সেলিম আল দীন পদক পেল মহিলা সমিতি

জাতীয় নাট্যশালার চত্বরে সারা দেশ থেকে আসা শত শত কর্মীকে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার অষ্টম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ছবি: প্রথম আলো
জাতীয় নাট্যশালার চত্বরে সারা দেশ থেকে আসা শত শত কর্মীকে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার অষ্টম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ছবি: প্রথম আলো

গণমুখী নাট্যচর্চার সুযোগ বাড়ানোর জন্য ১৯৭৩ সালে মহিলা সমিতি একটি স্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে। এটি বাংলাদেশে নগরকেন্দ্রিক নাট্যচর্চায় এটি বিশাল ভূমিকা রাখে। কালে কালে হয়ে উঠেছে বাংলা নগর নাট্যের অনন্য তীর্থ। মূলত একে কেন্দ্র করেই এ দেশের নাট্যা আন্দোলন বিকশিত হয়। এ অবদানকে স্মরণ করে আজ সেলিম আল দীন পদক দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। সেলিম আল দীন-মেহেরুন্নেসা ট্রাস্ট ও ঢাকা থিয়েটার-বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের পক্ষে এ পদক দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ জানালেন, এবারই কোনো নাট্য সংগঠনের পক্ষে এ ধরনের পদক দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে ‘মীর মকসুদ-উস-সালেহীন-বজলুল করিম সম্মাননা’ ও ‘ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলী পদক’ প্রদান করা হয়। ‘মীর মকসুদ-উস-সালেহীন-বজলুল করিম সম্মাননা’ প্রদান করা হয় আহমেদ ইকবাল হায়দারকে। ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলী পদক প্রদান করা হয় নাট্যকর্মী রুমা মোদককে। মহিলা সমিতির পক্ষে সেলিম আল দীন পদক গ্রহণ করেন বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভাপতি সিতারা আহসানুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক তানিয়া বখত।

হাজার বছরের ঐতিহ্যে বাংলার নিজস্ব নাট্যধারাকে বিশ্বে তুলে ধরার প্রত্যয়ে রাজধানীতে শুরু হয়েছে তিন দিনের গ্রাম থিয়েটার সম্মেলন ও সেলিম আল দীন উৎসব। বিশ্ব থিয়েটারের আন্দোলনের ধারায় বাংলার গ্রাম থিয়েটার আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ‘হাতের মুঠোয় হাজার বছর আমরা চলেছি সামনে’ স্লোগান নিয়ে তিন দিনের এ উৎসব চলবে রোববার পর্যন্ত।

মহিলা সমিতির পক্ষে পদক গ্রহণ করেন বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভাপতি সিতারা আহসানুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক তানিয়া বখত। ছবি: প্রথম আলো
মহিলা সমিতির পক্ষে পদক গ্রহণ করেন বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভাপতি সিতারা আহসানুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক তানিয়া বখত। ছবি: প্রথম আলো

শুক্রবার সকালে জাতীয় নাট্যশালার উন্মুক্ত চত্বরে সারা দেশ থেকে আসা শত শত কর্মীকে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার অষ্টম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ সময় শিমূল ইউসুফের নেতৃত্বে জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও গ্রাম থিয়েটারের পতাকা উত্তোলন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ও গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

উদ্বোধনের পরে আলোচনা পর্ব ও সেলিম আল দীন পদক প্রদান করা হয়। আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন গ্রাম থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান, গ্রাম থিয়েটারের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আফসার আহমেদ ও কাজী সাইদ হোসেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের স্বপ্নদ্রষ্টা সেলিম আল দীনকে স্মরণ করেন বক্তারা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘মীর মকসুদ-উস-সালেহীন-বজলুল করিম সম্মাননা’ প্রদান করা হয় আহমেদ ইকবাল হায়দারকে। ছবি: প্রথম আলো
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘মীর মকসুদ-উস-সালেহীন-বজলুল করিম সম্মাননা’ প্রদান করা হয় আহমেদ ইকবাল হায়দারকে। ছবি: প্রথম আলো

কে এম খালিদ বলেন, সংস্কৃতির শক্তি দিয়ে মৌলবাদকে প্রতিহত করা সম্ভব। মৌলবাদকে ঠেকাতে গ্রামে যেতে হবে। গ্রামের মানুষের মধ্যে সংস্কৃতির আলো জ্বালাতে হবে। তিনি বলেন, আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান উপাদান নাটক। আমাদের জীবনের আনন্দ-বেদনা, দ্রোহ-ক্ষোভ-আশা-আকাঙ্ক্ষার সার্থক রূপায়ণের মধ্য দিয়ে নাটক হয়ে উঠেছে সময়, সমাজ ও জীবনের প্রতিবিম্ব। নাটক সমাজবদলের হাতিয়ার। চেতনার বহ্নিশিখা প্রজ্বালনে নাট্যকর্মীরা যুগ যুগ ধরে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনে নাট্যকর্মীরা যে ভূমিকা পালন করেছেন, তা কালের ক্যানভাসে অমলিন থাকবে আজীবন। শুরু থেকেই ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতিচর্চা ও সংরক্ষণে কাজ করে আসছে গ্রাম থিয়েটার। গ্রাম থিয়েটারের কার্যক্রম সত্যিকার অর্থে গ্রামে তথা তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ুক।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘মৌলবাদ ও মানবতাবিরোধী শক্তির অপতৎপরতায় মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হুমকির সম্মুখীন। একই সঙ্গে সামাজিক অনাচার ও দুর্নীতির সংস্কৃতি আমাদের সমাজকে বিপথগামী করছে। একমাত্র মানবিক সংস্কৃতিই পা‌রে আত্মঘাতী মানবজাতি তথা বাংলাদেশকে ভয়াবহ পরিণতি থেকে রক্ষা করতে।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা শেষে নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করে বাংলাদেশ নেভি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলী পদক প্রদান করা হয় নাট্যকর্মী রুমা মোদককে। ছবি: প্রথম আলো
ফওজিয়া ইয়াসমিন শিবলী পদক প্রদান করা হয় নাট্যকর্মী রুমা মোদককে। ছবি: প্রথম আলো

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘শিকড় থেকে দূরে সরে আমরা যখন নিজেদের আধুনিক ভাবতে শুরু করি, তখনই সমস্যা শুরু হয়। বড় হতে হলে শিকড়ের সন্ধান করতেই হবে। এটি ছাড়া কোনো জাতি বড় হতে পারে না। আমাদের শিকড় গ্রাম, গ্রামের সংস্কৃতি। আমরা এগিয়ে যাব, তবে শিকড় ধরে। তাই গ্রামীণ সংস্কৃতির চর্চাকে মূল্যায়ন করতে হবে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রদীপ।

প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ছবি: প্রথম আলো
প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ছবি: প্রথম আলো

সম্মেলনের পাশাপাশি প্রতিদিন সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালায় নাটক মঞ্চস্থ হবে। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় রাজশাহীর পদ্মা-বড়াল থিয়েটারের শিল্পীরা পরিবেশন করেন পালা বহুরূপে আসবো ফিরে।
গাজিবর রহমানের লেখা পালাটি নির্দেশনা দিয়েছেন সাজেদুল করিম। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রয়েছে ফরিদপুরের বাংলা থিয়েটারের ‘নিমজ্জন’। সেলিম আল দীনের লেখা নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন খন্দকার রাকিবুল হক।