কলকাতা উৎসব উদ্বোধন করতে আসেননি অমিতাভ

মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করেন শাহরুখ খান। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন আরও অনেকে। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করেন শাহরুখ খান। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন আরও অনেকে। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

আজ শুক্রবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হলো। আগে থেকে প্রচার করা হয়, উৎসব উদ্বোধন করবেন ভারতের চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। এর আগে টানা পাঁচবার এই উৎসব তিনি উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু আজ তিনি আসতে পারেননি। আসেননি তাঁর স্ত্রী জয়া বচ্চনও। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘গতকাল রাতে অমিতাভ বচ্চন আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাই উৎসবে যোগ দিতে পারেননি। তিনি উৎসবের সাফল্য কামনা করেছেন। তবে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছেন বলিউড তারকা শাহরুখ খান, রাখী গুলজার ও মহেশ ভাট।’

মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধন করেন শাহরুখ খান। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন রাখী গুলজার, মহেশ ভাট, সৌরভ গাঙ্গুলী। আরও ছিলেন রঞ্জিত মল্লিক, মাধবী মুখোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, সন্দীপ রায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, ইন্দ্রানী হালদার, শতাব্দী রায়, দেব, মিমি চক্রবর্তী, নুসরাত জাহান, শুভশ্রী, সোহম চক্রবর্তী, আবির বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

উৎসব উদ্বোধন করে শাহরুখ খান বলেন, ‘কলকাতা আমাকে বারবার টেনে আনছে। টেনে আনছে এই চলচ্চিত্র উৎসবে। আর আসতে পেরে আমি নিজেও আনন্দিত। কলকাতা আমার ভালো লাগার শহর। সাহিত্য থেকে সিনেমা, অনেক কিছু শিখতে পেরেছি এই কলকাতা থেকে। এই শহর আমাকে ভালোবাসায় জড়িয়ে রেখেছে। তাই তো এখনো ডাক পেলেই ছুটে আসি। দিদির (মমতা) অনুরোধ ফেলতে পারি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সৌরভ গাঙ্গুলীর মাধ্যমে আমি প্রথম কলকাতাকে চিনেছি। কলকাতাকে ভালোবাসতে শিখেছি।’

অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপে ব্যস্ত শাহরুখ খান। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপে ব্যস্ত শাহরুখ খান। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

অভিনেত্রী রাখী গুলজার বলেন, ‘আমার ধমনিতে বাংলা। বাংলা আমার প্রাণ। ভালোবাসার জায়গা। আমি এই বাংলার মেয়ে। তাই তো বাংলার ডাকে চলে এসেছি। কী যে আনন্দ হচ্ছে, বলে বোঝাতে পারব না।’ মহেশ ভাট বলেন, ‘গোটা বিশ্বে বিপর্যয় চলছে। আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। এখন আমাদের রামকৃষ্ণ দেব, স্বামী বিবেকানন্দের বাণীর পথে এগোতে হবে।’ সৌরভ গাঙ্গুলী বলেন, ‘এই শহর ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, সত্যজিৎ রায়ের। তাঁরাই কলকাতাকে চিনিয়েছেন বিশ্বের দরবারে।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘কলকাতা ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী। এই শহর বাংলা সিনেমার মাধ্যমে দেশকে চিনিয়েছে। সেই বাংলা সিনেমা এবার শতবর্ষ পূর্ণ করেছে। এই বাংলায় কত নামীদামি তারকার জন্ম হয়েছে। কত নামীদামি তারকা এই বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। আমি তাঁদের কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি।’

শাহরুখ খান বলেন, ‘সৌরভ গাঙ্গুলীর মাধ্যমে আমি প্রথম কলকাতাকে চিনেছি। কলকাতাকে ভালোবাসতে শিখেছি।’ ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
শাহরুখ খান বলেন, ‘সৌরভ গাঙ্গুলীর মাধ্যমে আমি প্রথম কলকাতাকে চিনেছি। কলকাতাকে ভালোবাসতে শিখেছি।’ ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান রাজ চক্রবর্তী। চলচ্চিত্র উৎসবে উদ্বোধনী ছবি হিসেবে প্রদর্শিত হয় সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’।

শাহরুখ খান বলেন, ‘কলকাতা আমাকে বারবার টেনে আনছে। টেনে আনছে এই চলচ্চিত্র উৎসবে।’ ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
শাহরুখ খান বলেন, ‘কলকাতা আমাকে বারবার টেনে আনছে। টেনে আনছে এই চলচ্চিত্র উৎসবে।’ ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এবার এই উৎসবে ভারতের ৬০ জন এবং ২৪টি দেশের ৫৬ জন প্রতিনিধি যোগ দিচ্ছেন। এই প্রতিনিধিদের মধ্যে আছেন অস্কার পাওয়া ‘দ্য টিন ড্রাম’ ছবির পরিচালক ভলকার স্লোনডর্ফ ও হলিউড তারকা অ্যান্ডি ম্যাকডাওয়েল। এ বছর ৭৬টি দেশের ২১৪টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি, ১৫২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ও তথ্যচিত্র দেখানো হবে। উৎসবে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছে ‘আলফা’ ও ‘চন্দ্রাবতী কথা’। ‘আলফা’ পরিচালনা করেছেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ আর ‘চন্দ্রাবতী কথা’ এন রাশেদ চৌধুরী। এবার উৎসবের ফোকাস কান্ট্রি জার্মানি। এসেছে জার্মানির ৪২টি ছবি। উৎসব চলবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সবার মাঝে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শাহরুখ খান। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সবার মাঝে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শাহরুখ খান। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এবার উৎসবে পুরস্কার হিসেবে সেরা বিদেশি ছবির জন্য দেওয়া হবে ৫১ লাখ রুপি আর শ্রেষ্ঠ পরিচালক পাবেন ২১ লাখ রুপি। সঙ্গে থাকবে ‘রয়েল বেঙ্গল গোল্ডেন টাইগার ট্রফি’। সেরা ভারতীয় ছবিকে দেওয়া হবে হীরালাল সেন স্মৃতি পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ নির্দেশক পাবেন ৭ লাখ রুপি ও শ্রেষ্ঠ ছবিকে দেওয়া হবে ৫ লাখ রুপি। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিকে ৫ লাখ রুপি এবং শ্রেষ্ঠ তথ্যচিত্রকে দেওয়া হবে ৩ লাখ রুপির নগদ পুরস্কার। থাকছে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য নেটপ্যাক পুরস্কার, স্মারক ও অর্থ।