চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে দাঁড়াননি কেন তাঁরা?

২০১৭ সালের ৫ মে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সবশেষ নির্বাচন হয়। নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মিশা-জায়েদ প্যানেল পাস করে। রোজিনা, অঞ্জনা, রিয়াজ, ফেরদৌস, পূর্ণিমা, পপি, ইমন, সাইমনসহ অনেক তারকা শিল্পী বিজয়ী হয়ে এই কমিটিতে আসেন। কমিটি গঠনের কিছুদিন পর ওমর সানী-অমিত হাসান প্যানেল থেকে বিজয়ী কার্যকরী পরিষদের সদস্য মৌসুমী ও নানা শাহ পদত্যাগ করলে কমিটির দুটি পদ শূন্য হয়। পরবর্তীকালে সমিতির কার্যনির্বাহী সংসদের মিটিংয়ে পাস করার মধ্য দিয়ে ওই দুটি পদে নিপুণ ও নিরবকে নেওয়া হয়। চলচ্চিত্রপাড়ায় অনেকেরই অভিমত, ১৯৮৪ সালের পর থেকে শিল্পী সমিতির যে কটি কমিটি হয়েছে, সবচেয়ে তারকাসমৃদ্ধ কমিটি ছিল এটি।

কিন্তু সেই জোট এবার ভেঙে গেছে। ২৫ অক্টোবর শিল্পী সমিতির নতুন নির্বাচন। নির্বাচনে তারকাদের মধ্যে অঞ্জনা, রোজিনা ও ইমন থাকলেও বেশির ভাগ তারকা শিল্পী, বিশেষ করে রিয়াজ, ফেরদৌস, পূর্ণিমা, পপি, নিপুণ, নিরব, সাইমন সাদিকরা এ নির্বাচনে নেই। কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে কেউ কেউ বলেছেন, শিল্পী সমিতির পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে, নোংরামি ঢুকে গেছে। আবার কেউ কেউ সময়ের অভাবের কথা বলেছেন।

ফেরদৌস বলেন, ‘এবার নির্বাচন না করার মূল কারণ নির্বাচনের তারিখ সমস্যা। যে মিটিংয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়, ওই মিটিংয়ে আমি বলেছিলাম নির্বাচন ১৮ অক্টোবর থেকে কয়েক দিন পিছিয়ে দিতে। কিন্তু সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১২-১৩ জন মিলে পেছালেন না। কিন্তু পরে ঠিকই পিছিয়ে ২৫ অক্টোবর করা হয়েছে। অথচ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা পুরো ২১ সদস্যের কমিটির বাইরে করতে পারেন না তাঁরা।’

ফেরদৌস আরও বলেন, ‘মিটিংয়ে কোনো অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একই কথা—সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নাকি তাঁরা দুজন।’

নির্বাচন করার কথা থাকলেও শারীরিক ও অন্যান্য কারণে নির্বাচন থেকে সরে এসেছেন বলে জানান রিয়াজ। এই চিত্রনায়ক বলেন, ‘শারীরিক সমস্যার কারণে নির্বাচনে সময় দেওয়াটা কঠিন হবে আমার জন্য। তা ছাড়া শিল্পী সমিতির পরিবেশ ভয়াবহ রকমের দূষিত হয়ে গেছে। যে অশ্লীলতার কারণে সিনেমা ছেড়ে শিল্পীদের জন্য কাজ করতে সমিতিতে এসেছিলাম, এখানে এসে সেই একই রকম দূষিত পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি।’

সমিতিতে ক্ষমতার অপব্যবহার ও হুট করে নির্বাচনের তারিখ করার কারণে নির্বাচন করা থেকে সরে এসেছেন বলে জানালেন পপি। তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ প্যানেল প্রস্তুত করেই নিজের মতো করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দিয়েছেন। অন্যদের প্যানেল গোছানোর সময়ই দেওয়া হয়নি। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার। ক্ষমতার বড়াই। এসব নোংরামি আমার পছন্দ নয়। তাই আর নির্বাচন করার ইচ্ছা হয়নি। শিল্পী সমিতি ঘিরে একটি অসৎ চক্র তৈরি হয়েছে।’

নির্বাচনে না আসার ব্যাপারে চলতি কমিটির কার্যকরী সদস্য পূর্ণিমা জানান, সময়ের অভাবে নির্বাচন করছেন না তিনি। পূর্ণিমা বলেন, ‘নির্বাচন করলে তো সময় দিতে হয়, শ্রম দিতে হয়, এফডিসিতে গিয়ে শিল্পীদের কাছে ভোট চাইতে হয়। সেই শক্তি বা সময় এই মুহূর্তে আমার নেই।’

নিরব বলেন, ‘সিনেমার কাজে নিজেকে মনোনিবেশ করছি। নির্বাচনের জন্য সময় দিতে হয়। নির্বাচনের পরেও সমিতিতে কাজ করতে হয়। তাই সময় হবে না বিধায় নির্বাচন করছি না। তবে ভবিষ্যতে করব।’

সাইমন সাদিক বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভেবে দেখলাম, আগামী দুই বছর যে কাজগুলো হাতে আছে, তা শেষ করতে হবে। তা না হলে পিছিয়ে যাব। নির্বাচনের বয়স হয়তো সামনে পাব, কিন্তু কাজ চলে গেলে কাজের বয়স আর পাওয়া যাবে না। এ কারণেই নির্বাচন করা হলো না।’