মায়াবতীর খোঁজে

>

মায়াবতীর নায়ক–নায়িকা রোহান ও তিশা। ছবি: কবির হোসেন
মায়াবতীর নায়ক–নায়িকা রোহান ও তিশা। ছবি: কবির হোসেন

আগামীকাল শুক্রবার সারা দেশে মুক্তি পাচ্ছে অরুণ চৌধুরী পরিচালিত ছবি মায়াবতী। এ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন স্বপ্নজালখ্যাত ইয়াশ রোহান। যৌথভাবে আনোয়ার আজাদ ফিল্মস ও অনন্য সৃষ্টি ভিশনের প্রযোজনায় ছবিতে আরও দেখা যাবে ফজলুর রহমান বাবু, রাইসুল ইসলাম আসাদ, দিলারা জামান, মামুনুর রশীদ, ওয়াহিদা মল্লিক জলি প্রমুখকে। গত রোববার ছবিটি নিয়ে কথা হলো এর দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র তিশা ও রোহানের সঙ্গে। তাঁরা জানালেন মায়াবতীকে খুঁজে পাওয়ার গল্প।

‘কাপড়টা একটু বদলে আসি?’—চায়ের কাপটা টেবিলে রেখেই বললেন তিশা। আমরা হ্যাঁ–সূচক মাথা নাড়ি।

এরপর যে পোশাকটি তিনি পরে এলেন, তা তারই নকশা করা। অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশার এই গুণটি যাঁদের জানা নেই, তাঁরা এখন জেনে নিলেন। গান, অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের পোশাকের নকশাও করেন তিনি। সে যাক। এসেছিলাম ‘মায়াবতী’কে খুঁজতে। তাঁকে পাওয়া গেল। তাই দেরি করা নয়। কথার ঝাঁপি খুললাম আমরা।

‘কোনো সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান কারণই থাকে গল্প। বিশেষ করে আমি গল্প দেখেই একেকটা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হই। তা সিনেমা হোক কিংবা নাটক। মায়াবতীতে যুক্ত হওয়ারও প্রধান কারণ হলো গল্প। গল্পটা আমাকে ছুঁয়ে গেছে।’ সিনেমা নিয়ে এভাবেই বলতে শুরু করলেন তিশা।

মায়াবতীর মায়াবতী তিশা। তাই নায়িকার কাছেই জানতে চাই তাঁর চরিত্রটি নিয়ে। তিশা বলেন, ‘মায়াবতী এমনই একটি চরিত্র, যাকে দেখলে সাধারণ মেয়েদের খুব বড় হওয়ার ইচ্ছা জাগে। ছোট জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে যে মেয়েরা বড় হওয়ার ইচ্ছা লালন করে, তারা মায়াবতীর মধ্যে নিজেদের খুঁজে পাবে। এটা হচ্ছে এই চরিত্রের মূল জায়গা।’

চরিত্রটির নির্মাণ নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে বেশ কাজ করতে হয়েছে তিশাকে। কারণ চরিত্রের গেটআপ কিংবা মেকআপ থেকে মানসিক ব্যাপারটিই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামের এক সরল মেয়ে মায়াবতী। গানের গলা দারুণ। দালালের খপ্পরে পড়ে ঠাঁই হয় পতিতাপল্লিতে। সেখানে এক সংগীতগুরুর কাছে তালিম নিতে থাকেন গানের। অন্যদিকে মায়াবতীর গানের প্রেমে জড়িয়ে যান এক ব্যারিস্টার। তারপর ঘটে যায় এক খুন। শুরু হয় নতুন গল্প।

পতিতাপল্লির পরিবেশে চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলতে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে তিশার? উত্তরে বললেন, ‘এর জন্য আমাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি। দৌলতদিয়ায় আমি যখন গিয়েছি তখন ওই পরিবেশই আমাকে চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে। ওই পরিবেশ, আশপাশের মানুষ আমাদের সাহায্য করেছে। আমার দল, আমার পরিচালক সবাই চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে। সবকিছু মিলিয়ে বলব যে এটা একটা অসাধারণ জার্নি ছিল।’

এ পর্যন্ত বেশ কটি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিশা, তাতে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন শাকিব খান, ইরফান খান (ভারত), মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরীর মতো অভিনেতারা। তরুণ ইয়াশের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিশা বললেন, ‘কাজ করতে গিয়ে আমরা অনেক মজা করেছি। এটাকে আমি বলি এমন যে বাদাম খেতে খেতে কাজ শেষ হয়ে গেছে।’

সেদিন ছিল রোববার। কড়া রোদ। আমাদের সঙ্গে ছিলেন প্রথম আলোর আলোকচিত্রী। বারবার তাগাদা চলে ছবি তোলার। কথাও চলে আসে শেষ দিকে। শেষ কথাটা বলি। আমাদের কথায় উঠে আসেনি এমন কিছু কি আছে? তিশার উত্তর ছিল, ‘আমি সব জায়গায় বলে এসেছি। এই সিনেমার একটা মেসেজ আছে, যাকে কেন্দ্র করেই সিনেমাটি গড়ে উঠেছে। তা হলো প্রত্যেক মানুষের “না” বলার অধিকার আছে। এটাকে প্রত্যেক মানুষেরই শ্রদ্ধা করা উচিত। আমি বলব, দর্শক সিনেমাটা দেখবেন। আনন্দ পাবেন। সঙ্গে একটি ছোট্ট মেসেজ নিয়েও ফিরবেন।’

