ইউটিউবের জন্যই নাটক

বিউটি ফুল নাটকে মেহ্‌জাবীন চৌধুরী ও আফরান নিশো। নাটকটি ইউটিউবের একটি চ্যানেলের জন্য তৈরি করা হয়েছে।  ছবি: সংগৃহীত
বিউটি ফুল নাটকে মেহ্‌জাবীন চৌধুরী ও আফরান নিশো। নাটকটি ইউটিউবের একটি চ্যানেলের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

সাধারণত টেলিভিশনে প্রচারের জন্যই নাটক তৈরি হতো এত দিন। ইউটিউব আসার পরে সেই নাটকগুলো টেলিভিশনে প্রচারের পর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হতো। এখনো এই ধারা চলছে। তবে বছরখানেক ধরে নতুন আরেক চিত্র দেখা গেছে টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে। এখন ইউটিউবের জন্যই নাটক তৈরি হচ্ছে। সেই নাটকগুলো একবার প্রচারের জন্য বিক্রি করা হচ্ছে টিভি চ্যানেলে। তাতে টেলিভিশন থেকে এককালীন একটা অর্থ পাচ্ছেন প্রযোজক। আবার ইউটিউব থেকেও আসছে অর্থ।

শুধু টেলিভিশনের জন্য নাটক তৈরিতে যেখানে খরচ হয় ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা, সেখানে ইউটিউবের জন্য নির্মিত বেশির ভাগ নাটকের বাজেট টিভি নাটকের চেয়ে অনেক বেশি। চার লাখ থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত ইউটিউবের নাটকের পেছনে খরচ করেন প্রযোজকেরা। কোনো কোনো নাটকের বাজেট বেড়ে আট লাখও হয়। কারণ, এখানে দুভাবে নাটক দিয়ে আয় করার সুযোগ আছে। বছরখানেক ধরে ইউটিউবকেন্দ্রিক এসব বড় বাজেটের বেশির ভাগ নাটকই ইউটিউবে প্রকাশের আগে একটা মূল্য ধরে একবার প্রচারের জন্য টেলিভিশনের কাছে বিক্রি করছেন প্রযোজকেরা। এরপর প্রযোজকেরা তাঁদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করছেন নাটকগুলো। ডজনখানেক ইউটিউব চ্যানেল এই প্রক্রিয়ায় নাটক নির্মাণ করছে। এগুলোর মধ্যে আছে মোশন রক এন্টারটেইনমেন্ট, সিনেমাওয়ালা, ধ্রুব টিভি, সিডি চয়েস ইউটিউব, ওজন এন্টারটেইনমেন্ট, এসএস মাল্টিমিডিয়া, গোল্লাছুট, সিএমভি, ক্লাব ইলেভেন ইত্যাদি।

ইউটিউবের জন্য নাটক নির্মাণ করে টেলিভিশনে একবার প্রচারের জন্য বিক্রি করছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিডি চয়েস। এ পর্যন্ত প্রায় এক শ নাটক নির্মাণ করেছে তারা। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে টেলিভিশনের জন্য তৈরি করে সে নাটক কয়েকবার প্রচারের পর ইউটিউবের জন্য বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলের কাছে বিক্রি করত বা চ্যানেলের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করত। এখন ইউটিউবের জন্য আমরা নাটক বানাচ্ছি, সেই নাটক ইউটিউবে প্রকাশের আগে টেলিভিশনের কাছে একবার প্রচারের উদ্দেশ্যে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করছি। ভালো শিল্পী বা বেশি বাজেটের নাটক কখনো কখনো দুই লাখেও বিক্রি হয় টেলিভিশনের কাছে। এরপর ইউটিউবে প্রকাশ করছি নাটকগুলো।’

এতে বেশ কিছু সুবিধার কথাও জানালেন এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারেরা। তাঁরা জানান, টেলিভিশনের কাছে বিক্রি করার কারণে প্রযোজকের বিনিয়োগের কিছু টাকা আগেই উঠে আসছে। তা ছাড়া টেলিভিশনও প্রচারের জন্য ভালো মানের নাটক কম মূল্যে পাচ্ছে। এতে চ্যানেল ও প্রযোজক দুই পক্ষেরই সুবিধা হচ্ছে। জহিরুল আরও বলেন, ‘আমরা যে মানের নাটক টেলিভিশনে কম মূল্যে দিচ্ছি, ওই নাটক টেলিভিশন যদি নির্মাণ করে, তবে তা দ্বিগুণ খরচে নির্মাণ করতে হবে। সেই টাকা তোলাও কঠিন। কারণ, বর্তমান সময়ে স্পনসররা নাটকে অতটা অর্থ ঢালছেন না। ফলে বড় বাজেটে টেলিভিশনও নাটক তৈরিতে আগ্রহী হচ্ছে না। অন্যদিকে আমরাও নাটকগুলো ইউটিউবে দেওয়ার আগেই বিনিয়োগের কিছু টাকা উঠিয়ে আনতে পারছি।’

একইভাবে নাটক নির্মাণ করছে ইউটিউব চ্যানেল ধ্রুব টিভি। তারাও ইউটিউবের জন্য নাটক নির্মাণ করে টেলিভিশনের কাছে একবার প্রচারের স্বত্ব বিক্রি করে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০টি নাটক নির্মাণ করেছে ধ্রুব টিভি। ইউটিউবের নাটকের বাজেট কেন বেশি, তা নিয়ে ধ্রুব টিভির কর্ণধার ধ্রুব গুহ বলেন, ‘ইউটিউব একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম। সব সময়ই নাটকটি সেখানে থাকছে। এটি নাটকের জন্য আর্কাইভ। সুতরাং যত্ন নিয়েই কাজটি করতে হয়। ভালো বাজেট না হলে ভালো কাজও সম্ভব না।’

এক বছর ধরে ইউটিউব চ্যানেল ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মোশন রক এন্টারটেইনমেন্ট শুধুই ইউটিউবের জন্য নাটক নির্মাণ করছে। এ পর্যন্ত প্রায় ২৫টি নাটক নির্মাণ করেছে তারা। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মাসুদ উল হাসান বলেন, ‘টেলিভিশনগুলো কম মূল্যে এসব বড় বাজেটের ভালো শিল্পীদের নাটক প্রচার করার সুযোগ পাচ্ছে। আগে তো চ্যানেলগুলো বিশেষ দিনের জন্য ভালো শিল্পী ও গুণী নির্মাতাদের নাটক প্রচার করত। এর জন্য বেশি বাজেট লাগত। এখন ইউটিউব চ্যানেলের কারণে সারা বছরই কম খরচে ভালো মানের নাটক প্রচার করার সুযোগ পাচ্ছে টেলিভিশনগুলো। অন্যদিকে যেসব ইউটিউব চ্যানেল এই প্রক্রিয়ায় নাটক নির্মাণ করছে, তাদেরও বিনিয়োগ কিছুটা সুরক্ষিত হচ্ছে।’