দুই দেশের তারকাদের মিলনমেলা

‘ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন আনোয়ারা (ডানে)ও রঞ্জিত মল্লিক (বামে)। ছবি: সংগৃহীত
‘ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন আনোয়ারা (ডানে)ও রঞ্জিত মল্লিক (বামে)। ছবি: সংগৃহীত

কাঁটাতারের বেড়া উপেক্ষা করে দুই দেশের শিল্পীরা একত্র হয়েছিলেন। এক ছাদের নিচে বসে তাঁরা বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে বলে গেছেন নানা স্মৃতিকথা। ভারতের বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পীরা বাংলাদেশ নিয়ে হয়েছেন স্মৃতিকাতর। বাংলাদেশের শিল্পীরা তাঁদের নানা সুন্দর অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। দুই দেশের শিল্পী ও কলাকুশলীদের স্মৃতিচারণা আর বাংলা সিনেমা নিয়ে স্বপ্নের কথা শুনতে শুনতে হয়ে যায় ‘ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’। ২০১৮ সালে ঈদুল ফিতর থেকে ঈদুল আজহা পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি থেকে বিভিন্ন বিভাগে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল আজীবন সম্মাননা। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশ থেকে আনোয়ারা ও ভারত থেকে রঞ্জিত মল্লিকের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। তার আগে গায়ক ও সংগীত পরিচালক বালামের নেতৃত্বে ‘এসো ইতিহাস গড়ি, হাতে হাত ধরি’ গান পরিবেশন করেন পুলক, পারভেজ, জুলি, রেশমি, শামীম, নাওমী ও প্রিয়। আমন্ত্রণপত্রে অনুষ্ঠান শুরুর কথা সন্ধ্যায় থাকলেও বেশ দেরি হয়। তাই চার ঘণ্টার সেই অনুষ্ঠান শেষ হতে মধ্যরাত পেরিয়ে যায়।

বাংলাদেশের তারকা ও ভারতের বাংলা ছবির তারকাদের উপস্থিতিতে জমকালো আয়োজনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডের (বিবিএফএ) আসর। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রি মিলনায়তনের এই আয়োজনে ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া ও বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে টিএম ফিল্মস।

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শুরুর আগে বক্তব্য দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান, ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ফিরদাউসুল হাসান, টিএম ফিল্মসের অন্যতম কর্ণধার ফারজানা মুন্নী ও বিবিএফএর সমন্বয়ক তপন রায়।

দুই দেশের তারকাদের উপস্থিতিতে ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডের আয়োজন চলচ্চিত্রের রথী-মহারথীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

স্বাগত বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা একই ভাষায় কথা বলি। আমাদের একই জলবায়ু। আমরা একই পাখির কলতান শুনি। কিন্তু রাজনৈতিক সীমারেখা আমাদের বিভক্ত করেছে। আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, জলবায়ু একই। কিন্তু আমাদের মধ্যে এ ধরনের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান নিশ্চয়ই আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক দৃঢ় করবে। এ কারণে আজকের আয়োজন। এ ধরনের আয়োজন চলচ্চিত্র নির্মাণের দিক থেকে আমাদের সংস্কৃতিকে আরও বেগবান করবে। চলচ্চিত্র জীবনের কথা বলে, মানুষকে কাঁদায়, হাসায়, চলচ্চিত্র চিন্তার দুয়ার খুলে দেয়। আমার বিশ্বাস, এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পর্ক আরেক নতুন মাত্রা উন্মোচন করবে।’

কলকাতার জনপ্রিয় নির্মাতা গৌতম ঘোষ বলেন, ‘সিনেমার যে সময়, সেটা আশ্চর্য ম্যাজিক। যেটা এক হাজার বছরের গল্প দুই ঘণ্টায় বলা যায় আবার পাঁচ মিনিটের গল্প দুই ঘণ্টায় বলা যায়। সিনেমায় আমরা সময়কে সংকুচিত করতে পারি আবর প্রসারিত করতে পারি। এক আশ্চর্যজনক মাধ্যমে আমরা কাজ করি। সিনেমা কি সত্যি দুই বাংলার মানুষের মধ্যে প্রীতি ও মিলন বয়ে আনতে পেরেছে? সিনেমা আমাদের একত্র করে দেবে, মানুষের মধ্যে আর কোনো বিভেদ থাকবে না। সিনেমা যে কাজটা করতে পারে, সেটা হলো আমাদের স্মৃতিমালাকে একত্র করতে পারে। আর সেই প্রত্যাশাই রইল।’

