নাট্যকর্মীদের জন্য আয়ের সুযোগ

এসআরকে স্টুডিওসে কণ্ঠ দিচ্ছেন শিল্পীরা।  ছবি: সংগৃহীত
এসআরকে স্টুডিওসে কণ্ঠ দিচ্ছেন শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত

মঞ্চনাটকে পেশাদারত্ব এখনো গড়ে ওঠেনি। তরুণ নাট্যকর্মীদের ভিন্ন পেশায় যুক্ত থেকেই মঞ্চনাটকের চর্চা করতে হয়। সেই প্রেক্ষাপটে মঞ্চনাটক তরুণদের জন্য বিকল্প উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে সামনে এসেছে ডাবিংশিল্প বা কণ্ঠাভিনয়। অনেকে স্থায়ী পেশা হিসেবেও শিল্পটিকে গ্রহণ করছেন।

বিদেশি সিরিয়াল, কার্টুন, অ্যানিমেশন, বিদেশি সিনেমা, বিজ্ঞাপন, সিনেমাসহ ডাবিং কিংবা কণ্ঠাভিনয়-সংশ্লিষ্ট নানা কিছুর সঙ্গে কাজ করছেন মঞ্চনাটক চর্চাকারী পাঁচ শতাধিক তরুণ নাট্যকর্মী। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঞ্চনাটকে যেহেতু উপার্জনের সুযোগ নেই, সেহেতু কণ্ঠাভিনয় করে উপার্জনের সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে, পাশাপাশি মঞ্চনাটক চর্চায়ও ব্যাঘাত ঘটছে না।
দেশে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিদেশি সিনেমা, ধারাবাহিক, অ্যানিমেশন প্রচারিত হওয়ায় এই ক্ষেত্রের পরিসর বাড়ছে। দুরন্ত টিভি ও দীপ্ত টেলিভিশনে আলাদা ডাবিং দল আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ডাবিং স্টুডিওতেও কাজ করেন অনেক নাট্যশিল্পী। সেখানে স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করেন পাঁচ শতাধিক ডাবিংশিল্পী।

দুরন্ত টিভি সূত্র জানিয়েছে, চ্যানেলটিতে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩০০ জনেরও অধিক নাট্যকর্মী কাজ করছেন। তবে তাঁরা শুধু যে কণ্ঠাভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত, এমনটি নয়। কণ্ঠাভিনয়ের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগ যেমন—প্রযোজনা, শব্দ সম্পাদনা, পাণ্ডুলিপি তত্ত্বাবধান, সম্পাদনা, অনূদিত সংলাপ রচনাসহ (এডিটিং) নানা সৃজনশীল কাজে যুক্ত তাঁরা। দীপ্ত টিভির ডাবিং বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, তাদের বিভাগে স্থায়ীভাবে ডাবিংশিল্পী হিসেবে কাজ করছেন ২৫ জন, অনুবাদে ২১ জন, শব্দ পরিকল্পনায় ১৭ জন ও ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করছেন ৩ জন। এই বিভাগে স্থায়ী ও অস্থায়ী ডাবিংশিল্পী–কলাকুশলী মিলিয়ে প্রায় ২০০ জন কাজ করেন। এঁদের বেশির ভাগই থিয়েটার থেকে আসা। টিভি চ্যানেলের বাইরে এসআরকে স্টুডিওস ডাবিং নিয়ে কাজ করছে। সেখানেও অনেক নাট্যকর্মী কাজ করছেন। স্টুডিও সূত্র জানিয়েছে, ১০০ জনের ওপরে ডাবিংশিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি কাজ করছেন স্টুডিওটিতে। তাঁদের সিংহভাগই মঞ্চ থেকে আসা।

তবে এই শিল্পীরা নিজেদের ভয়েস আর্টিস্ট বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আরণ্যক নাট্যদলে কাজ করেন কামরুল ইসলাম। তিনি এসআরকে স্টুডিওসে পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন পরিচালক হিসেবে কাজ করছি। নিজেও থিয়েটার করি। ৫০ জনকে ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে তৈরি করেছি। তাঁরা কাজ করছেন। তাঁদের নিজের খরচ চালিয়ে থিয়েটার করতে পারছেন। পাশাপাশি অন্যান্য চ্যানেলেও ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন। এখানকার ৯০ শতাংশ শিল্পীই মঞ্চ থেকে আসা। তাঁরা এখান থেকেই উপার্জন করেন। এখানে কাজ করে মঞ্চে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছেন। থিয়েটারকর্মীদের জন্য এটা বেশ ইতিবাচক।’

সংগীতা চৌধুরী কাজ করেন নাট্যকেন্দ্রে। তিনি তুর্কি ধারাবাহিক সুলতান সুলেমান–এ হুররাম চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন। সংগীতা বলেন, ‘ডাবিংশিল্পটা বাংলাদেশে একেবারে নতুন নয়। ধীরে ধীরে এটি শিল্প হিসেবে তৈরি হয়েছে। মূলত যাঁরা বাচিক মাধ্যমে কাজ করেন ও থিয়েটারে কাজ করেন, তাঁরাই ডাবিংশিল্পের সঙ্গে জড়িত। মঞ্চকর্মীদের জন্য নয়টা–পাঁচটা অফিস করে মঞ্চনাটক চর্চা করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। সেখানে ডাবিংশিল্পের সঙ্গে কাজ করে থিয়েটার করাটা বেশ সুবিধার। অনেকে আছেন শুধু ডাবিং করেই সংসার চালাচ্ছেন। অভিনয়ের ক্ষেত্রে ভালোলাগার একটা জায়গা থাকে। অনেকেই টেলিভিশন বা সিনেমায় কাজ পান না। সে জায়গায় কণ্ঠ ভালো হলে ডাবিংয়ে তিনি অনেক ভালো করতে পারেন। ওই জায়গা থেকে থিয়েটার আর্টিস্টদের অনেক উপকার হয়েছে।’
দীপ্ত টিভির প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন তরুণ মঞ্চকর্মী শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে এখানে অনেকেই কাজ করছেন, যাঁরা নিয়মিত থিয়েটারের চর্চা করেন। এখানে যেহেতু ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজের সুযোগ আছে, তাই মঞ্চনাটক চর্চায় খুব বেশি ব্যাঘাত ঘটছে না।’
দুরন্ত টিভির অনুষ্ঠানপ্রধান মোহাম্মদ আলী হায়দার বলেন, ‘এটার একটা ভালো দিক আছে বাংলাদেশে থিয়েটারে। যারা থিয়েটার করে, ছেলেমেয়েগুলোর কর্মসংস্থান হলো। এটা একটা বড় ব্যাপার। আমার এখানেও অনেক ছেলেমেয়ে কাজ করছে। অনেকের ছাত্রাবস্থা থেকেই একটা আয়ের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। থিয়েটার থেকে আমাদের কোনো আয় ছিল না। এখন এই কাজটা করে আয় করতে পারছে।’

এসআরকে স্টুডিওসের সিইও শিপলু রহমান খান বলেন, ‘এটা অবশ্যই ইতিবাচক। যেকোনো জায়গায় কর্মসংস্থান হওয়াটাই ইতিবাচক ব্যাপার। ডাবিংয়ের সঙ্গে জড়িত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে থিয়েটারকর্মীরা। বয়স্ক লোকজনও কাজ করছেন এখানে। আমরা আনন্দিত যে এটার অংশ হতে পেরেছি।’