বাড়ছে সুন্দরী প্রতিযোগিতা

মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় গতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী (মাঝে)। সম্প্রতি এ ধরনের অনেক প্রতিযোগিতার খবর পাওয়া গেছে।  ছবি: সংগৃহীত
মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় গতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী (মাঝে)। সম্প্রতি এ ধরনের অনেক প্রতিযোগিতার খবর পাওয়া গেছে। ছবি: সংগৃহীত

হঠাৎ বেড়ে গেছে রিয়েলিটি শো সুন্দরী প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান। সম্প্রতি দেশে পাঁচটি প্রতিযোগিতার খবর পাওয়া গেছে। প্রতিযোগিতাগুলো হলো মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ, মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ, মিসেস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ, মিসেস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ও মিস ঢাকা।

বিভিন্ন শিরোনামে এ ধরনের সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন নিয়ে নানা মতামত পাওয়া গেছে। কেউ এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাঁদের বক্তব্য, এর মাধ্যমে বিজয়ীরা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরছেন। পাশাপাশি দেশের টেলিভিশন ও সিনেমাতে অবদান রাখছেন তাঁরা। জানা গেছে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক আয়োজক সংস্থাগুলো বাংলাদেশে এ ধরনের অনুষ্ঠান করার সুযোগ করে দিচ্ছে। ফলে এখানে নানা ধরনের সুন্দরী প্রতিযোগিতার খবর মিলছে।

অপূর্ব ডটকম নামের একটি প্রতিষ্ঠান গত ২১ সেপ্টেম্বর আয়োজন করে মিসেস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার। সেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন মুনজারিন অবন্তী। একই প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে এবার হতে যাচ্ছে মিসেস ইউনিভার্স বাংলাদেশ। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আবেদন করার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর গালা রাউন্ড। বিবাহিত মেয়েদের নিয়ে এ ধরনের প্রতিযোগিতা বাংলাদেশে এবারই প্রথম। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার অপূর্ব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিকভাবে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সে প্রতিষ্ঠানের অধীনে বাংলাদেশে হচ্ছে এই অনুষ্ঠান। এখানে একটা সাধারণ ধারণা আছে, তা হলো বিয়ের পর মেয়েদের কাজ হলো সংসারের কাজ করা। কিন্তু বিয়ের পরও মেয়েরা নানা কাজ করেন। সামাজিক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। সেই যোগ্যতা তাঁদের আছে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিবাহিত সেসব মেয়েদের খুঁজে বের করা হয়।

আয়োজকদের কী লাভ এখানে? এমন প্রশ্নে অপূর্ব বলেন, আর্থিকভাবে লাভের একটা ব্যাপার আছে। আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের মাধ্যমে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও পরিচিত বাড়ে। তিনি আরও জানান, হুট করেই কেউ এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারেন না। যে প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে এটি হচ্ছে, তার রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক আয়োজকদের মাধ্যমে করা হচ্ছে। কেননা, এখান থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ওই বিজয়ী আন্তর্জাতিক আয়োজকদের মঞ্চে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার জন্য যাচ্ছেন।

গত সোমবার থেকে মিস ঢাকা নামে একটি প্রতিযোগিতার আবেদন করার কাজ শুরু হয়েছে। সৌন্দর্যের পাশাপাশি সামাজিক কাজকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে এই প্রতিযোগিতায়। এর অন্যতম আয়োজক নাজমুল খান বলেন, ‘আমাদের এই আয়োজন একটু ব্যতিক্রম। শুধু বাইরের নয়, মনের সৌন্দর্যও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। মাদার তেরেসা, বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল, বেগম ফয়জুন্নেসা—এই চার আইকনকে উপলক্ষ করে এই আয়োজন।’

তিনি জানান, এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একজন তারকা বের করে আনা হচ্ছে, যিনি পরবর্তীকালে বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ নেবেন। তাঁকে দেখে অন্যরা উত্সাহিত হবেন। অনুষ্ঠান আয়োজন করে ব্যবসাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন না, সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের ব্যাপারটিকে তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি।

মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা পর্ব চলছে। ১১ অক্টোবর চূড়ান্ত পর্ব। এর আয়োজক এক্সপার্ট প্রোভাইডারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অপু খন্দকার মনে করেন, এ ধরনের একাধিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন সমস্যার নয়। তবে যাঁরা করছেন, তাঁরা প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক সংস্থার নিয়ম মেনে করছেন কি না, সেটা দেখার বিষয়। তিনি বলেন, ‘মিস ওয়ার্ল্ডের আয়োজক যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। তাঁদের অনুমতি নিয়ে আমরা তিন বছর ধরে বাংলাদেশে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছি। এখানে বছর বছর যাঁরা চ্যাম্পিয়ন হচ্ছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এ জন্য আন্তর্জাতিক আয়োজকদের তৈরি করা মান ঠিক রেখেই আমরা এখানে এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকি। কিন্তু এখানে আরও যেসব সুন্দরী প্রতিযোগিতা হচ্ছে, সেগুলো কীভাবে হচ্ছে, তা আমার জানা নেই।’

এই কর্মকর্তা মনে করেন, প্রতিযোগিতার মধ্যে শুধু মেধাবী সুন্দরীরাই বের হয়ে আসবেন, তাঁরা কেবল নায়িকা কিংবা মডেল হিসেবে কাজ করবেন, এমনটি নয়। তাঁদের লক্ষ্য থাকা উচিত বিভিন্ন চ্যারিটি শো, সামাজিক সংস্থার হয়েও কাজ করা।

মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার এবারের বিচারকদের একজন মৌসুমী। তিনিও লাক্স আনন্দধারা তারকা সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে বিনোদনজগতে আসেন। মৌসুমী বলেন, ‘সময় বদলেছে। তাই এ ধরনের ঘন ঘন সুন্দরী প্রতিযোগিতার সুযোগ হচ্ছে বাংলাদেশে। এখন অনলাইনের যুগ। খুব সহজেই আন্তর্জাতিক আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে, তাদের সঙ্গেও আন্তর্জাতিক আয়োজকেরা সহজেই যোগাযোগ করতে পারছেন। আমি মনে করি, এ ধরনের অনুষ্ঠান করতে আন্তর্জাতিক আয়োজকদেরও বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।’

এতে বাংলাদেশের আয়োজক প্রতিষ্ঠানগুলো জনপ্রিয় হচ্ছে, আবার এখান থেকে উঠে আসা মেয়েরা বিশ্বমঞ্চে নিজেদের তুলে ধরারও সুযোগ পাচ্ছেন। মৌসুমীর মতে, এখন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীসহ অনেকেই এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। এখানকার আয়োজকেরা যদি অংশগ্রহণকারীদের ভালোভাবে গড়ে তুলতে পারেন, আন্তর্জাতিক আয়োজক সংস্থার নিয়ম মেনে কাজ করতে পারেন, তাহলে এ দেশের মেয়েরাও মিস ওয়ার্ল্ডের মঞ্চে ভালো কিছু করতে পারবেন।