প্রস্তুতি নিয়েও বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব করতে পারছে না আয়োজকেরা

বাঁশির জাদুকর পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া বেশ কয়েকবার বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন। ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে
বাঁশির জাদুকর পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া বেশ কয়েকবার বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন। ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে

এবারও উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। জুলাই মাসের মধ্যে ভারতের প্রথম সারির উচ্চাঙ্গসংগীতশিল্পী, বাংলাদেশের নবীন ও প্রবীণ শিল্পী এবং অন্যান্য অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা সম্পন্ন করা হয়। আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে পাঁচ দিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের সপ্তম অধিবেশন আয়োজনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছিল। প্রতিবারের মতো এ বছরও গোড়ার দিকে পাঁচ দিনব্যাপী সারা রাতের অনুষ্ঠানের জন্য আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ চেয়ে সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কাছে আবেদন করা হয়। কিন্তু আয়োজকেরা শেষ পর্যন্ত উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব আয়োজনের জন্য ভেন্যু হিসেবে বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামের ছাড়পত্র পায়নি। তাই এ বছরও হচ্ছে না বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব।

২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের একটি মুহূর্ত। ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে
২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের একটি মুহূর্ত। ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে

প্রথম আলোতে পাঠানো এক বিবৃতিতে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, বড় পরিসরের এই উৎসব আয়োজনের জন্য নিরাপত্তা, যাতায়াত সুবিধা এবং দর্শক-শ্রোতা জমায়েতের জন্য উপযুক্ত আর্মি স্টেডিয়ামের ছাড়পত্র না পাওয়ায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২০১৯ সালের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। এরই মধ্যে দুই শতাধিক দেশি-বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলীকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে এমন খবর পেয়ে বহু শিল্পী মর্মাহত হয়েছেন। বিদেশি শিল্পীরা বাংলাদেশের শ্রোতা-দর্শকের সামনে উপস্থিত হতে না পারায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

সংগীতের পাশাপাশি নৃত্যের পরিবেশনাও থাকে উৎসবে। ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে
সংগীতের পাশাপাশি নৃত্যের পরিবেশনাও থাকে উৎসবে। ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে

২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সংগীতের পণ্ডিতদের নিয়ে এই উৎসবের আয়োজন করে আসছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। ২০১৭ সালে আর্মি স্টেডিয়ামের বরাদ্দ না মেলায় উৎসবের আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। পরে ওই বছরের উৎসব হয় ২৬ থেকে ৩০ ডিসেম্বর আবাহনী মাঠে। এবার সেখানে করছেন না কেন, প্রথম আলোর এমন প্রশ্নের জবাবে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজোয়ানুল কামাল বলেন, ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে উন্নয়নকাজ চলায় সেখানেও এ আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। আর গত বছর জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে নিরাপত্তার কারণে উৎসবের আয়োজন হয়নি।

২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের একটি মুহূর্ত। ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে
২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের একটি মুহূর্ত। ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে

বেঙ্গল ফাউন্ডেশন তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘আজ থেকে সাত বছর আগে আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম যে বড় পরিসরের অনুষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে শাস্ত্রীয় সংগীত উপস্থাপন করলে সাধারণ দর্শকের মাঝে তা সাড়া জাগাবে। ভারতবর্ষে উচ্চাঙ্গসংগীতের ভিত প্রতিষ্ঠায় যাঁদের অবদান অন্যতম এবং ষাটের দশকে ও পরবর্তীকালে শাস্ত্রীয় সংগীতের বার্তা যাঁরা সারা বিশ্বে পৌঁছে দিয়েছিলেন, সেই আলাউদ্দিন খাঁ, আলী আকবর খাঁ, উদয়শঙ্কর, রবিশঙ্কর, আয়েত আলী খাঁ, বিলায়েৎ খাঁর পারিবারিক ও জন্মসূত্রে যোগ বাংলাদেশের সঙ্গে। উচ্চাঙ্গসংগীতের বিকাশ, প্রচার ও প্রসারে বাংলাদেশের যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, সেই ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। তাই জাতীয় স্বার্থে এই উৎসবের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাও একান্ত প্রয়োজন। গত ছয়টি অধিবেশনের মধ্য দিয়ে উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব দেশের মানুষের কাছ থেকে যে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার্ঘ্য লাভ করেছে, তা আমাদের প্রয়াসে যুক্ত করেছে নবীন প্রেরণা। উৎসবের ধারাবাহিক সাফল্য, সুশৃঙ্খল আবহ এবং বিশ্বমানের পরিবেশনা দেশে ও বিদেশে দর্শক-শ্রোতার বিপুল সমাদর লাভ করেছে। বাংলাদেশের জন্য এই অর্জন গৌরবের। এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করে বহু খ্যাতনামা বিদেশি শিল্পী মন্তব্য করেছেন, শাস্ত্রীয় সংগীতের এত ভালো শ্রোতা এই উপমহাদেশে আর নেই। প্রতিবছর শ্রোতার সংখ্যা বেড়ে এখন পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবে প্রায় দুই লাখ মানুষ উপস্থিত হন।’

প্রতিবছর শ্রোতার সংখ্যা বেড়ে এখন পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবে প্রায় দুই লাখ মানুষ উপস্থিত হন। ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে
প্রতিবছর শ্রোতার সংখ্যা বেড়ে এখন পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবে প্রায় দুই লাখ মানুষ উপস্থিত হন। ছবি: বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে উচ্চাঙ্গসংগীত চর্চা অনেকটাই বিপন্ন। উচ্চাঙ্গসংগীতের বৈচিত্র্যসন্ধানী নানামুখী পরিবেশনায় ঋদ্ধ হয়েছে এই উৎসব; পরিবেশনার ধরন ও পরিশীলন ধ্রুপদি সংগীত সম্বন্ধে নবীনদের কৌতূহলী করে তুলেছে। মনীষীদের সামনাসামনি দেখার ও সাক্ষাৎ গান শোনার সুযোগ সংগীতজগতে তৈরি করেছে নতুন প্রণোদনা। উৎসবে উপস্থিতির একটি বড় অংশই তরুণ প্রজন্ম।

বিবৃতিতে উদার সংস্কৃতিচর্চায় উৎসাহ দান ও মূল্যবান দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রায় ৭০০ শিল্পী এ উৎসবের মঞ্চে গানে, বাদ্যে ও নৃত্যে তাঁদের কুশলতা পরিবেশন করেছেন বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে।