লোকসংগীত উৎসবে উজ্জ্বল সব তারকা

শেভেনেবুরেবি
শেভেনেবুরেবি

ঢাকায় আজ শুরু হচ্ছে লোকগানের তিন দিনের উৎসব ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টিভ্যাল-২০১৯’। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা লোকগানের উজ্জ্বল তারকাদের নিয়ে পঞ্চমবারের মতো এ আয়োজন করতে যাচ্ছে সান ফাউন্ডেশন। এ তিন দিন রাজধানীর বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে উৎসব চলবে রাত ১২টা পর্যন্ত। এ বছরের উৎসবে পরিবেশনা নিয়ে আসছে বাংলাদেশের সাতজন শিল্পী ও একটি নাচের দল। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ছয়টি দল ও একক শিল্পীর গান শোনা যাবে উৎসবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক তাঁদের সম্পর্কে।

জর্জিয়ার দল শেভেনেবুরেবি
এ বছর জর্জিয়া থেকে ঢাকার লোকসংগীত উৎসবে যোগ দিচ্ছে গানের দল শেভেনেবুরেবি। নিজেদের দেশে তাদের যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালে। নানা ধরনের লোকযন্ত্র বাজিয়ে ভিন্নধর্মী সংগীতায়োজন করে তারা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গাওয়ার পাশাপাশি জর্জিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকগান সংগ্রহ করে দলটি জর্জিয়ান লোকসংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে অবদান রাখছে। এশিয়া-ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বড় বড় কনসার্টে গান করেছে তারা।

সাত্তুমা
সাত্তুমা

সাত্তুমা আসছে রাশিয়া থেকে
সাত্তুমা রাশিয়ান কারেলিয়া অঞ্চলের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ২০০৩ সালে দলটি গড়া হয়। নিও ফোক ঘরানার গান নিয়ে সাত্তুমা ঘুরে বেড়িয়েছে ইউরোপের নানা প্রান্তে। মঞ্চে নানা ধরনের বাদ্য ও সুরযন্ত্র বাজিয়ে দর্শক-শ্রোতাকে সম্মোহিত করে রাখে দলটি। রাশিয়ার বাইরে অনেক দেশেই রয়েছে তাদের জনপ্রিয়তা।

হাবিব কইটে অ্যান্ড বামাদা
হাবিব কইটে অ্যান্ড বামাদা

মালির হাবিব কইটে অ্যান্ড বামাদা
মালির লোকসংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি বলা হয় হাবিব কইটেকে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তাঁর প্রথম অ্যালবাম মুসো কো বিশ্বব্যাপী সংগীতপ্রেমীদের দৃষ্টি কাড়ে। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি ব্যতিক্রম গিটার বাদন ও গায়কি দিয়ে সংগীতাঙ্গন মাতিয়ে রেখেছেন। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি নিজের ব্যান্ড বামাদাকে নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কনসার্টে গান করেছেন।

হিনা নাসরুল্লাহ
হিনা নাসরুল্লাহ

পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ
হিনা নাসরুল্লাহ তাঁর সুরেলা কণ্ঠের জন্য পরিচিত। কোক স্টুডিওর মাধ্যমে পেয়েছেন ব্যাপক পরিচিতি। মূলত সুফি ঘরানার গান করেন হিনা। শৈশব থেকে পাকিস্তানি টেলিভিশনে হামদ ও নাত পরিবেশনের মাধ্যমে তাঁর সংগীতজীবনের শুরু। উর্দুর পাশাপাশি সিন্ধি ও সারাইকি ভাষায়ও গান করেন তিনি।

জুনুন
জুনুন

জুনুন
এই উপমহাদেশে ‘জুনুন’ একনামে পরিচিত। পাকিস্তানি এই ব্যান্ডটি সুফি ঘরানার গান দিয়ে দুই যুগের বেশি সময় ধরে শ্রোতাদের প্রিয় গানের দল হয়ে আছে। ১৯৯৭ সালে নিজেদের চতুর্থ অ্যালবাম আজাদি দিয়ে সারা উপমহাদেশে ঝড় তোলে তারা। অ্যালবামটির প্রথম গান ‘সাইওনি’ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের শ্রোতাদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়।