এ সময়ের রোমান্টিক হিরো

‘জানেন তো ডিএসএলআর দেখলেই ভয় লাগে। ফটোশুটে খুব আনকমফর্টেবল হয়ে যাই।’ চোখে চশমা পরা ছেলেটি বলল স্মিত হেসে। দেখলে মনে হবে পড়ুয়া কোনো বাধ্য ছাত্র। হুট করেই ক্যামেরার সামনে চলে এসেছে। আসলে তা নয়। তিনি এই সময়ের বাংলা সিনেমার ‘রোমান্টিক হিরো’ ইয়াশ রোহান। বয়সে একেবারে তাজা, সবুজ, টগবগে। 

ভাদ্রের ভরদুপুরে দেখা ইয়াশের সঙ্গে। স্বপ্নজাল ছবিতে তাঁকে চিনি অপু হিসেবে। প্রথম ছবিতেই একেবারে দর্শকের মনে ঢুকেছেন। গত রোববার কথা হলো পরের ছবি নিয়ে। অরুণ চৌধুরীর মায়াবতী। তাঁর বিপরীতে আছেন দুর্দান্ত অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। 

কড়া চা সঙ্গে নিয়ে কথা চলে। কথা বলায় বেজায় সিরিয়াস ইয়াশ। সেই গাম্ভীর্য কাটালেই মুখে হাসি। ‘একটা ভালো গল্পের খোঁজেই মায়াবতীর সঙ্গে দেখা। প্রত্যেক শিল্পীই চায় একটা ছবিতে অভিনয় করার সময় ভালো গল্প খুঁজতে। মায়াবতীতে দারুণ একটি গল্প আছে।’ মায়াবতী সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হওয়া নিয়ে ইয়াশের মন্তব্য এমন। ছবিটির প্রস্তাবের দিনক্ষণ এখনো মনে আছে তাঁর, ‘সেদিন ছিল বাবা নরেশ ভূঁইয়ার জন্মদিন। ছবির পরিচালক অরুণ চৌধুরী বাসায় আসেন। গল্পটি শোনান। শুনে বেশ পছন্দ হয় ইয়াশের। মা শিল্পী সরকার অপুর সঙ্গে আলোচনা চলে। তারপরই ছবিটি করার সিদ্ধান্ত হয়। বলে রাখা ভালো, ইয়াশের বাবা ও মা দুজনই অভিনয়জগতের অনন্য নাম। তাই ইয়াশের সিনেমা নিয়ে কথাবার্তায় অজান্তেই ঢুকে পড়েন তাঁরা।’

‘আমার চরিত্রের নাম ইকবাল। বাবা ব্যারিস্টার। আমি মায়ের সঙ্গে থাকি। বাবার সঙ্গে আমার একটা দ্বন্দ্ব আছে। এই দ্বন্দ্বটাই গুরুত্বপূর্ণ ছবিটাতে। এই তো। এর বেশি কিছু বলতে চাই না চরিত্র নিয়ে। সাক্ষাৎকারে এত এত বলেছি। দর্শকের জন্য কিছু থাকুক। তবে এতটুকু বলে রাখি, স্বপ্নজাল–এর প্রেমিক অপু আর মায়াবতীর ইকবালের সঙ্গে বিস্তর তফাত আছে। তা দেখার জন্যই দর্শককে আসতে হবে সিনেমা হলে।’

শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? ইয়াশ বললেন, ‘অভিজ্ঞতার থেকে উপলব্ধি ছিল এই ছবির বড় পাওয়া। আমরা দৌলতদিয়ায় শুটিং করি। দৌলতদিয়ায় এ দেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লি আছে। আমি কখনো এমন কোথাও যাইনি। সেখানে গিয়ে আমি বুঝতে পারি যে এখানে যারা আছে, তারা আমাদেরই মতো। তারাও মানুষ। তাদের সঙ্গে মিশে জানতে পারি, এই রকম কাজে কেউ নিজের ইচ্ছায় যায় না। এই মানুষগুলো খুবই অসহায়। আমরা যত তাদের গ্রহণ করব, তারা তত এই প্রফেশন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। এই উপলব্ধিটা আমার কাছে বিশাল বড় পাওয়া।’

এবার আমরা কথার চাল অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিই। স্বপ্নজাল ছবিতে ইয়াশের সঙ্গে অভিনয় করেছেন পরীমনি। বয়সে তিনি ইয়াশের চেয়ে বড়। মায়াবতী সিনেমায় তাঁর নায়িকা নুসরাত ইমরোজ তিশা। বয়সে তিনিও বড়। প্রেমের রসায়নে কোনো ছেদ পড়ে? ইয়াশ একগাল হেসে বলেন, ‘আমরা সেটে খুবই বন্ধুর মতো ছিলাম। আমি কাজপাগল মানুষ। এটাই আসলে আমাদের দুজনকেই অভিনয়ে সাহায্য করে। আরেকটা ব্যাপার হলো, আমার বয়সটাই এমন জায়গায় বড় পর্দা বলেন, ছোট পর্দা বলেন যার সঙ্গেই কাজ করতে যাই সে বয়সের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিই। অভিনয়ে কোনো সমস্যা হয় না।’

রোদ বাড়ে। আমাদের কথাও শুকিয়ে আসে। ইয়াশ জানান, হাতে আছে আরও দুটি ছবি। আদম ও পরান। আদম–এ তাঁর বিপরীতে দেখা যাবে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশীকে। পরান ছবিতে দেখা যাবে বিদ্যা সিনহা মিমের সঙ্গে। আরও দুটি ছবির কথা চলছে। তবে এখনো চূড়ান্ত নয়। আপাতত মায়াবতী হলে আসার অপেক্ষা।