সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়া কঠিন নয়

চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সদস্য পদ ছিল না পোড়ামন টু ছবির পরিচালকের। তবু মুক্তি পেয়েছে সিয়াম ও পূজা অভিনীত এ ছবি। ছবি: সংগৃহীত
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সদস্য পদ ছিল না পোড়ামন টু ছবির পরিচালকের। তবু মুক্তি পেয়েছে সিয়াম ও পূজা অভিনীত এ ছবি। ছবি: সংগৃহীত

ছবি বানানোর আগেই পরিচালককে সমিতির সদস্য হতে হয়। এ জন্য খরচ করতে হয় প্রায় ৫৭ হাজার টাকা। ছবির নাম নিবন্ধন করতে লাগে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। প্রযোজক সমিতির সদস্যপদ পেতে লাগে লাখ টাকার বেশি। এ ছাড়া আরও নানা সংগঠনের সদস্যপদ বাবদ খরচ করতে হয় বেশ কিছু টাকা। তারপর ছবি নির্মাণে হাত দিতে পারেন পরিচালকেরা।

শুটিং শেষে সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য জমা দেওয়ার আগে পরিচালক ও প্রযোজককে সংগ্রহ করতে হয় কয়েকটি সংগঠনের অনাপত্তিপত্র। তবে এফডিসি কর্তৃপক্ষ ও সেন্সর বোর্ড সচিব জানালেন, তাঁদের অনাপত্তিপত্র এবং প্রযোজক সমিতির সদস্যপদের কপি ছাড়া আর কিছু লাগে না। সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়া কঠিন নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের চেয়ে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো বেশি সক্রিয় বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র পরিচালকেরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিচালক প্রথম আলোকে জানান, অনেকে ছবি বানাতেই আসতে চান না। কারণ, শুরুতেই অকারণে অনেকগুলো টাকা গুনতে হয়।

অবশ্য পরিচালক সমিতির সদস্যপদ না নিয়ে পোড়ামন টু ও দহন ছবি দুটি মুক্তি দিয়েছেন পরিচালক রায়হান রাফি। এই পরিচালকের আরও সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায়। অন্যদিকে পরিচালক সমিতি থেকে বহিষ্কৃত হয়েও একের পর এক ছবি বানিয়ে চলেছেন পরিচালক অনন্য মামুন। মোস্ট ওয়েলকাম টু, আমি শুধু চেয়েছি তোমায়, ব্ল্যাকমেইল, ভালোবাসার গল্প ও অস্তিত্ব মুক্তির পর নানা অভিযোগ এনে বহিষ্কার করা হয় মামুনকে। এরপরও মুক্তি পেয়েছে তাঁর তুই শুধু আমার, আবার বসন্ত। মুক্তির অপেক্ষায় আছে বন্ধন, মেকআপসহ আরও কয়েকটি ছবি।

এসব নিয়ম প্রসঙ্গে অনন্য মামুন বলেন, ‘স্বাধীন দেশের সৃজনশীল যেকোনো নাগরিক ছবি বানাবেন। সমিতির সদস্যপদ নিয়ে কাজ করতে হবে কেন? আমি সেন্সর সনদের ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়েছিলাম। সমিতি হচ্ছে সবার একটা কথা বলার জায়গা। তারা কখনোই ছবি আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না।’

অনেকেই হয়তো জানেন না, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনেও ছবির নাম নিবন্ধনের ব্যবস্থা আছে। চাইলে কপিরাইট অফিসেও ছবির নাম নিবন্ধন করে রাখতে পারেন। এফডিসির অর্থ ও প্রশাসন বিভাগের পরিচালক নুজহাত ইয়াসমীন বলেন, ‘কেউ যদি এফডিসির সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ছবি নির্মাণ করেন, তাহলে এফডিসি কর্তৃপক্ষ একটা অনাপত্তিপত্র দেবে। কেউ চাইলে এফডিসির সুযোগ-সুবিধা না নিয়েও শুটিং করতে পারেন। সেন্সর বোর্ড শুধু জানতে চায়, এফডিসি কর্তৃপক্ষ ছবির প্রযোজকের কাছে কোনো টাকাপয়সা পায় কি না। একজন প্রযোজকের যথার্থতা যাছাইয়ের জন্য সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য জমা দেওয়ার আগে আমরা শুধু প্রযোজক সমিতির সদস্যপদ চাই।’

একই মত পোষণ করেন প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। তিনি বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সদস্যের সনদ দরকার হয় এই কারণে যে যেহেতু এটা বাণিজ্যিক সংগঠন, এর বাইরে অন্য কোনো সমিতির সদস্যপদ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।’

পরিচালক সমিতিতে নতুন ছবির নাম লেখানোর ব্যাপারে এই প্রযোজক বলেন, ‘এটাও অপরিহার্য নয়। অনেক দিন ধরে হয়ে আসছে, তাই সবাই করে। নাম নিয়ে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য হয়তো এমনটা করা হয়।’

তবে পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বললেন ভিন্ন কথা। তাঁর দাবি, প্রযোজক সমিতির পাশাপাশি পরিচালক সমিতির অনাপত্তিপত্র দরকার।’ আর ছবির নাম নিবন্ধনের ব্যাপারে তিনি বললেন, ‘প্রযোজক ও পরিচালক সমিতি মিলেই এটা করা। আশির দশক থেকে এই পদ্ধতি চলে আসছে।’ তিনি এ–ও বলেন, ‘পরিচালক সমিতির সদস্যপদ না নিলে সেই পরিচালকের তৈরি ছবির প্রযোজক চাইলেও প্রযোজক সমিতিতে তালিকাভুক্ত হতে পারবে না।’

সেন্সর বোর্ডের সচিব মমিনুল হক বলেন, ‘আমাদের এখানে ছবি জমা দেওয়ার সময় আমরা শুধুই এফডিসির অনাপত্তিপত্র চাই।’