দালের মেহেদি
দালের মেহেদি

দালের মেহেদি
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পাঞ্জাবি ভাঙড়া গান দিয়ে ভারতে এক অন্য রকম স্বর হয়ে ওঠেন দালের মেহেদি। ১৯৯৫ সালে তাঁর প্রথম অ্যালবাম বোলো তা রা রা রা... প্রায় ২০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। তিন দশকের ক্যারিয়ারে অসংখ্য হিট গান উপহার দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া বলিউডে  পেয়েছেন দারুণ জনপ্রিয়তা। ‘দ্য কিং অব ভাঙড়া’ বলেও অনেকে সম্বোধন করেন দালের মেহেদিকে।

বাংলাদেশ

মালেক কাওয়াল
মালেক কাওয়াল

মালেক কাওয়াল
চার দশকের বেশি সময় ধরে কাওয়ালি গান গেয়ে আসছেন তিনি। মালেক কাওয়ালের গানে হাতেখড়ি তাঁর গুরু মহীন কাওয়ালের কাছে। পরে ওস্তাদ টুনু কাওয়ালের কাছে তালিম নেন। কাওয়ালি গানের পাশাপাশি তিনি মাইজভান্ডারি গানেও পারদর্শী।

কাজল দেওয়ান
কাজল দেওয়ান

কাজল দেওয়ান
বাউলশিল্পী কাজল দেওয়ানের জন্ম ১৯৬৮ সালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে। বাবা প্রখ্যাত বাউল মাতাল কবি আবদুর রাজ্জাক দেওয়ানের হাত ধরে বাউলগান শুরু করেন। প্রায় ৩০০ অডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। পালাগান ও লোকসংগীতকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছেন কাজল দেওয়ান।

চন্দনা মজুমদার
চন্দনা মজুমদার

চন্দনা মজুমদার
লালনশিল্পী চন্দনা মজুমদারের জন্ম কুষ্টিয়ার গড়াই নদের পার। বাবা নির্মলচন্দ্র মজুমদার লালনগীতির শিল্পী হলেও তিনি চেয়েছিলেন মেয়ে যেন নজরুলের গান করেন। কিন্তু লালনের গানই হয়ে ওঠে চন্দনার পাথেয়। এ ছাড়া তিনি রাধারমণ দত্ত, হাসন রাজা, শাহ আবদুল করিমসহ আরও বিভিন্ন বাউল ও লোককবির গান করেন। ২০০৯ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

ফকির শাহাবুদ্দিন
ফকির শাহাবুদ্দিন

ফকির শাহাবুদ্দিন
বাংলাদেশের লোকসংগীত, বাউল ও সুফিগানের জনপ্রিয় শিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন। শাহ আবদুল করিমের সান্নিধ্য পেয়ে বাউলগানে ঝুঁকে পড়েন তিনি। তিন দশকের বেশি সময় ধরে গান করছেন তিনি। দীর্ঘকাল ধরে বাউলগান নিয়ে গবেষণা করছেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন ৪০ থেকে ৪৫ হাজার বাউলগান।

শাহ আলম সরকার
শাহ আলম সরকার

শাহ আলম সরকার
বাংলা বাউলগানের এক অনন্য শিল্পী, গীতিকার ও সুরকারের নাম শাহ আলম সরকার। পারিবারিকভাবেই তিনি বাউলগানের সঙ্গে যুক্ত। এখনো গান নিয়ে পড়াশোনা করছেন। এ পর্যন্ত ৬৫০টিরও বেশি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। তাঁর লেখা ও সুর করা অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী মমতাজ।

থাকবে সামিনা হোসেন প্রেমার দল ভাবনার পরিবেশনা
থাকবে সামিনা হোসেন প্রেমার দল ভাবনার পরিবেশনা

এ ছাড়া এ উৎসবে গান করবেন শিল্পী শফিকুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান রাব্বি। ২০১৬ সালে সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাউলিয়ানা’ থেকে বের হয়ে আসেন এ দুজন।

লোকসংগীত উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ থাকবে নাচের দল ভাবনার পরিবেশনা। জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার সামিনা হোসেন প্রেমার পরিচালনায় উৎসবের প্রথম দিন নৃত্য পরিবেশন করবে দলটি।