কাজলের 'সুপার মম' তনুজার জন্মদিন

বলিউড তারকা কাজলের মা তনুজা মুখার্জির আজ জন্মদিন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
বলিউড তারকা কাজলের মা তনুজা মুখার্জির আজ জন্মদিন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

‘আমার অসাধারণ সুপার মাকে অসাধারণ সুপার জন্মদিনের শুভেচ্ছা। তিনি সেই মানুষ, যিনি আমাকে শিখিয়েছেন, সুপার নারীরা কীভাবে সুপার হয়!’ বলিউড তারকা কাজল তাঁর মা তনুজা মুখার্জির জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আজ সোমবার সকালে। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে মায়ের একাধিক ছবি শেয়ার করেন। ঘরে সাজানো মায়ের বিভিন্ন সময়ের ছবির ভিডিও ধারণ করে তা প্রকাশ করেছেন অনুসারীদের জন্য। কাছাকাছি সময়ে মায়ের সঙ্গে আরও চারটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘দুই কন্যা এবং দুই মা!’ আর কাজলের বোন তানিশা দুই বোনসহ মায়ের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন আমার প্রিয়তম মা, আপনার জন্যই আমাদের অস্তিত্ব।’

তনুজা মুখার্জি আট-দশজন সমকালীন বলিউড তারকার মায়ের মতো মোটেও সন্তানের পরিচয়ে পরিচিত ‘মা’ নন। বরং তিনি স্বনামেই বিখ্যাত, একসময়ের সাড়া জাগানো তারকা মুখ। তনুজা মুখার্জি একসময় বলি-টলি দুই পর্দাই কাঁপিয়েছিলেন একই সঙ্গে। হিন্দি, বাংলা, মারাঠি আর গুজরাটি ছবিতে কাজ করে এই অভিনেত্রী পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। তনুজা মুখার্জি বলিউড তারকা কাজল আর তানিশার মা। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর ৭৬তম জন্মবার্ষিকী।

সেকালের তনুজা আর একালের তনুজা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
সেকালের তনুজা আর একালের তনুজা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

জন্মদিন আর কাজলের মন্তব্যের সূত্র ধরে এই প্রতিবেদন। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমসের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে তথ্য।

শুরুতে সমকালীন একটি বাংলা ছবির কথা বলি। অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের খুব চলছে ছবিটা। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘সোনার পাহাড়’ ছবিতে দেখা গেছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও তনুজাকে। বহু বছর পর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তনুজা। মা-ছেলের সম্পর্ক, আর সম্পর্কের মাঝের শূন্যতা নিয়ে তৈরি হয়েছে ছবিটি। সম্পর্ক কীভাবে কখন বদলে যায়, কে কার জায়গা নিয়ে নেয়, বলা খুবই কঠিন। আর সেই সমস্যাতেই পড়ে জ্বলতে থাকা এক মায়ের কাহিনি বলছে ‘সোনার পাহাড়’। দুই অসম বয়স্কের বন্ধুত্বের এক গল্প তুলে আনছে। তনুজার চরিত্রটি কেন্দ্রীয়, নাম উপমা। যিনি আরও অনেক বাঙালি মায়ের না বলা দুঃখের উপমা হয়েছিলেন ছবিতে। কী অসাধারণ অভিনয় করেছেন তিনি, কী দারুণ ব্যক্তিত্ব!

ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মারা যায়। সেই জলোচ্ছ্বাসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রয়াত চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির নির্মাণ করেন ‘সীমানা পেরিয়ে’ চলচ্চিত্রটি। এটি মুক্তি পায় ১৯৭৭ সালে। সেই ছবিতে অভিনয় করেন বুলবুল আহমেদ, জয়শ্রী কবির, মায়া হাজারিকা, কাফী খান, গোলাম মুস্তাফা ও বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তনুজা। ছবিতে তনুজার সাবলীল অভিনয় আলোচিত হয়।

কাজল লিখেছেন, ‘দুই কন্যা এবং দুই মা’। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
কাজল লিখেছেন, ‘দুই কন্যা এবং দুই মা’। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

তনুজা মুখার্জি ১৯৪৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের এক মারাঠি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কুমারসেন সমর্থ ছিলেন কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক আর মা শোভনা সমর্থ চল্লিশের দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। এই দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় তিন মেয়ে আর এক ছেলে। তনুজা ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান।

সত্যিকার অর্থে একজন বহুমুখী ভারতীয় অভিনেত্রী। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ভারতীয় চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন; সক্রিয় ছিলেন ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল কম। তাই অভিনয়জগতে মনোনিবেশ করেন। তাঁর গুণী মায়ের সাজসজ্জা খুব ভালো লাগত। বড় বোন নূতনের সঙ্গে ১৯৫০ সালে ‘হামারি বেটি’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্র অভিনয় করেন। আর ১৯৬০ সালে ‘ছাবিলি’ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় তাঁর। ছবির পরিচালক ছিলেন তাঁর মা শোভনা। এরপর একে একে অসংখ্য বাংলা ও হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তিনি কিদার শর্মার ‘হামারি ইয়াদ আয়েগি’ (১৯৬১) চলচ্চিত্রের মাধ্যমে খ্যাতির শিখরে পৌঁছান।

দুই মেয়ে কাজল ও তানিশার সঙ্গে তনুজা মুখার্জি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
দুই মেয়ে কাজল ও তানিশার সঙ্গে তনুজা মুখার্জি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

পরিচালক শহীদ লতিফের ‘বাহারেঁ ফির ভি আয়েঙ্গি’ (১৯৬৬) ছবিতে ‘ওহ্হাসকে মিলে হামসে’ গানের মাধ্যমে তিনি সবার নজর কাড়েন। জিতেন্দ্রর সঙ্গে ‘জিনে কি রাহে’ (১৯৬৯) ছবিতে অভিনয় করে ব্যাপক ব্যবসাসফল হন। ওই বছর তনুজা ‘পয়সা ইয়ে পেয়ার’ ছবির মাধ্যমে ফিল্মফেয়ারে সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। ‘হাতি মেরে সাথি’ (১৯৭১) চলচ্চিত্রটি সফলতা লাভ করে। পরবর্তী সময়ে ‘মেরে জীবন সাথি’, ‘দো চোর’, ‘একবার মুসকরা দো’ (১৯৭২), ‘পবিত্র পাপী’ (১৯৭০), ‘ভূত বাংলা’, ‘অনুভব’ প্রভৃতি ছবিতেও তিনি অভিনয় করেন।

গত শতকের ষাটের দশকে তনুজা কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রে সমানতালে অভিনয় শুরু করেন। তিনি মনে করেন, বাংলা চলচ্চিত্র তাঁকে অন্য মাত্রা দিয়েছে এবং তাতে তিনি আত্মতৃপ্তি পেতেন। বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি উত্তমকুমারের বিপরীতে অভিনয় করেন ‘দেয়া নেয়া’ (১৯৬৩), ‘অ্যান্টনি-ফিরিঙ্গি’ (১৯৬৭), ‘রাজকুমারী’ (১৯৭০) অন্যতম। উত্তমকুমার ছাড়াও তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে কয়েকটি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ‘তিন ভুবনের পাড়ে’ (১৯৬৯) ও ‘প্রথম কদম ফুল’ অন্যতম। অনেক দিন বিরতির পর তিনি ‘সাথিয়া’ (২০০২), ‘রুলস’ (২০০৩), ‘খাকি’ (২০০৪), ‘সান অব সরদার’সহ আরও কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ছোট পর্দায়ও বেশ কিছু অভিনয় করেছেন। ‘বাব্বান ভাই ভার্সেস বিমলা তাই’ ও ‘আরম্ভ’ উল্লেখ করা যেতে পারে। তনুজাকে সর্বশেষ ‘ডেথ ইন আ গুঞ্জ’ আর ‘সোনার পাহাড়’ ছবিতে দেখা গেছে। শোনা যায়, বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি নিজেই ছবির সংলাপ বলতেন। লিখিত সংলাপ বলতেন খুব কম।

দুই মেয়ে, নাতি এবং মেয়েজামাই অজয় দেবগনকে নিয়ে জন্মদিন উদ্‌যাপন করছেন তনুজা মুখার্জি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
দুই মেয়ে, নাতি এবং মেয়েজামাই অজয় দেবগনকে নিয়ে জন্মদিন উদ্‌যাপন করছেন তনুজা মুখার্জি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

১৯৭৪ সালে তনুজা বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক সমু মুখার্জিকে বিয়ে করেন। কাজল ছাড়াও তাঁদের আরেক মেয়ে তানিশা মুখার্জিও অভিনয় করছেন। ২০০৮ সালের ১০ এপ্রিল সমু মুখার্জি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

জীবনে অনেক সংগ্রাম ও সাধনা করে তনুজা ভারতীয় চলচ্চিত্রে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। ইদানীং শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। চেহারায় বয়সের স্পষ্ট ছাপ। গত ২৫ মে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী তনুজা। মারাত্মক পেটে ব্যথার জন্য সম্প্রতি তাঁকে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পেটে টিউমার ধরা পড়ায় তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচার করতে হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের পর তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল।