প্রশংসিত খোলামেলা জেলো

টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে জেনিফার লোপেজ। ছবি: জেনিফার লোপেজের ইনস্টাগ্রাম
টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে জেনিফার লোপেজ। ছবি: জেনিফার লোপেজের ইনস্টাগ্রাম

‘হাস্টলারস’ আর জেনিফার লোপেজ—দুইয়ে মিলে ভালোই জমেছে এবারের টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসব (টিআইএফএফ)। ‘হাস্টলারস’ বছরের কাঙ্ক্ষিত ছবিগুলোর একটি। আর জেলো তো জেনিফার লোপেজ। তাঁর নামের আশপাশে পরিচয়সূচক বিশেষণের প্রয়োজন পড়ে না। তাঁর নামই বলে দেয় তিনি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় গায়িকা, নায়িকা, আরও অনেক কিছু।

টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবের তৃতীয় দিন রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে ‘হাস্টলারস’। নারীদের উঁচু হিল, ছোট ছোট পোশাক, পুল ড্যান্স, আলো–ঝলকানো মঞ্চ, অন্ধকার জগৎ—সব মিলিয়ে নারীবাদী ধাঁচের এই ছবিকে একটা শব্দে বলা হচ্ছে ‘গ্ল্যামারাস’। এই ছবির পরিচালক লরেন স্কাফারিয়া বললেন, ছবিটি নারীদের গল্প, যেখানে পুরুষতান্ত্রিক এক সমাজে প্রথা ভেঙে তাঁরা নিজেদের গল্প নিজেরাই লিখেছেন।

এই ছবি দর্শকদের কেন ভালো লাগবে? পরিচালকের মতে, ‘হাস্টলারস’ (বাংলা অর্থ প্রতারক) বলতেই সবার ভাবনায় একটা পূর্বনির্ধারিত ধারণা তৈরি হয়। কিন্তু ছবিটা দেখতে বসে তা মিলিয়ে যায়। সবাই এখানে অন্য কিছুর স্বাদ পায়। তাই দিন শেষে সবাই নতুন একটা অনুভূতি নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবে।

ছবিতে জেলোর চরিত্রের নাম রামোনা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটা ক্লাবে নাচিয়ে। দলে যুক্ত হওয়ার পর ডরোথি এক কেলেঙ্কারি ঘটায়। মাদক আর অর্থ লুটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এই ডরোথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মার্কিন অভিনয়শিল্পী কনস্ট্যান্স হুর। ছবিটি ২০০৮ সালে ঘটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। যার প্রভাব পড়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে। পরে এই ঘটনা ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনে সিরিজ আকারে প্রকাশিত হয়।

চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী শেষে সংবাদ সম্মেলনে জেলো সাংবাদিকদের বলেছেন এই ছবি নিয়ে তাঁর অনুভূতি। বার্তা সংস্থা এপির ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জেনিফার লোপেজ বলেছেন, ‘বার ড্যান্সার, নারী যৌনকর্মী—তাদের সব সময় পুরুষের চোখ দিয়ে দেখানো হয়েছে। কিন্তু এই ছবিতে তাদের দেখা যাবে নারীর চোখে। মানুষ কেবল পেশা দিয়ে একজন নারীকে বিচার করে। সেগুলো পুরোনো আমলের সব পুরুষতান্ত্রিক ধারণা। এই বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে ভেঙে চুরমার করে দেয় এই ছবি। এই নারীদের পেশাজীবী মোড়কের বাইরে ভেতরের সত্তাকে চিনতে সুবিধা হবে।’

তবে জেলো আরও জানিয়েছেন, তাই বলে এই নয় যে পুরুষেরা ভালো না। তিনি পুরুষদের ভালোবাসেন। আর চমৎকার সব পুরুষকে চেনেন। দিন শেষে এই ছবির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণ হিসেবে জেলো নিয়েছেন পরিচালকের নাম। বলেছেন, ‘লরেন স্কাফারিয়া যেভাবে গল্পটা বলতে চেয়েছিল, এই ধরনটা আমাকে আকর্ষণ করেছে। আমিও সেই গল্প বলার অংশ হতে চেয়েছি।’

গত বছরের মতো এ বছরও টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ মানুষের তালিকায় স্থান পেয়েছেন জেলো। তিনি একাধারে গায়িকা, অভিনয়শিল্পী, উদ্যোক্তা, ফ্যাশন ডিজাইনার, প্রযোজক ও নৃত্যশিল্পী। আর সব ক্ষেত্রেই তিনি সফল। বয়স যে কেবল একটা সংখ্যা, তা তো ‘হাস্টলারস’ ছবিতেই দেখিয়েছে। অর্ধশত বয়সের ঘরে দাঁড়িয়ে সবটা উজাড় করে নিজের শারীরিক সৌন্দর্য মেলে ধরেছেন। আর সেই সৌন্দর্যে মাত হয়েছে টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসব।

এত সফলতার রহস্য কী? উত্তরে জেনিফার লোপেজ বলেছেন, ‘আমি কিছু পাওয়ার জন্য কিছু করি না। আমি যা ভালোবাসি, তা করার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিই। আমি আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই। তাই আমার হৃদয় যা বলে, তা–ই করি।’

জেনিফার লোপেজ আরও জানিয়েছেন, ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে নাকি অনেকের উপদেশ শুনে অনেক কিছু করেছেন। তবে যেদিন কান পেতে নিজের মনের কথা শুনেছেন, সেদিন থেকেই জীবন বদলে গেছে তাঁর। এরপর জেনিফার লোপেজকে দেখা যাবে ‘দ্য গডমাদার’ চলচ্চিত্রে। মাদকের গডমাদার গ্লিসেন্ডা ব্ল্যাঙ্কোর চরিত্রে।

আগামীকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পাবে ‘হাস্টলারস’।