সেন্সরশিপ না থাকায় অনলাইনে নৈরাজ্য

নায়িকার শরীরে মেহনযন্ত্র, আর তাঁর দাদির হাতে রিমোট কন্ট্রোল। প্রৌঢ় দাদি সেটা দিয়ে টেলিভিশন চালানোর চেষ্টা করতেই নায়িকা হয়ে উঠলেন উত্তাল। নেটফ্লিক্সের ছবি লাস্ট স্টোরিস-এ কিয়ারা আদভানি অভিনীত একটি দৃশ্য এটি। বড় পর্দার জন্য বানানো হলে হয়তো এ দৃশ্য কেটে বাদ দিত সেন্সর বোর্ড। কিন্তু অনলাইন দুনিয়া অবাধ। বহুকালের অনুশাসন থেকে যেন মুক্তি পেয়েছেন চলচ্চিত্রকারেরা। সেন্সরশিপ না থাকায় অনলাইনে কি তবে সৃষ্টি হবে নৈরাজ্য?

বাধ্যবাধকতা বা ন্যূনতম নিষেধাজ্ঞা নেই। সে কারণে যা খুশি তা-ই দেখানোর স্বাধীনতা রয়েছে অনলাইন দুনিয়ায়। টেলিভিশন বা চলচ্চিত্রে যা দেখানো যায় না, সেগুলোই জুড়ে দিয়ে বাজারে চালানোর উপযোগী করা হচ্ছে সিনেমা ও ধারাবাহিকগুলোকে। সারা পৃথিবীতেই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দেখানো নাটক-সিনেমায় জুড়ে দেওয়া হচ্ছে সহিংসতা, যৌনতা, অশালীন ভাষা ও মাদকসেবনের দৃশ্য। যে দৃশ্যগুলো গোপন রাখা চিরাচরিত নিয়ম, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সামনে যে শব্দগুলো সাধারণত উচ্চারণ করা হয় না, সেগুলোকেই তাঁরা সামনে টেনে আনছেন।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এই অনলাইন কনটেন্টের ওপর নিজেদের মতো করে সেন্সরশিপ আরোপের চেষ্টা করছে। সারা পৃথিবীর কাছে জনপ্রিয়তা পাওয়া ওয়েব সিরিজ গেম অব থ্রোনস-এর ছয় মিনিট বাদ দিয়ে প্রচার করেছিল চীন। সেক্রেড গেমস-এ রাজনীতিবিদ রাজীব গান্ধীকে নিয়ে একটি অশালীন সংলাপ বলার কারণে থানায় অভিযোগ করেছেন এক রাজনীতিক। এমনকি কলকাতার ওয়েব ধারাবাহিক দুপুর ঠাকুরপো-এর পরের মৌসুমে অপেশাদার আচরণের দোহাই দিয়ে কাজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রী।

সিনেমা ও টিভিতে দেখানোর জন্য ভারতের কনটেন্টগুলোর ক্ষেত্রেও কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে এখনো সেটা নেই। এ কারণে ডার্ক ক্রাইম, সহিংসতা, যৌনতা ও অশালীন ভাষার ব্যবহার বাড়ছে। দেখানো হচ্ছে না স্বাস্থ্যঝুঁকির সতর্কতামূলক কোনো বার্তা।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার মনে করেন, প্রতিটি দেশের উচিত নিজেদের মতো করে একধরনের সেন্সরশিপ নীতিমালা তৈরি করা। সব দেশই সেটা করে। কেননা, ব্যবসায়ীরা মুনাফার জন্য সবকিছুকে বিক্রির উপকরণ করে তুলতে পারেন। তবে এও মাথায় রাখা দরকার, সেন্সরশিপ আরোপ করতে গিয়ে সংকীর্ণ পর্যায়ে চলে গেলে সেটা ভালো হবে না। উদারতারও দরকার আছে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। তবে সেটা জেনে ও নিজের প্রয়োজন বুঝে।

সবচেয়ে স্বাধীন ও বিনা মূল্যের ভিডিও দেখার মাধ্যম এখন ইউটিউব। সারা পৃথিবী থেকে এতে কনটেন্ট আপলোড করা হয়। বাংলাদেশ এদিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু এমন কিছু কনটেন্ট সেখানে উঠছে, যেগুলো আদতে প্রকাশযোগ্য কি না, তা নিয়ে ভাবনার অবকাশ আছে। সে রকম একটি সিরিজ শোবার ঘর।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ের বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সাকিব আর খান বলেন, শিল্পে সেন্সরশিপ আরোপ করা ঠিক নয়। তবে নির্মাতাদেরও মাত্রা জেনে কাজ করতে হবে। সবকিছু দেখিয়ে দেওয়া কোনো কাজের কথা নয়। অনেক ক্ষেত্রে নির্মাণের গুণেও অনেক কিছু দেখার যোগ্য হয়ে ওঠে।