র‍্যাচেল ভাইস হবেন এলিজাবেথ টেলর

এলিজাবেথ টেলর ও র‍্যাচেল ভাইস। ছবি: রয়টার্স
এলিজাবেথ টেলর ও র‍্যাচেল ভাইস। ছবি: রয়টার্স

যে তারকাদের হাত ধরে হলিউডে স্বর্ণযুগ এসেছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম এলিজাবেথ টেলর। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের তালিকায় হলিউডের নারী কিংবদন্তিদের মধ্যে তাঁর অবস্থান সপ্তম। দুইবার অস্কারজয়ী এই হলিউড অভিনেত্রী আবার ফিরছেন হলিউডের বড় পর্দায়। আর এই বায়োপিকে এলিজাবেথ টেলর জীবিত হবেন র‍্যাচেল ভাইসের শরীরে। ছবির নাম ‘আ স্পেশাল রিলেশনশিপ’।

টেলরের জীবন হার মানায় বড় পর্দাকেও। জন্মেছেন ১৯৩২ সালে ইংল্যান্ডে স্কলায়েসিস নিয়ে। তাঁর শিরদাঁড়ার হাড় সোজা নয়, অনেকটা ইংরেজি বর্ণমালার ‘এস’ আকৃতির মতো। ১৯৪৪ সালে ‘ন্যাশনাল ভেলভেট’ ছবির শুটিংয়ের সময় সেই বাঁকা হাড়ও ভেঙে ফেললেন। স্কিন ক্যানসার, ব্রেন টিউমার, হার্ট ফেইলিউর—সবকিছুর সঙ্গে লড়ে, ক্লান্ত হয়ে ২০১১ সালের ২৩ মার্চ ৭৯ বছর বয়সে চার সন্তান রেখে মারা যান তিনি।

এলিজাবেথ টেলর। ছবি: রয়টার্স
এলিজাবেথ টেলর। ছবি: রয়টার্স

আধুনিক হলিউড তারকাদের অনেক প্রথার সূত্রপাত ঘটেছে এলিজাবেথ টেলরের হাত ধরে। তিনি সর্বকালের সেরা ফ্যাশন আইকনদের একজন। এলিজাবেথ তো ১৯৫০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সাতজনকে আটবার বিয়ে করেছেন। রিচার্ড বার্টনকে ১৯৬৪ সালে বিয়ে করে ১০ বছর পর ১৯৭৪ সালে তাঁরা আলাদা হয়ে যান। কী মনে করে পরের বছরই আবার বিয়ে করেন। বছর না গড়াতেই নিজের ভুল বুঝতে পেরে বিচ্ছেদপত্র পাঠিয়ে দেন। মৃত্যুর সময় তাঁর রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস ছিল ‘সিঙ্গেল’।

‘ক্লিওপেট্রা’ ছবিতে এলিজাবেথ টেলর। ছবি: সংগৃহীত
‘ক্লিওপেট্রা’ ছবিতে এলিজাবেথ টেলর। ছবি: সংগৃহীত

তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ‘ফাদার অব দ্য ব্রাইড’, ‘আ প্লেস ইন দ্য সান’, ‘জায়ান্ট’, ‘সাডেনলি লাস্ট সামার’, ‘বাটারফিল্ড এইট’, ‘দ্য ভিসিপিস’, ‘হুজ অ্যাফ্রেড অব দ্য ভার্জিনিয়া উলফস’ উল্লেখযোগ্য। তবে বড় পর্দায় তিনি অমরত্ব পেয়েছেন ‘ক্লিওপেট্রা’ (১৯৬৩) ছবির জন্য। এই ছবির জন্য তিনি ওই সময় ১০ লাখ মার্কিন ডলার পারিশ্রমিক নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন। ছবি মুক্তির পর সমালোচকেরা বলেছেন, এই অভিনয়ের কোনো আর্থিক বিনিময় হয় না!

এলিজাবেথ টেলরই প্রথম এইডসের জন্য তহবিল খুলেছেন। হিরের অলংকারের প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল তাঁর। ২০০২ সালে নিজের ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করা অলংকারের বিষয়ে বইও প্রকাশ করেন। নাম ‘মাই লাভ অ্যাফেয়ার উইথ জুয়েলারি’। বিশ্বের সবচেয়ে দামি হিরের মধ্যে অনেক ছিল টেলরের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায়। আর মৃত্যুর পর সেই সব হিরের গয়না বিক্রি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ দামে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকায়। আর সব টাকা জমা হয়েছে তাঁর এইডস ফাউন্ডেশনে।

তিনি ইহুদি আর ইসরায়েলিদের জন্য খরচ করেছেন কোটি কোটি টাকা। জাতীয় ইহুদি ফান্ডে তিনি সেই সময় যত বড় অঙ্কের টাকা দান করেছেন, তা রেকর্ড গড়েছিল। এবার এই সব ঘটনা ফ্ল্যাশব্যাকের মতো উঠে আসবে হলিউডের বড় পর্দায়। আর সেখানেই এলিজাবেথ টেলর হয়ে ওঠার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী র‍্যাচেল ভাইস। ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’ ছবির জন্য অস্কার পাওয়া চিত্রনাট্যকার সিমন বুফয় ‘আ স্পেশাল রিলেশনশিপ’ ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন।

র‍্যাচেল ভাইস। ছবি: রয়টার্স
র‍্যাচেল ভাইস। ছবি: রয়টার্স

ভ্যারাইটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বার্ট এবং বার্টি—এই দুই পরিচালকের নতুন ছবি এটি। প্রযোজক ইয়ান ক্যানিং ও এমিলি শারম্যান ভ্যারাইটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই ছবি নিয়ে বলেন, দর্শক বড় পর্দায় হলিউডের আইকন এলিজাবেথ টেলরের ব্যক্তিগত জীবন দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন। হলিউডে তাঁর মতো জনপ্রিয়, বর্ণময়, ঘটনাবহুল তারকা আর নেই। তিনি কেবল দামি হিরের জন্য না, অসহায় ও অসুস্থ মানুষের জন্য তীব্র ভালোবাসা দেখিয়েছেন। এমন জীবন বিশ্বে আর একজনের নেই।