আবার হাসপাতালে এ টি এম শামসুজ্জামান

এ টি এম শামসুজ্জামান। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
এ টি এম শামসুজ্জামান। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এ টি এম শামসুজ্জামান। তাঁর আন্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা দেখা গেছে। জরুরি অবস্থায় তাঁকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে গিয়ে দেখা যায় শুয়ে আছেন এই প্রবীণ অভিনেতা। পাশে তাঁর স্ত্রী আর মেয়ে। স্ত্রী রুনা জামান জানান, গত রোববার থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন এ টি এম শামসুজ্জামান। হজমে সমস্যা হচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সোমবার দুপরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আতিউর রহমানের অধীনে তাঁকে ভর্তি করা হয়। এখন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা তাঁর দেহে অস্ত্রোপচার বা অন্য কোনো চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

সোমবার রাতে তাঁর গায়ে জ্বর ছিল। নাকে নল। দেখে বোঝা যাচ্ছে শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। পেট ফুলে গেছে। কপালে হাত দিতেই চোখ খুললেন এ টি এম শামসুজ্জামান। বললেন, ‘আবার অসুস্থ হয়ে পড়লাম। দোয়া করবেন আমার জন্য।’

২০১৭ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় এ টি এম শামসুজ্জামান এবং অভিনেত্রী সালমা বেগম সুজাতার নাম ঘোষণা করেছে সরকার। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমি তো এই পুরস্কারের যোগ্য না। মনের মতো ভালো চরিত্রে অভিনয় করতে পারিনি। ভালো পরিচালকেরা আমাকে ডাকল না। গৌতম ঘোষ এতবার আসল বাংলাদেশে, আমাকে ডাকল না। মৃণাল সেনের ছবিতে কাজ শুরু করেও অভিনয় করতে পারলাম না।’

জানালেন, প্রথম জীবনে তিনি সাহিত্যিক হতে চেয়েছিলেন। ছাত্রজীবনে বিখ্যাত লেখক, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্তের অনুপ্রেরণায় তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আসেন। শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন শওকত আলী, অজিত কুমার গুহর সান্নিধ্য।

হাসপাতালের বিছানায় প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে এ টি এম শামসুজ্জামান। ছবি: মাসুম আলী
হাসপাতালের বিছানায় প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে এ টি এম শামসুজ্জামান। ছবি: মাসুম আলী

এ পর্যন্ত পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক। শতাধিক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার এবং তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান আজও তাঁর শ্রেষ্ঠ অভিনয়টি করতে পারেননি বলে মনে করেন। তিনি এমন অভিনয় করে যেতে চান, যার জন্য বাংলাদেশের দর্শক তাঁকে মনে রাখবে। তাঁর আশা, পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আবার অভিনয় জগতে ফিরবেন। মনের মতো চরিত্রে অভিনয় করবেন।

এ বছরের ২৬ এপ্রিল রাতে বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এ টি এম শামসুজ্জামান। সেদিনও খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। সে রাতে তাঁকে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ টি এম শামসুজ্জামানের অন্ত্রে প্যাঁচ লেগেছিল। সেখান থেকে আন্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা। এর ফলে খাবার, তরল, পাকস্থলীর অ্যাসিড বা গ্যাস বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং অন্ত্রের ওপর চাপ বেড়ে যায়। ফলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। তাঁর দেহে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর কিছু শারীরিক জটিলতা হয়। টানা ৫০ দিন এই হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ১৫ জুন তাঁকে শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়। কিছুদিন সেখানে ছিলেন। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাঁকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।