'প্রধানমন্ত্রীকে লেখা খোলা চিঠি কী করে রাষ্ট্রদ্রোহ হতে পারে?'

নাসিরুদ্দিন শাহ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
নাসিরুদ্দিন শাহ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বরাবর খোলা চিঠি লিখেছিলেন সেখানকার ৪৯ জন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। সেই চিঠিতে তাঁরা ভারতজুড়ে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও গণপিটুনি বন্ধের দাবি করেন এবং ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বার্তা ছড়ানোর প্রতিবাদ করেন। তার জেরে সেই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। এবার সেই মামলার বিরোধিতা করে ফের চিঠি লিখলেন ১৮০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। এই তালিকায় রয়েছেন অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ, সংগীতব্যক্তিত্ব টি এম কৃষ্ণা, ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার, লেখক অশোক বাজপেয়ি, জেরি পিন্টো, শিক্ষাবিদ ইরা ভাস্কর, কবি জিত্‍‌ থাইল প্রমুখ।

সোমবার চিঠি দিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা একটি চিঠির ভিত্তিতে কারও বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে? সেখানে বলা হয়েছে, ‘দেশে বেড়ে চলা গণপিটুনির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নাগরিক সমাজের দায়িত্ব পালন করার জন্য সাংস্কৃতিক জগতে আমাদের ৪৯ সহকর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে।’ তাঁরা স্পষ্টই বলেছেন, আইনের অপব্যবহার করে তাঁদের সহকর্মীদের হেনস্তা করা হচ্ছে।

চিঠিতে নাসিরুদ্দিনসহ বাকিরা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে লেখা খোলা চিঠি কী করে রাষ্ট্রদ্রোহ হতে পারে? তাঁদের বক্তব্য,‘আমরা সবাই ভারতীয় সংস্কৃতিমনস্ক হিসেবে, বিবেকবান নাগরিক হিসেবে এর তীব্র নিন্দা করি। আরও জানাই, আমাদের সতীর্থরা প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি লিখেছিলেন, তার প্রতিটি শব্দ আমরা সমর্থন করি। তাই এখানে আরও একবার শেয়ার করলাম এবং সংস্কৃতিমনস্ক, শিক্ষাবিদসহ সবাইকে ওই চিঠি শেয়ার করার আরজি জানাচ্ছি। এভাবেই আরও অনেকে প্রতিদিন প্রতিবাদ করবে। গণপিটুনির বিরুদ্ধে, জনগণের কণ্ঠরোধের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার করে হেনস্তা করার বিরুদ্ধে।’

মামলায় সাক্ষী হিসেবে কঙ্গনা রনৌতের নাম উল্লেখ করেছেন বাদী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
মামলায় সাক্ষী হিসেবে কঙ্গনা রনৌতের নাম উল্লেখ করেছেন বাদী। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

অসহিষ্ণুতা, গণপিটুনির মতো ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিন মাস আগে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন দেশের ৪৯ জন বুদ্ধিজীবী। সেই তালিকায় নাম ছিল রামচন্দ্র গুহ, শ্যাম বেনেগল, অনুরাগ কাশ্যপ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেনসহ আরও নানা বিখ্যাত ব্যক্তির। বিহারের এক আইনজীবীর অভিযোগের ভিত্তিতে চিঠিতে স্বাক্ষরকারী সব বুদ্ধিজীবীর বিরুদ্ধেই এফআইআর হয়। আইনজীবীর অভিযোগ, দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটানো এবং বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন এই ৪৯ জন নাগরিক। দেশদ্রোহের পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত এবং দেশের অখণ্ডতা ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে কঙ্গনা রনৌত, মধুর ভান্ডারকর, বিবেক অগ্নিহোত্রীর নাম উল্লেখ করেছেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়ে বিজেপি আর দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের রোষানলে পড়েন দেশের ৪৯ জন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন করে দেশের ৬১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি তাঁকে পাল্টা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন পার্ণো মিত্র, কাঞ্চনা মৈত্র, মিলন ভৌমিক, অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মধুর ভান্ডারকর, বিবেক অগ্নিহোত্রী, প্রসূন যোশী, সোনাল মানসিং, পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভট্টর প্রমুখ। তাঁদের মতে, দেশের একতা ও সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার জন্য এই চিঠি লিখেছেন দেশের ৪৯ জন ‘স্বঘোষিত অভিভাবক’। আন্তর্জাতিক মহলে সরকারের ভাবমূর্তি খারাপ করার উদ্দেশ্যে তাঁরা কাজ করছেন। তাঁরা আরও লিখেছেন, ‘মাওবাদী হামলায় যখন মানুষের মৃত্যু হয়, সিআরপিএফ জওয়ানদের প্রাণ যায়, তখন তাঁরা চুপ থাকেন। সন্ত্রাসবাদী হামলায় কাশ্মীরে যখন রক্ত ঝরে, তখন তাঁরা মুখ খোলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন দেশবিরোধী স্লোগান উঠেছে, তখনো তাঁদের কিছু বলতে শোনা যায়নি।’

এ বিষয়ে বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার বক্তব্য চিঠিতে স্পষ্ট করে বলেছি। তাতে কার আপত্তি হলো, কে কী বলল, তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। তারা আগে নিজেদের ঘর সামলাক।’ কবি শঙ্খ ঘোষ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে শুভচিন্তাসম্পন্ন লোকজন চিঠিটা দিয়েছিলেন, সেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তবে তার পাল্টা হিসেবে পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে চিঠি গিয়েছে, তা পুরোপুরি রাজনৈতিক স্বার্থে।’