অনলাইনের তারকা: কিম কার্ডাশিয়ান

কিম কার্ডাশিয়ান। ছবি: লেখক
কিম কার্ডাশিয়ান। ছবি: লেখক

পরিসংখ্যান দিয়ে শুরু করি। ইনস্টাগ্রামে ১৪ কোটি ৯০ লাখ অনুসারী, টুইটারে ৬ কোটি ২১ লাখ, নিজের ফেসবুক পেজে লাইকের সংখ্যা ২ কোটি ৯০ লাখ, তিনি জড়িত আছেন ফেসবুকের এমন ভ্যারিফায়েড পেজগুলোতেও লাখ লাখ লাইক। সব মিলিয়ে অনলাইনে ২৫ কোটি মানুষ তাঁকে অনুসরণ করেন। এই হলেন কিম কার্ডাশিয়ান ওয়েস্ট। মার্কিন রিয়েলিটি শো তারকা, উদ্যোক্তা।

কিম কার্ডাশিয়ান যখন একটি অধিবেশনে আসবেন কথা বলার জন্য, তখন সেটা যে কানায় কানায় পূর্ণ থাকবে, সেটা বলা তো বাহুল্যই। তাই দেখা গেল ৮ অক্টোবর আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানে। সেখানে তখন চলছিল তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্ব সম্মেলন ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন ইনফরমেশন টেকনোলজি। প্রযুক্তির আয়োজনে কিম কেন? জবাবটা মিলল অধিবেশনের শিরোনামে, ‘মার্কেটপ্লেস অব আইডিয়াস’। আর কিম কার্ডাশিয়ানকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল উদ্যোক্তা হিসেবে। গত জুন মাস পর্যন্ত কিমের সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৩৭ কোটি ডলার। তবে কার্ডাশিয়ান প্রচলিত কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক নন। অনলাইন, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাঁকে বানিয়েছে তারকা। অনেক প্রসাধনী ব্র্যান্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত, নিজের নামেও আছে পণ্য। এসবই আইডিয়ানির্ভর নতুন যুগের নতুন উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য।

সোশ্যাল মিডিয়া ভালোবাসি
ভালো না বাসার কারণ নেই। সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণেই তারকা কিম কার্ডাশিয়ান। তাই তো যখন ডব্লিউসিআইটির মঞ্চে এসে ‘হাই’ বলে হাত নাড়লেন, শত শত ফ্ল্যাশের ঝলকানি আর হাজার হাজার করতালিতে মুখরিত পুরো মিলনায়তন। ঘিয়ে স্যুট, গলা হারের সঙ্গে বড়সড় এক সোনালি লকেট। চুলগুলো খোলা। সোনালি আভা নিয়ে হাজির হলেন মঞ্চে। বসলেন দুটি সোফার একটিতে। কিমের সঙ্গে কথা বলবেন হাউ স্মার্ট উইমেন উইন দ্য নিউ ইকোনমি বইয়ের লেখক ম্যাগডালেনা ইয়েসিল। 

ম্যাগডালেনা জানতে চান, উদ্যোগের শুরুটা কীভাবে করতে হয়। ‘খুব যে সহজ, তা নয়। আমার কথা বলতে পারি, প্রথমে টেলিভিশন রিয়েলিটি শো দিয়ে শুরু করি। আসলে প্রথমে মিডিয়ায় আসতে হয়। সেটা যে কোনো মাধ্যম হতে পারে। আমি যেমন এলাম টেলিভিশন ওয়ার্ল্ডে। এরপর অনলাইন। মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর সুবিধাগুলো নিতে হয়। আমি সোশ্যাল মিডিয়া ভালোবাসি। অতি ভালোবাসা থেকে কিছু করলে তাতে সফলতা আসেই।’ বলেন কিম কার্ডাশিয়ান ওয়েস্ট। এই ভালোবাসার জায়গাই তাঁর আয় আর তারকাখ্যাতির উৎস।

আড়াই শ ফ্র্যাঞ্চাইজি
একটা লিপস্টিক বা আইশ্যাডোর ছবি তুলে দু–এক লাইন লিখে কিম কার্ডাশিয়ান কোনো পোস্ট দিলেই হয়ে গেল। সে পণ্য বাজারে বিকোবে। অন্যের প্রসাধন পণ্য শুধু নয়, নিজের নামেও আছে ব্র্যান্ড। আড়াই শর মতো ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে কিমের নাম।