‘ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানের মঞ্চে বাংলাদেশ ও ভারতের চলচ্চিত্র তারকারা। ছবি: সংগৃহীত
‘ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানের মঞ্চে বাংলাদেশ ও ভারতের চলচ্চিত্র তারকারা। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাত্য বসু বলেন, ‘এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার দারুণ এক সম্পর্ক ফুটে উঠেছে। আমাদের দুই বাংলার ইতিহাস ও সম্প্রীতি এ আয়োজনের মধ্য আরও দৃঢ় হবে। এই ঢাকা শহরে ১৯৬৫ সালে প্রথম চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন হয়েছিল, যেখানে সত্যজিৎ রায় উপস্থিত ছিলেন। এই শহরেই আবার তেমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। এটা বেশ আনন্দের। দুই বাংলার সংস্কৃতিতে একটা সময় অস্থিরতা ছিল। কিন্তু সেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূর হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। সিনেমা তো শিল্প, একে চর্চা করতে হয়। এ ছাড়া একে আর সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো পথ নেই। আগে কিন্তু একটা সময় ছিল, ভালো কাজ হলে দুই বাংলাতেই টের পাওয়া যেত। কিন্তু এখন আর সেটা হয় না। এক ধরনের ভালো কাজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয় দুই দেশের জুরিবোর্ডের সদস্য বাংলাদেশের আলমগীর, কবরী, ইমদাদুল হক মিলন, খোরশেদ আলম ও হাসিবুর রেজা এবং ভারতের গৌতম ঘোষ, ব্রাত্য বসু, গৌতম ভট্টাচার্য, অঞ্জন বোস ও তনুশ্রী চক্রবর্তীকে।

পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন ভারতের গার্গী রায় চৌধুরী ও মীর আফসার আলী এবং বাংলাদেশের শাহরিয়ার নাজিম জয় ও শান্তা জাহান।


‘ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন যারা:
আজীবন সম্মাননা: আনোয়ারা বেগম (বাংলাদেশ), রঞ্জিত মল্লিক (ভারত)
সেরা চলচ্চিত্র: ‘দেবী’ (বাংলাদেশ), ‘নগর কীর্তন’ (ভারত)
জনপ্রিয় চলচ্চিত্র: ‌‘পাসওয়ার্ড’ (বাংলাদেশ), ‘ব্যোমকেশ গোত্র’ (ভারত)
সেরা প্লেব্যাক গায়িকা: কোনাল ও ফাতেমা তুজ জোহরা ঐশী (বাংলাদেশ), নিকিতা নন্দী (ভারত)
সেরা প্লেব্যাক গায়ক: ইমরান (বাংলাদেশ), অনির্বাণ ভট্টাচার্য (ভারত)
জনপ্রিয় নায়িকা: জয়া আহসান (বাংলাদেশ), ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (ভারত)
সেরা অভিনেত্রী: জয়া আহসান (বাংলাদেশ), পাওলি দাম (ভারত)
সেরা অভিনেতা: সিয়াম আহমেদ (বাংলাদেশ), প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি (ভারত)
পপুলার অ্যাক্টর অব দ্য ইয়ার: শাকিব খান (বাংলাদেশ), জিৎ (ভারত)
সেরা পরিচালক: নাসির উদ্দীন ইউসুফ (বাংলাদেশ), সৃজিত মুখার্জি (ভারত)
সেরা স্ক্রিপ্ট রাইটার: ফেরারি ফরহাদ (বাংলাদেশ), পরমব্রত চ্যাটার্জি (ভারত)
সেরা সিনেমাটোগ্রাফার: কামরুল হাসান খসরু (বাংলাদেশ), সৃজিত মুখার্জি (ভারত)
সেরা ভিডিও এডিটর: তৌহিদ হোসেন চৌধুরী (বাংলাদেশ), সংলাপ ভৌমিক (ভারত)
সেরা মিউজিক ডিরেক্টর: হৃদয় খান (বাংলাদেশ), বিক্রম ঘোষ (ভারত)
সেরা পার্শ্ব চরিত্রাভিনেতা: ইমন (বাংলাদেশ), অর্জুন চক্রবর্তী (ভারত)
সেরা পার্শ্ব চরিত্রাভিনেত্রী: জাকিয়া বারী মম (বাংলাদেশ), সুদীপ্তা চক্রবর্তী (ভারত)
বিশেষ জুরি অ্যাওয়ার্ড: তাসকিন রহমান ও বিদ্যা সিনহা মিম (বাংলাদেশ), রুদ্র নীল রায় ঘোষ, আবির চ্যাটার্জি ও নবনী (ভারত)