। হবিগঞ্জ পৌর টাউন হলে নাটকটি দেখা যাবে সন্ধ্যা সাতটায়।

রুমা মোদক জানালেন, হবিগঞ্জে তিনটি মিলনায়তন। তার মধ্যে শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন সংস্কারকাজের জন্য ছয় মাস ধরে বন্ধ। শাহ এ এম এস কিবরিয়া মিলনায়তনটি নাটক প্রদর্শনীর জন্য ব্যবহারের অনুপযোগী। নাট্যকর্মীরা তো আর বসে থাকতে পারেন না। টাউন হলকেই নাটকের কাজে লাগাতে তাঁরা নেমে পড়েছেন। রুমা মোদক বলেন, ‘এই হলটা পুরোনো। পুরোনো টাউন হল ভেঙে সাইফুর রহমান অডিটরিয়াম হয়েছিল। কিন্তু সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত একটি হল ছিল সেটা। বর্তমানে এসি লাগিয়ে ইন্টেরিয়র সামান্য পাল্টে খুলে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। নাটক এই প্রথম আমরাই করছি। আগে সাইফুর রহমান মিলনায়তন ছিল, নাম বদলে এখন পৌর টাউন হল করা হয়েছে।’

কাল বৃহস্পতিবার ও ও পরশু শুক্রবার ‘ন-বৃত্তীয়’ নাটকের দুটি প্রদর্শনী হবে। ছবি: ‘জীবন সংকেত’ নাটকের দলের সৌজন্যে
কাল বৃহস্পতিবার ও ও পরশু শুক্রবার ‘ন-বৃত্তীয়’ নাটকের দুটি প্রদর্শনী হবে। ছবি: ‘জীবন সংকেত’ নাটকের দলের সৌজন্যে

দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতি সুবোধ এই নাটকের কেন্দ্রীয় ও প্রতীকী চরিত্র। ব্যক্তিজীবনে ও সমাজব্যবস্থার নানা প্রতিবন্ধকতায় সে পালিয়ে বেড়ায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয়। এমন গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘ন-বৃত্তীয়’ নাটকটি। নাটকটি প্রসঙ্গে নির্দেশক ফজলুর রহমান বলেন, ‘গল্পের থেকে চরিত্র রূপদানের ক্ষেত্রে প্রতীকী আশ্রয় নিতে হয়েছে। তবে প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীর কঠোর অধ্যবসায় নাটকটির সঙ্গে যুক্ত। এই অধ্যবসায় গল্প থেকে উপস্থাপনায় রূপ নিয়েছে। তবে অবশ্যই নাট্যকারের গল্পের বয়ান উপস্থাপনাকে অনেক সহজ করেছে। এখানে জীবন আর থিয়েটার মিলিত হয়েছে একবিন্দুতে। ব্যবস্থার ফাঁদ আর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই যখন একবিন্দুতে মিলে যায়, তখন মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়ায়।’

রুমা মোদকের মতে, একেবারে গল্পের বর্ণনা এ নাটক। বর্ণনার সঙ্গে কখনো যোগ হয়েছে গল্পের পেছনের দৃশ্য। বর্ণনাকারী নিজেও সে দৃশ্যের ভেতরেরই একজন। নাটকটি সত্যিকারের বোধসম্পন্ন মানুষের কাছে পৌঁছাবে বলে আমি মনে করি।’