তবে প্রযুক্তি উদ্যোগকে সফলতম হিসেবে সবকিছুর ওপরেই রাখলেন। ‘প্রযুক্তির জগৎ সুযোগের বিশাল এক ভান্ডার। আমি তো মনে করি, গেম তৈরি করা ছিল আমার খুব ভালো একটা সিদ্ধান্ত। এই গেম আমাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।’

সঞ্চালক তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, কোনো পণ্য ছাড়ার আগেই বাজার গবেষণা করে নেন তো? কিমের জবাব—সব সময় নয়। আগে বাজার গবেষণা করে সব পণ্যকে সফল করা যায় না। মানুষ কোন জিনিস কেন কিনবে, এটা আগে থেকে বোঝা সহজ নয়। 

সংখ্যা বড় কোনো ব্যাপার নয়
২৫ কোটি অনুসারী। অনলাইনে কিছু একটা দেওয়ামাত্র মিলিয়ন লাইক, লাখো কমেন্ট—তারপরও কিম কার্ডাশিয়ানের কাছে সংখ্যা কোনো ‘ম্যাটার’ না। গুরুত্ব দেন আবেগকে। পরিষ্কারভাবেই বললেন, আবেগ দিয়ে নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করতে হয়। যদি আবেগ না থাকে, তবে যত কোটিই অনুসারী হোক, কাজে আসবে না। 

স্কেম নামে একটা কোম্পানি খুলেছিলেন কিম কার্ডাশিয়ান। অনলাইনে সাজসজ্জা দেখিয়ে দিতেন। স্কেমের কাজ ছিল মেকওভার করার নানা উপায় দেখানো। এখানেও তাঁর শখ, তাঁর আবেগ কাজ করেছে। 

২০০৩ সালের দিকে হলিউড তারকা প্যারিস হিলটনের বন্ধু ও স্টাইলিস্ট হিসেবে এ জগতে আসা কিম কার্ডাশিয়ানের। ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্যারিসের সঙ্গে টিভি রিয়েলিটি শোতে অনেকবার গেছেন তিনি। তখনো সফলতা আসেনি। বোনদের নিয়ে ড্যাশ নামে প্রসাধন পণ্যের দোকানও দেন তিন। কিমের সত্যিকারের সফলতা আসে টেলিভিশন রিয়েলিটি শো দিয়ে। ২০০৮ সাল থেকে এটা ঘটতে থাকে। তারপর অনলাইনই তাঁকে দিয়েছে তারকাখ্যাতি। 

পরিবারের জন্য সময়
আর্মেনিয়ার ফুল তাঁর বিশেষ পছন্দ। এই ফুলের গন্ধ নতুন কোনো পণ্যের ভাবনা ঢুকিয়ে দিয়েছে কিম কার্ডাশিয়ানের মাথায়। তবে সেটা কী, তা বলেন না, হেসে ফেলেন। আর্মেনিয়া ভালোবাসেন—এ কথাও বলেন কিম। ওদিকে দর্শক গ্যালারিতে এক দর্শক বলে ওঠেন, ‘আই লাভ ইউ কিম’। পুরো মিলনায়তনে বয়ে যায় হাসির রোল, তা খেলে যায় কিম কার্ডাশিয়ানের চোখেমুখেও।

কিম কার্ডাশিয়ানের বাস্তব দুনিয়ায় ব্যস্ততা যেমন, ভার্চ্যুয়াল জগতেও তেমন। আবার ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন। ‘আমি যখন কোথাও বেড়িয়ে বাড়ি ফিরি, তখন বাড়ির সামনে সাংবাদিক, ফটোগ্রাফারদের প্রচণ্ড ভিড় থাকে। ওসবের মধ্যেই বাড়িতে ঢুকি। নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিজের মতো রাখার চেষ্টা করি।’ নিজের জন্মদিনও কাটাতে চান পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। ২১ অক্টোবর ৩৯ বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম নেওয়া এই তারকা।

যত কিছুই হোক, পরিবারকে সময় দিতে হয়, দিতে হবে। চার সন্তানের জননী কিম নোয়েল কার্ডাশিয়ান ওয়েস্টের মত এটাই। আরেকটা কথা, ‘প্রাইভেসি রক্ষা করতে হবে প্রত্যেককে।’